বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত : আহত ৫
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে সামাজিক আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ
কালীগঞ্জ প্রতিনিধি: আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধের জেরে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে বিএনপির দু’পক্ষের সংঘর্ষে মহব্বত আলী নামে একজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ৫জন। নিহত মহব্বত আলী (৫৫) বিএনপি কর্মী ও নাকোবাড়িয়া গ্রামের হবিবার রহমানের ছেলে। সংঘর্ষে আহতদের কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ ভর্তির পর ইউনুচ আলী নামে অপর আরও একজনকে মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকায় রেফার্ড করা হয়েছে। গতকাল রোববার ভোর থেকে দুপুর ১২টা পর্ষন্ত দফায় দফায় উপজেলার জামাল ইউনিয়নের দুটি গ্রামে ওই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে থানার পুলিশ ফোর্স ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে অবস্থান করলেও পরিস্থিতি এখনো শান্ত হয়নি। সংঘর্ষে আহত অন্যান্যরা হলেন-নাকোবাড়িয়া গ্রামের ইউনুস আলী, রেজাউল ইসলাম, তোফাজ্জেল হোসেন, ছোট তালিয়ান গ্রামের রেফাজুল ইসলাম। আহতরা সবাই বিএনপি কর্মী বলে জানা গেছে। স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, এলাকার আধিপত্য বিস্তার নিয়ে উপজেলার নাকোবাড়িয়া ও তালিয়ান গ্রামে বিএনপির দুটি পক্ষের দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ চলে আসছিল। সর্বশেষ একটি পক্ষ গত পরশু শনিবার সকালে দেশিও অস্ত্র নিয়ে তালিয়ান ও নাকোবাড়িয়া এলাকায় মহড়া দেয়। যার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এরই মাঝে ছড়িয়ে পড়াতে এলাকায় উত্তেজনা বাড়তে থাকে। এরই জের ধরে গতকাল রোববার ভোর রাত থেকে বিএনপির একটি পক্ষ অপর পক্ষের ওপর হামলা চালায়। এরপর দু’পক্ষ সংঘর্ষে জড়ালে বেশ কয়েকটি বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। এ সংঘর্ষে আহত ৫ জনের মধ্যে মুমূর্ষু অবস্থায় বিএনপি কর্মী মহব্বত আলীকে ঢাকাতে নেয়ার পথে ফরিদপুর পৌঁছালে তিনি মারা যায়। তার মরদেহ কালীগঞ্জে ফেরত আনা হচ্ছে। এদিকে আহতদের মধ্যে পরে ইউনুচ আলী নামে অপর আরও একজনকে মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকাতে পাঠানো হয়েছে। বাকিরা কালীগঞ্জ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্ষন্ত এলাকায় বিএনপির দু’গ্রুপের মধ্যে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ টিম এলাকায় টহল দিচ্ছে। স্থানীয়দের ভাষ্য, বিএনপি নেতা সাইফুল ইসলাম ফিরোজ ও হামিদুল ইসলাম হামিদ এর সমর্থক নেতা কর্মীরা দু’পক্ষে বিভক্ত হয়ে ওই সংঘর্ষে জড়ায়। কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, আহত পাঁচ রোগী হাসপাতালে এসেছিলেন। সবার শরীরে ধারালো দা ও রড দিয়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের ঢাকা ও যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। জামাল ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি মাহাফুজুর রহমান বলেন, নজরুল ইসলাম মোল্লা দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ৫ আগস্টের পর তিনি বিএনপির একটি পক্ষকে ম্যানেজ করে এলাকায় প্রভাব বাড়াতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। কোলা ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন আল আজাদকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর প্রায় দিনই হামলা চালায়। তিনি আরও বলেন, এ ঘটনার জেরে রোববার সকালে হামলা চালাতে আসে নজরুল মোল্লার সমর্থকরা। এ সময় সাধারণ মানুষ প্রতিরোধ গড়ে তোলে। কোলা ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন আল আজাদকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর প্রায় দিনই হামলা চালায়।’ এ ঘটনায় নজরুল ইসলাম মোল্লার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। কালীগঞ্জ থানার অফিসার্স ইনচার্জ শহিদুল ইসলাম হাওলাদার বলেন, পুলিশ ফোর্স ও সেনাবাহিনীর যৌথ টিম নিয়ে তিনি এখনও ঘটনাস্থলে অবস্থান করছেন। দু’টি পক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত ও কয়েকজন আহত হয়েছে বলেও জানান। সংঘর্ষে আটকের বিষয়ে বলেন, কয়েকজনকে ধরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের হেফাজতে রাখা আছে। তারা এখনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.