বিশাল কর্মযজ্ঞ দেখে চোখ যেনো চড়কগাছি : স্বস্তির শ্বাস ছেড়ে উচ্চারণ-শাবাশ!

দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান মিনিস্টার হাইটেক পার্ক পরিদর্শন করলেন চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব সদস্যরা

স্টাফ রিপোর্টার: দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান মিনিস্টার হাইটেক পার্ক পরিদর্শন করলেন চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব সদস্যরা। ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রধান সড়কের পাশে ৩ শতাধিক বিঘা জমির ওপর স্থাপিত প্রতিষ্ঠানে প্রতি মিনিটে যেমন তৈরি হচ্ছে দুটি করে ফ্রিজ, তেমনই মিনিটের মধ্যেই প্রস্তুত হয়ে যাচ্ছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র এসি। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান চুয়াডাঙ্গার কৃতিসন্তান এফবিসিসিআই’র ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক খান। মিনিস্টার হাইটেক পার্ক পরিদর্শনসহ গত পরশু বুধবার নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে মেতেছিলেন চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব সদস্যরা। এদিন সকালে যশোর বিমানবন্দর হয়ে ইউএস বাংলার ফ্লাইটযোগে ঢাকায় অবতরণের পর দুপুরে হাইটেক পার্কে চুয়াডাঙ্গার কলমযোদ্ধাগণ পৌঁছুলে প্রতিষ্ঠানের তরফে গার্ড অব অনার প্রদানের মধ্য দিয়ে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে বরণ করা হয়। প্রতিষ্ঠানের পুকুরের মাছসহ হরেক পদে সাজানো মধ্যভোজ শেষে হাইটেক পার্ক পরিদর্শনকালে প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার দেশের তরুণ প্রতিষ্ঠিত উদ্যোক্তা আব্দুর রাজ্জাক খান স্বয়ং উপস্থিত থেকে উৎপাদনের ধরণসহ গুণগত মান কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয় তার বর্ণনা দিয়ে বিমহিত করেন। মিনিস্টার রেফ্রিজেটরের সবকিছুই ধাপে ধাপে তৈরি হচ্ছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে গড়ে তোলা এ প্রতিষ্ঠানে। চোখে না দেখলে বোঝানো কঠিন। সাদা ধূষর ছোট্ট ছোট্ট দানা মেশিনে প্রবেশ করে অমনি হয়ে যাচ্ছে ফ্রিজের ভেতর বাইরের দেয়াল উপদেয়ালসহ ড্রয়ার। আর তাতে বৈদ্যুতিক অংশও যুক্ত হয়ে যাচ্ছে যেনো হাতের ইশারায়। এরপর থরে থরে সেজে ফ্রিজগুলো যেনো নিজেরাই নিজেদের গুণগত মান পরীক্ষার জন্য প্রবেশ করছে কম্পিউটারাইজ পরীক্ষাগারে। অবাক কা-। খানেকটা একই ধাচে একের পর এক তৈরি হয়ে পরীক্ষাগারে প্রবেশ করছে এয়ার কন্ডিশনারগুলো। গুণগত মান, ত্রুটি-বিচ্যুতি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই যেখানে প্যাকেটজাত করা হয় সেখানে যাচ্ছে যেনো নিজেই। গোল গোল চলমান পাইপে গড়িয়ে গুড়গুড় করে নির্ধারিত স্থানে গেলে পরিয়ে দেয়া হচ্ছে প্যাকেট নামক জামা। সজ্জিত হয়ে বের হচ্ছে যখন তখন বিক্রির জন্য প্রস্তুত। রাখা হচ্ছে বিশাল ওয়ার হাউজে। সেখান থেকে নিয়ে যানবহনযোগে পৌঁছুনোর পালা শোরুমে। এরপর বিক্রি। প্রতিদিন যখন ৩ হাজারের অধিক তৈরি হচ্ছে নানা মাপের ফ্রিজ তা বিক্রি হচ্ছে কতো? পরিদর্শনরত সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে মৃদু হাসিমাখা মুখে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক খান রাজ বললেন, উৎপাদনের হারেই প্রায় বিক্রি। এসিও তাই। একদিকে হরদম তৈরি, অপর দিকে দেদারছে শো-রুমে নেয়ার তোড়জোড় দেখে প্রতিবেদকের চোখ যেনো চকগাছি। একই শিল্প প্রতিষ্ঠানের আরও একটি কারখানা রয়েছে গাজীপুরে। এখানেও তৈরি হচ্ছে টিভিসহ বৈদ্যুতিন নানাপ্রকারের আসবাব প্রয়োজনীয় উপকরণ। রাইস কুকার, ইস্ত্রী থেকে শুরু করে প্রায় সবকিছু।

