বেড়েই চলেছে আক্রান্তের সংখ্যা : চুয়াডাঙ্গায় চার ও মেহেরপুরে তিনজনের করোনা শনাক্ত

করোনায় মৃত্যুর মিছিলে মেহেরপুরের সাবেক আ.লীগ নেতা আব্দুল মুহিত

স্টাফ রিপোর্টার: করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা আব্দুল মুহিত লাল্টুর মৃত্যু হয়েছে। মেহেরপুর হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে গত চারদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর গতকাল শনিবার ভোরে তার মৃত্যু হয়। এ নিয়ে জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে চারজনের মৃত্যু হলো। এছাড়া, গতকাল চুয়াডাঙ্গায় এক পরিবারের তিনজনসহ চারজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ১৮০ জনে। ইতোমধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৮৯ জন। মারা গেছেন দুজন। গতকাল শনিবার বিকেলে সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। মেহেরপুরে আক্রান্ত হয়েছেন র‌্যাব সদস্যসহ আরও তিনজন। এদিকে, মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক অর্থ সম্পাদক আব্দুল মুহিতের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী, সাবেক এমপিসহ দলীয় নেতাকর্মীরা। গতকাল বিকেলে মেহেরপুর পৌর কবরস্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিশেষ ব্যবস্থায় আব্দুল মুহিতের মরদেহ দাফন করা হয়।
চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জনের কার্যালয়সূত্রে জানা গেছে, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাব থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৪ জনের নমুনার প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। এর মধ্যে চারজনের করোনা পজেটিভ এসেছে। নতুন আক্রান্ত চারজনের মধ্যে রয়েছেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ডিঙ্গেদহ এলাকার একজন এবং দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনার একই পরিবারের তিনজন। তাদেরকে হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন রাখা হয়েছে। জেলায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত সদর উপজেলায়। যেখানে ৬৩ জনের শরীরে ভাইরাসটি শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৪১ জন। প্রাণ গেছে একজনের। আলমডাঙ্গায় আক্রান্ত ৪৫ জনের মধ্যে সুস্থ ২৬ জন, দামুড়হুদায় ৫৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। ইতিমধ্যেই ১৮ জন বেঁচে ফিরেছেন। মৃত্যুবরণ করেছে একজন। জীবননগর উপজেলায় করোনার শিকার ১৩ জনের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন চারজন। গত ১৯ মার্চ চুয়াডাঙ্গায় প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন ইতালি ফেরত আলমডাঙ্গা উপজেলার এক যুবক। চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. এএসএম মারুফ হাসান বলেন, করোনা মোকাবেলায় ঘর থেকে বের না হওয়ায় সব থেকে উত্তম। এরপরও জরুরি প্রয়োজনে বের হলে অবশ্যই হাতে গ্লোভস্ ও মুখে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে এবং সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে।
মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, করোনায় আক্রান্ত হয়ে মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা আব্দুল মুহিত লাল্টুর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শনিবার ভোরে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। চারদিন আগে উপসর্গ নিয়ে তিনি আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তি হন। গত শুক্রবার রাতে আব্দুল মুহিত লাল্টুর নমুনা পরীক্ষায় করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। তিনি মেহেরপুর শহরের নতুনপাড়ার বাসিন্দা। এদিকে, মেহেরপুরে নতুন করে আরও তিনজন করোনাভাইরাস সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছেন র‌্যাব-৬ গাংনী ক্যাম্পের এক সদস্য, ঢাকা ফেরত একজন এবং আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা এক নারী। এ নিয়ে মেহেরপুর জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ৪১ জনে। জেলায় গতকাল শনিবার সন্ধ্যা পূর্ব ২৪ ঘণ্টায় ৩৮টি নমুনা পরীক্ষায় এ তিনজন কোভিড-১৯ পজেটিভ বলে জানান সিভিল সার্জন।
