প্রেমিকার বিয়ের খবরে ৮ দিন আগে কুড়িগ্রাম যান চুয়াডাঙ্গার রাজু

ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর : থানায় অপমৃত্যু মামলা দায়ের

স্টাফ রিপোর্টার: প্রেমের টানে কুড়িগ্রামে গিয়ে লাশ হওয়া চুয়াডাঙ্গার রাজু হোসেন ওরফে অন্তরের মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল রোববার ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় কুড়িগ্রাম সদর থানায় অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। মৃত্যুর কারণসহ পুরো ঘটনা উদঘাটনে জোর তদন্ত অব্যাহত আছে বলে জানান ওসি খান মো. শাহরিয়ার।
জানা গেছে, কুড়িগ্রাম জেলা শহর লাগোয়া ধরলা সেতুর পূর্ব পাড়ের গাইড বাঁধের পাশে পানিতে ভাসমান অবস্থায় ২০ ফেব্রুয়ারি শনিবার সকালে অজ্ঞাত যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মরদেহের সাথে থাকা ব্যাগ থেকে পাওয়া বাসের টিকিটের সূত্র ধরে তথ্যপ্রযুক্তি প্রয়োগ করে ওই যুবকের নাম রাজু হোসেন (২৫) ওরফে অন্তর বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে। নিহত রাজু হোসেন ওরফে অন্তর চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার জুড়ানপুর গ্রামের আশরাফ হোসেনের ছেলে।
পুলিশ জানায়, প্রাথমিকভাবে পরিচয় শনাক্তের পর খবর পেয়ে নিহত রাজু হোসেনের বাবা আশরাফ হোসেন গতকাল রোববার চুয়াডাঙ্গা থেকে কুড়িগ্রামে গিয়ে ছেলের মরদেহ শনাক্ত করেন। এছাড়া তিনি বাদী হয়ে সদর থানায় একটি ইউডি মামলা দায়ের করেছেন। এছাড়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে রাজু হোসেনের মরদেহের ময়নাতদন্ত করার পর তার মরদেহ বাবা আশরাফ হোসেনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর থানার এসআই মো. আব্দুল কাইয়ুম।
এসআই আব্দুল কাইয়ুম জানান, রাজু হোসেনের বাবার নাম আশরাফ হোসেন এবং মাতার নাম মুসলিমা বেগম। তারা চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা থানার জুরানপুর গ্রামের অধিবাসী। তাদের দুই ছেলের মধ্যে রাজু হোসেন এইচএসসি পাস করার পর ঢাকায় অনলাইনে অর্ডার নিয়ে মালামাল সরবরাহের ব্যবসা করতেন।
তিনি আরো জানান, প্রাথমিকভাবে তারা জানতে পেরেছেন বছরখানেক আগে ফেসবুকের মাধ্যমে রাজু হোসেনের সাথে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার বাসিন্দা এক মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিলো। গত ১২ ফেব্রুয়ারি ওই মেয়ের বিয়ের খবর পেয়ে রাজু কুড়িগ্রামে যান। রাজু হোসেনের মৃত্যুর কারণ এবং কিভাবে ধরলা সেতুর পাশে তার মরদেহ আসলো তা এখনও রহস্যে ঘেরা। তবে মরদেহের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর মৃত্যুর কারণ জানা যাবে। কী ঘটনা ঘটেছিলো তা উদঘাটনেও তদন্ত চলছে বলে জানান তিনি।
নিহত রাজুর পূর্ব পরিচিত কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী মোফাজ্জল হোসেন বলেন, প্রায় সময়ই প্রেমিকার সাথে দেখা করতে কর্মস্থল ঢাকা থেকে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে যেতেন তিনি। এভাবে চলার পর জানতে পারলেন প্রেমিকার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। গত ১২ ফেব্রুয়ারি বিয়ে হয় প্রেমিকার। খবর পেয়ে সেদিনই নাগেশ্বরীতে আসেন প্রেমিক রাজু। কিন্তু বিয়ে ঠেকাতে পারেননি, পারেননি প্রেমিকাকেও ফেরাতে। ১৯ ফেব্রুরুয়ারি শুক্রবার রাতে আবারও ঢাকার উদ্দেশে ফেরার কথা ছিলো তার; কিন্তু ফেরা হয়নি। মোফাজ্জল হোসেন আরও বলেন, এর আগেও রাজু কুড়িগ্রাম এসে ফিরে গেছেন। একবার তার পরিবারের লোকজন তাকে ফিরিয়ে নিয়ে যায়।
রাজুর বাবা আশরাফ হোসেন জানান, প্রেম ঘটিত কারণে রাজু এর আগেও কুড়িগ্রাম গিয়েছিল। একবার আমরা তাকে ফিরিয়ে এনেছিলাম। কিন্তু এবার কবে গেছে তা আমরা জানতাম না, আমাদেরকে কিছু বলেওনি। কুড়িগ্রাম থেকে রাজুর এক বন্ধুর ফোন পেয়ে ছেলের মৃত্যুর খবর জানতে পারেন তিনি।
সদর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) আনোয়ারুল ইসলাম জানান, জিন্সের প্যান্ট ও জ্যাকেট পরিহিত মৃত রাজু হোসেনের সাথে থাকা ব্যাগের ভিতরে মি. অন্তর নাম লেখা একটি বাসের টিকিট পাওয়া যায়। গত ১২ ফেব্রুয়ারি ইস্যুকৃত টিকিটটি কুমিল্লা থেকে কুড়িগ্রাম আসা সারদা ট্রাভেলসের। টিকিটে একটি মোবাইল নম্বর ছিল। তারই সূত্র ধরে তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে মৃত যুবকের পরিচয় উদঘাটন করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে সদর থানার অফিসার ইনচার্জ খান মো. শাহরিয়ার জানান, পুরো ঘটনা উদঘাটনে জোর তদন্ত অব্যাহত আছে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More