মিনিস্টার হাইটেক পার্ক পরিদর্শনের পর চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব সদস্যদের জন্য প্রীতি ফুটবল প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। হাইটেক পার্কের মধ্যেই বিশাল মাঠে ফুটবল প্রতিযোগিতায় মিনিস্টার গ্রুপের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক খান, চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব সভাপতি সরদার আল আমিন, সাধারণ সম্পাদক রাজীব হাসান কচিসহ সকলেই অংশ নিয়ে খেলার সবুজ মাঠ করে তোলেন বর্ণিল। খেলায় আব্দুর রাজ্জাক খান রাজ প্রতিপক্ষের দুটি গোলও দেন। এরপর শুরু হয় হাড়ি ভাঙা খেলা। এ খেলায় সাংবাদিকদের প্রায় সকলে অংশ নেন। বিজয়ী ৪ জনসহ অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে মেডেল পরিয়ে দেয়া হয়। পুরস্কার বিতরণ শেষে সংক্ষিপ্ত আলোচনাসভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে আব্দুর রাজ্জাক খান রাজ বলেন, সাদাকালো টেলিভিশন অ্যাসেম্বলির মাধ্যমে ব্যবসা শুরু করি। এরপর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। এর মূল কারণ মূলত সততা। তথা পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিত করা। এক সময় সবই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হতো। এখন দেশের উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রফতানি হচ্ছে। এটা আমাদের দেশের গৌরব। মিনিস্টার গ্রুপের স্লোগান, আমার পণ্য আমার দেশ, গড়বো বাংলাদেশ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের প্যান্ডেল একবার নয়, দুবার নয় তিন তিনবার ভিজিট করেছেন। তিনি আমাদের এগিয়ে যাওয়ার সাহস যুগিয়েছেন। সারাদেশে মিনিস্টারের পণ্যের কদর দিন দিন বাড়ছে। আমার নিজের জেলা চুয়াডাঙ্গা। এ জেলার সর্বসাধারণের পাশে আমি সবসময় সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছি। আগামীতেও সুখে দুখে থাকার স্বপ্ন দেখি। চুয়াডাঙ্গার কোনো মানুষকে কাছে পেলে শুধু আপনই লাগে না, পাশে নিয়ে দীর্ঘ সময় কাটাতে ইচ্ছে করে। সাংবাদিকদের কাছে পেয়ে আমি আজ আবেগ আপ্লুত।

বক্তব্য দিতে গিয়ে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব সভাপতি সরদার আল আমিন বলেন, মিনিস্টার গ্রুপের আমন্ত্রণে মিনিস্টার হাইটেক পার্কে না এলে দেশে শিল্পের যে এতোটা অগ্রগতি হয়েছে তা কল্পনাও করতে পারতাম না আমরা। এতো বিশাল এলাকা জুড়ে বিশাল কর্মযজ্ঞ দেখে আমরা সত্যিই অভিভূত। অভিন্ন অভিমত ব্যক্ত করে বক্তব্য রাখেন চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রাজীব হাসান কচি। তিনি বলেন, সত্যিই আমরা ভাবতে পারিনি, আমাদের একজন ছেলে এতোবড় প্রতিষ্ঠান গড়েছেন। সব দেখে বলতেই হয়, শাবাশ! এ প্রতিষ্ঠান দেখে বলতে ইচ্ছে করছে ‘আমরাও পারি’।

মিনিস্টার হাইটেক পার্ক পরিদর্শনে যারা ছিলেন তাদের মধ্যে প্রবীণ সাংবাদিক আজাদ মালিতা, শেখ সেলিম, এমএম আলাউদ্দীন, শাহ আলম সনি, অ্যাড. রফিকুল ইসলাম, মিজানুল হক মিজান, মাহফুজ উদ্দীন খান, রফিক রহমান, বিপুল আশরাফ, এমএ মামুন, আব্দুস সালাম, আহাদ আলী মোল্লা, রানা কাদির, ইসলাম রকিব, আতিয়ার রহমান, আব্দুল খালেক, আলগীর কবীর শিপলু, খাইরুজ্জামান সেতু, রেজাউল করিম লিটন, কামরুজ্জামান চাঁদ, উজ্জ্বল মাসুদ, রিফাত রহমান, রুহুল আমিন রতন, সঞ্জিত কর্মকার, মফিজ জোয়ার্দ্দার, হুসাইন মালিক, জহির রায়হান, সোহেল সজিব, পলাশ উদ্দীন, খাইরুল ইসলাম, মাহফুজ মামুন, জামান আক্তার, মশিউর রহমানসহ ক্লাবের সচিব শহিন আলী।

মিনিস্টার হাইটেক পার্ক পরিদর্শন শেষে রাতে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব সদস্যগণ কোচযোগে স্বপ্নের পদ্মাসেতু পরিদর্শনের উদ্দেশে রওনা হন। মাওয়া ঘাটে ইলিশ ভাজি ভাত দিয়ে ডিনার শেষে পদ্মাসেতু হয়ে চুয়াডাঙ্গার উদ্দেশে রওনা হন। ভোরে চুয়াডাঙ্গা প্রত্যাবর্তণের পর পরমতৃপ্তির ঢেকুর তুলে সাংবাদিকগণ বলেন, চুয়াডাঙ্গার একজন ছেলে তাও আবার তরুণ বয়সে কতবড় শিল্প কারখানা গড়ে তুলেছেন তা নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাসই করতাম না। হাইটেক পার্ক দেখে যেমন মন জুড়িয়েছে তেমনই তার পাশে আরও ৬শ বিঘা জমির ওপর ওয়ার্টার পার্ক গড়ে তোলার নকশা দেখে বিমোহিত হয়েছি আমরা সকলে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More