প্রাথমিক শিক্ষকদের টিকা ৭ দিনের মধ্যে : পর্যায়ক্রমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পরামর্শ

যে কোনো সময় স্কুল খুলে দেয়া হতে পারে : প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ; হাত ধোয়া, দূরত্ব বজায় রাখা নিশ্চিত করতে হবে -ড. মোশতাক
স্টাফ রিপোর্টার: শিশুদের মধ্যে করোনার সংক্রমণ রোধে পর্যায়ক্রমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। একইদিনে সব ক্লাসের পরিবর্তে রোটেশনভিত্তিক ক্লাস নেয়ার কথা বলেন তারা। কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর জোর দেন। স্কুলে সবার নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়ে তারা বেশি গুরুত্বারোপ করেন। এদিকে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হার নিম্নমুখী। দেশব্যাপী টিকাদান কর্মসূচি চলছে। এ পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন বলেছেন, সারা দেশে করোনাভাইরাসের টিকাদান শুরু হওয়ায় যে কোনো সময় স্কুলগুলো খুলে দেয়া হতে পারে। সেজন্য শিক্ষক-কর্মকর্তাদের টিকা নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এদিন সচিবালয় ক্লিনিকে টিকা নেয়ার পর তিনি এ কথা বলেন। জাকির হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার প্রতি যথেষ্ট আন্তরিক। তিনি আমাকে ফোন করে বলেছেন, তোমার সব শিক্ষককে টিকা দিয়ে দাও। আমরা যে কোনো সময় স্কুল খুলে দেব। যাতে আমার কোনো শিক্ষক টিকার আওতার বাইরে না থাকে। শিক্ষক-কর্মকর্তাদের কবে থেকে টিকা দেয়া হবে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, শিক্ষকদের জন্য ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন। আজ থেকে সাত দিনের মধ্যে টিকা নেয়া শেষ করব।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এখনো স্কুল খোলার উপযুক্ত সময় আসেনি। যদি খুলতেই হয়, তাহলে সর্বোচ্চসংখ্যক মানুষকে টিকা দিতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। যাতে কোনোভাবেই শিশুদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে না পড়ে তা নিশ্চিত করতে হবে।
এ বিষয়ে রোগতত্ত্ব রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা ড. মোশতাক হোসেন বলেন, দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমতে শুরু করেছে। টিকাদান শুরু হয়েছে। তবে এটা শুরু মাত্র। দেশ করোনাভাইরাসমুক্ত হয়েছে সেটি কিন্তু বলা যাবে না। এখনই স্কুল খুলতে হলে নানা বিষয়ে বিস্তারিত পর্যালোচনা করতে হবে।
পাশাপাশি স্কুল খোলার আগে সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে হবে। স্কুলে ঢোকার পর সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, দূরত্ব বজায় রাখার মতো স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে এক্ষেত্রে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। এ ধরনের প্রস্তুতির পরও যদি কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ে তবে দ্রুত তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করাতে হবে।
প্রত্যেক স্কুলের সঙ্গে একটি হাসপাতালের নিবিড় যোগাযোগ রাখতে হবে। যাতে ওই স্কুলের কারও সমস্যা হলে হাসপাতালে সব ধরনের প্রস্তুতি থাকে। এর আগে গত ২২ নভেম্বর ‘কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি’র পক্ষ থেকে জানানো হয়, ছাত্রছাত্রীরা টিকা না পেলে বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ খোলা কঠিন। আঠারো বছরের উর্ধ্বে ছাত্রছাত্রীদের টিকা দেয়ার সম্ভাব্যতা যাচাই করা প্রয়োজন।
কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. শহিদুল্লার নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় এই পরামর্শ দেয়া হয়। স্বাস্থ্য অধিদফতরসূত্রে জানা গেছে, সভার এই সিদ্ধান্ত নিয়ে পরে সম্ভাব্যতা যাচাই সংক্রান্ত কোনো কাজ হয়নি।
তাছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকেও ১৮ বছরের কম বয়সীদের টিকা না দিতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। কারণ এ বিষয়ে এখনো কোনো গবেষণা হয়নি। অর্থাৎ বাংলাদেশে যে শিক্ষার্থীরা স্কুলে পড়ে তাদের সবার বয়সই ১৮ বছরের নিচে। এই সংখ্যা প্রায় দুই কোটি ৮০ লাখ।
এ প্রসঙ্গে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের ভাইরলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, স্কুল খোলার আগে সর্বোচ্চসংখ্যক মানুষকে টিকা দিতে হবে।
কারণ স্কুল খোলার পর সংক্রমণের হার কিছুটা বাড়তে পারে। তাই সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, এমনিতেই প্রায় এক বছর ধরে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। এতে শুধু শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন ব্যাহত হয়েছে, তাদের নানা ধরনের মানসিক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে হবে। কিন্তু সব মানুষের দুই ডোজ করে টিকা দেয়ার পর স্কুল খুলতে গেলে আরও এক বছর সময় লেগে যাবে। কাজেই স্কুল খোলার আগে সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করেত হবে। পাশাপাশি কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। যাতে শিশুদের মধ্যে সংক্রমণ না ঘটে।
স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ-স্বাচিপের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ বলেন, সরকার যেমন দাফতরিক কার্যক্রমে ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ বাধ্যতামূলক করেছে। স্কুল খোলার ক্ষেত্রে এ ধরনের ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় দরিদ্র শিক্ষার্থীরা ঝরে পড়তে শুরু করেছে। অনেক শিক্ষার্থী নানা ধরনের ভার্চুয়াল গেমে আসক্ত হয়ে পড়েছে। আবার অনেকে লেখাপাড়া না থাকায় পাড়া-মহল্লায় কিশোর গ্যাং গড়ে তুলেছে।
তাই সামগ্রিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে স্কুল খুলে দেয়া উচিত বলে মনে করি। তবে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। একসঙ্গে সব স্কুল না খুলে পর্যায়ক্রমে খোলা যেতে পারে। এমনকি একইদিনে সব ক্লাস না চালিয়ে রোটেশনভিত্তিক ক্লাস পরিচালনার পরামর্শ দেন তিনি।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে রোগী শনাক্তের পর গত ১৭ মার্চ থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। কওমি মাদরাসা ছাড়া অন্য সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করা আছে। দফায় দফায় ছুটি বৃদ্ধি করায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এখনো বন্ধ।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More