বত্রিশ বছরে ৫৩ মামলা : শতবার গ্রেফতার মাদক সম্রাজ্ঞী শিপরা

চুয়াডাঙ্গায় স্বামী-সন্তানসহ সবাই মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত

স্টাফ রিপোর্টার: ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা শিপরার অর্ধেক জীবনই পার হয়েছে মাদক ব্যবসা করে। ১৯৯১ সাল থেকে এ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে মাদক হয়েছে ৫৩টি। একবার-দুইবার নয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছেন শতবার। এছাড়া অস্ত্রসহ গ্রেফতারও হয়েছেন তিনি। চুয়াডাঙ্গা জেলা আশপাশ এলাকার বহুল আলোচিত শিপরা বেগমকে সবাই ‘মাদক সম্রাজ্ঞী শিপ্রা’ নামেই চেনেন। জেলার শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে অন্যতম তিনি। পরিবারে শুধু তিনি একা নন, স্বামী-সন্তানসহ সবাই মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন। জেল খাটেন। আবার ছাড়াও পান। কারামুক্ত হয়ে বেরিয়ে এসে আবার শুরু করেন মাদক ব্যবসা। সবশেষ মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে শিপ্রা বেগমকে আবার গ্রেফতার করে জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সদস্যরা। তার কাছে পাওয়া যায় এক হাজার ৩৫টি ইয়াবা। তিনি চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার বুজরুকগড়গড়ি এলাকার বাবুল হোসেনের স্ত্রী।

পুলিশ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) সূত্রে জানা গেছে, ৩২ বছর ধরে মাদক ব্যবসা করছে শিপ্রা। তিনি প্রথমে সীমান্ত এলাকায় বিভিন্ন পণ্য চোরাচালান করতেন। পরে মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। প্রথম ১৯৯১ সালে তার নামে মাদক মামলা হয়। এরপর গত ৩২ বছরে ৫৩টি মামলা হয় তার নামে। গ্রেফতার হয়েছেন শতাধিকবার। বিভিন্ন মেয়াদে সাজাও হয়েছে চার মামলায়। শিপ্রার স্বামী বাবুল হোসেন, ছেলে আলী হোসেন, ভাগ্নে রুনা আলীর নামেও রয়েছে একাধিক মাদক মামলা। শিপ্রার স্বামী বাবুল মারা যান ২০১৫ সালে। তিনি একাধিক মাদক মামলার আসামি ছিলেন। তার ছেলে আলী হোসেন পাঁচ মামলার আসামি। এর একটি মামলায় ৩২ বছরের জেল খাটছেন ২০১৫ সাল থেকে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের পর্যবেক্ষণ, এক সময় গাঁজা ব্যবসা করতেন শিপ্রা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার মাদক ব্যবসার ধরন বদলেছে। এখন তিনি মূলত ইয়াবা বিক্রি করেন। ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে ইয়াবার চালান নিয়ে আসেন জেলায়। ইয়াবার বড় চালান নিয়ে এসে তা ছড়িয়ে দেন জেলার বিভিন্ন প্রান্তে। গোটা জেলার ইয়াবা সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করেন শিপ্রা। পরিচিতি পেয়েছেন ‘ইয়াবা গডমাদার’ নামে। তার নামে যত মামলা, সবই পরিচালনা করেন এ মাদক ব্যবসার অর্থ থেকেই। তাকে বিভিন্ন সময় আটক করা হয়, পাঠানো হয় কারাগারে। জামিন পেয়ে বেরিয়ে এসে আবার শুরু করে ব্যবসা।

বুজরুকগড়গড়ি এলাকার স্থানীয় লোকজন নাম না প্রকাশ করার শর্তে জানান, বিভিন্ন সময় আটক হন শিপ্রা। উদ্ধার করা হয় মাদকদ্রব্য। কিন্তু কয়েক দিন পরই আবার বাড়ি ফিরে শুরু করেন মাদক ব্যবসা। কীভাবে বারবার গ্রেফতার হন, আবার ছাড়াই বা পান কীভাবে, তা বোধগম্য নয়। অন্যরা এভাবে ছাড়া পেয়ে মাদক ব্যবসা করার সাহস পায় না। কিন্তু ওই নারী পুরো এলাকাটি মাদকের হাটে পরিণত করেছেন।

চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি মাহাব্বুর রহমান জানান, শিপ্রার বিরুদ্ধে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়। তার বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। বেশিরভাগ সময়ই তাকে হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু তার ঘরের ভেতরে রয়েছে গোপন দরজা। সেদিক থেকে তিনি কৌশলে পালিয়ে যেতে পারেন। একবার ঘরের ভেতরে ঢুকলে তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না। তিনি অত্যন্ত চতুর। জেলায় এত মামলার আসামি এ একজনই। আর অন্য কারো নামে এত মামলা নেই। শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের শীর্ষে শিপ্রা।

জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শরীয়তউল্লাহ বলেন, শিপ্রা এক সময় গাঁজা বিক্রি করতেন। ধীরে ধীরে তার ব্যবসার পরিধি বাড়ে। হয়ে ওঠেন বড় গাঁজা ব্যবসায়ী। সময়ের সঙ্গে তার ব্যবসার ধরন পাল্টেছে। এখন তিনি ইয়াবার ব্যবসা করেন। ইয়াবার চালান আনেন দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে। তার সিন্ডিকেট এতটাই শক্তিশালী যে জেলার সব প্রান্তে ইয়াবা পৌঁছে দেন শিপ্রা। এতে তার নিয়ন্ত্রণে থাকেন জেলার অন্য ইয়াবা ব্যবসায়ীরা। গ্রেফতরা করা হয় তাকে। ছাড়া পেয়ে ফের শুরু করেন মাদক ব্যবসা। শিপ্রার বিচার কেন হচ্ছে না, কেনই বা তিনি বার বার ছাড়া পাচ্ছেন, এ ব্যাপারে জানতে চুয়াডাঙ্গা জেলা জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট বেলাল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More