স্বাস্থ্য বিভাগসূত্রে জানা গেছে, মেহেরপুরে নতুন আক্রান্ত তিনজনের মধ্যে গাংনী র‌্যাব ক্যাম্পের ওই সদস্য কয়েকদিন আগে উপসর্গ নিয়ে নমুনা প্রদান করেন। তিনি কোভিড-১৯ পজেটিভ হওয়ায় র‌্যাব ক্যাম্পের সদস্যদের সঙ্গরোধ (কোয়ারিন্টিন) ও র‌্যাব ক্যাম্প লকডাউনের প্রক্রিয়া চলছে। আক্রান্ত র‌্যাব সদস্যকে প্রাথমিকভাবে ক্যাম্পেই রুম আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। এদিকে, আক্রান্ত অপর দুজনের মধ্যে একজন সদর উপজেলার কোলা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ঢাকায় ইপিজেডে চাকরি করেন। কয়েকদিন আগে তিনি বাড়ি ফিরলে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা তাকে সঙ্গরোধ করে। দু’দিন আগে তার শরীরে উপসর্গ দেখা দিলে নমুনা সংগ্রহ করে স্বাস্থ্য বিভাগ। আক্রান্ত অপর একজন নারী। তিনি সম্প্রতি আক্রান্ত এক ব্যক্তির সংম্পর্শে এসেছিলেন। মেহেরপুর সিভিল সার্জন ডা. নাসির উদ্দীন বলেন, জেলায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই ঘর থেকে বের না হওয়া ও কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। বিশেষ করে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা ও মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, আইসোলেশন ইউনিটে মারা যাওয়া বৃদ্ধ আব্দুল মুহিত লাল্টু দীর্ঘদিন ধরে অ্যাজমা, ডায়াবেটিস ও হার্টের সমস্যায় ভুগছিলেন। এ অবস্থায় তিনি অসুস্থ হলে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। করোনাভাইরাস উপসর্গ বিবেচনায় তাকে আইসোলেশন ইউনিটে রেখে নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। শুক্রবার রাতে তিনি করোনাভাইরাস আক্রান্তের রিপোর্ট পাওয়া যায়। সিভিল সার্জন আরও জানান, এই প্রথম করোনা আক্রান্ত হয়ে মেহেরপুরে কেউ মারা গেলেন। এর আগে যে তিনজন মারা গেছেন তারা সকলেই উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। পরে তাদের নমুনা পরীক্ষায় করোনা পজেটিভ ফলাফল আসে। একই সাথে ওই বৃদ্ধের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে কোয়ারেন্টিন পূর্বক নম্নুা পাঠানো হবে। এ পর্যন্ত মেহেরপুর জেলায় ১ হাজার ৫১৩ জনের নমুনা পরীক্ষার ফলাফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে আক্রান্ত ৪১ জন। সুস্থ ১৫ জন। মৃত্যু হয়েছে চারজনের।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া আব্দুল মুহিত লাল্টু (৬৫) মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক অর্থ সম্পাদক। তিনি শহরের নতুনপাড়ার মৃত মোহর আলী মুক্তারের ছেলে। গতকাল শনিবার বিকেলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিশেষ ব্যবস্থায় মেহেরপুর পৌর কবরস্থানে তার দাফন করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গার একটি মাদ্রাসার পাঁচ সদস্যের একটি দল মেহেরপুর হাসপাতাল থেকে মরদেহ গ্রহণ শেষে পৌর কবরস্থানে নেয়। সেখানে ধোয়ানোর কাজ শেষ করা হয়। পরে মেহেরপুর ইসলামী আন্দোলনের নেতা আব্দুল গাফফারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি দল, নিহতের পরিবারের ২-৩ জন সদস্য ও মেহেরপুর ইসলামিক ফাউন্ডেশনের দুজন নামাজে জানাজা শেষে মরহুমের দাফন সম্পন্ন করেন। এদিকে, মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক অর্থ সম্পাদক আব্দুল মুহিত লাল্টুর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে তার আত্মার মাগফেরাত কামনা ও শোকার্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এমপি। শোক প্রকাশ করেছেন মেহেরপুর-১ আসনের সাবেক এমপি প্রফেসর আব্দুল মান্নান, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আব্দুর রাজ্জাকসহ জেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন, কুষ্টিয়ায় গত ২৪ ঘণ্টায় এক র‌্যাব সদস্যসহ নতুন করে আরও ১৯ জন করোনা পজেটিভ রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ৩৪৭ জনে। কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন ডাক্তার এইচএম আনোয়ারুল ইসলাম শনিবার বিকেলে এ তথ্য জানান। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলার ১০৪টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ১৯ জনের পজেটিভ শনাক্ত হয়। নতুন শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় এক র‌্যাব সদস্যসহ, দৌলতপুর উপজেলায় ৪ জন কুমারখালী উপজেলায় একজন, খোকসা উপজেলায় দুজন ও ভেড়ামারা উপজেলায় একজন রয়েছেন।
এ নিয়ে জেলায় মোট ৩৪৭ জন রোগী শনাক্ত হলো। এদের মধ্যে তিনজন মারা গেছেন আর সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৮৬ জন রোগী। পরিস্থিতি সামাল দিতে অধিক আক্রান্ত এলাকা হিসেবে কুষ্টিয়া শহরের ৮টি ওয়ার্ড ও একটি ইউনিয়ন এবং ভেড়ামারা পৌর এলাকার সাতটি ওয়ার্ড ও দুটি ইউনিয়নকে ইতোমধ্যে রেড জোন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। গত ১৮ জুন থেকে এসব এলাকায় লকডাউন কার্যকর করা হয়েছে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More