বন্ধের অন্ধকার পেরিয়ে চিনি শিল্পে নতুন সূর্যোদয় দর্শনা কেরু মিল পুনরুজ্জীবনে বড় ঘোষণা শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানের
বিশেষ প্রতিনিধি:দেশের চিনি শিল্প নতুন করে ঘুরে দাড়ানোর পথে। দীর্ঘদিন বন্ধ, উপেক্ষিত ও অব্যবস্থাপনায় জর্জরিত চিনি শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করতে সরকার নিলো বড় উদ্যোগ,এমনই বার্তা দিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। শুক্রবার বিকেলে চুয়াডাঙ্গার ঐতিহ্যবাহী দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানিতে ২০২৫-২৬ মৌসুমের ৮৮তম আখ মাড়াই উদ্বোধন করতে এসে তিনি বলেন,ফ্যাসিবাদী সরকারের সময় দেশের বহু কলকারখানার মৃত্যু ঘটানো হয়েছিল। আমরা সেই অচলাবস্থা কাটিয়ে পুনরায় সেগুলো সচল করছি। ইতোমধ্যে কয়েকটি চিনিকল উৎপাদনে ফিরেছে, আরও ফিরবে।
মিল প্রাঙ্গণে উৎসবমুখর পরিবেশে ক্যান কেরিয়ার (ডোঙ্গা)তে আখ নিক্ষেপের মধ্য দিয়ে মৌসুমের আনুষ্ঠানিক সূচনা করা হয়। তার আগে অনুষ্ঠিত হয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রশিদুল হাসান।
বিশেষ অতিথি ছিলেন খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি মো. রেজাউল হক।
এছাড়া উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম, এবং সার্বিক ব্যবস্থাপনায় মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রাব্বিক হাসান।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিল্প উপদেষ্টা জানান, দর্শনা কেরু মিলকে সম্পূর্ণ আধুনিকায়ন করতে বিএমআরআই প্রকল্প শিগগিরই কার্যক্রম শুরু করবে।
তিনি বলেন,আজই বিএমআরআই চালু হবে বলে আশা করেছিলাম। পরে জানলাম কিছু কাজ অসম্পন্ন। তবে কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে খুব শিগগিরই পুরো প্রকল্প চালু হবে। আমরা দ্রুতই এই মাইলস্টোন অর্জন করবো।
আদিলুর রহমান খান বলেন,
চাষি, কৃষক, অস্থায়ী শ্রমিক (কানামনা),সবার সমস্যার সমাধান এবং উৎপাদন বৃদ্ধিতে সরকার ইতোমধ্যে পাচ বছরের বাস্তবসম্মত রোডম্যাপ হাতে নিয়েছে। শুধু মিল চালু নয়, আমরা চাই উৎপাদন বাড়ুক, আধুনিকায়ন হোক এবং শ্রমিক,কৃষক উভয়ের অধিকার সুরক্ষিত থাকুক।
তিনি আরও যোগ করেন,চিনি শিল্পকে লাভজনক, টেকসই ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় সক্ষম করে তোলাই আমাদের লক্ষ্য।
২০২৫-২৬ মৌসুমে ৬৯ কার্যদিবসে ৭৬ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াইয়ের মাধ্যমে ৪ হাজার ২৫৬ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে মিল কর্তৃপক্ষ। চিনি আহরণের হার ধরা হয়েছে ৫.০৬ শতাংশ।
২০২৪-২৫ মৌসুমে ৬৫ কার্যদিবসে মিল ৭১ হাজার ২৩৫ মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ৩,৬৮৫ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদন করেছিল।
যদিও নির্ধারিত লক্ষ্য ছিল ৪,২০০ মেট্রিক টন।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে চিনি উৎপাদনে প্রায় ৬২ কোটি টাকা লোকসান হলেও ডিস্টিলারি বিভাগ একাই ১৯০ কোটি টাকা মুনাফা করে চমকে দেয়।
ফলে মিলের মোট নেট লাভ দাড়ায় ১২৯ কোটি টাকা,যা স্থানীয় অর্থনীতিকে ইতিবাচক বার্তা দিয়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের উপস্থিত কৃষক, আখচাষি ও শ্রমিকদের চোখে ছিল নতুন প্রত্যাশা,দর্শনা কেরু মিল আবারো হবে দেশের সবচেয়ে সফল শিল্প ইউনিটগুলোর একটি।
চিনি শিল্পকে কেন্দ্র করে কর্মসংস্থান, স্থানীয় অর্থনীতি ও কৃষকবান্ধব নীতির যে অঙ্গীকার সরকার দিয়েছে, তা এই অঞ্চলে নতুন আশার বাতাস বইয়ে দিয়েছে।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.