বড় প্রকল্পে বড় চুরি : প্রকৌশলীদের পোয়াবারো

মেহেরপুর-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়ক বর্ধিতকরণসহ সংস্কার কাজে অনিয়ম

গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুর-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়ক বর্ধিতকরণসহ সংস্কার কাজ চলছে প্রায় দুইমাস ধরে। জেলার সবচেয়ে বড় এই প্রকল্পের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান যাচ্ছেতাইভাবে কাজ সম্পাদন করলেও অজ্ঞাত কারণে সড়কে অনুপস্থিত কর্তাব্যক্তিরা। নিম্নমানের ইট ও বালুর ব্যবহার এবং সড়কের পাশের মাটি কেটে রাস্তা ভরাট করা হচ্ছে। কালভার্ট নির্মাণে দেয়া হচ্ছে ঢাকার লোকাল রড। এত কিছুর পরেও দায়িত্বপ্রাপ্ত কোন প্রকৌশলী থাকেন না কাজের পাশে। ফলে এই বড় প্রকল্পে বড় চুরি আর প্রকৌশলীদের পোয়াবারো বলে মন্তব্য করেছেন এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।

জানা গেছে, মেহেরপুর-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়ক বর্ধিতকরণ ও সংস্কার প্রকল্পের আওতায় গাংনীর তেরাইল ডিগ্রি কলেজ থেকে খলিশাকুন্ডি ব্রিজের পূর্বপাশ পর্যন্ত একটি প্যাকেজ। এ প্যাকেজটি বাস্তবায়ন করছে ঢাকার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এমএম বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ারিং লিং, মেসার্স রিমি নির্মাণ সংস্থা। এ প্যাকেজটির প্রাক্কলিত মূল্য ৯০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা।

জানা গেছে, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বামন্দী বাজারের অদূরে অস্থায়ী কার্যালয় ও ফিল্ড স্থাপন করেছে। সেখানে প্রকাশ্য দিবালোকে নিম্নমানের ইট ভেঙে বানানো হচ্ছে খোয়া। এই খোয়া ও নিম্নমানের বালু দিয়েই সম্প্রসারিত অংশের ডাব্লিউবিএম সম্পন্ন হচ্ছে। সঠিকভাবে কাজ করা হচ্ছে না মর্মে এলাকার লোকজান বারবার অভিযোগ দিলেও তাতে কর্ণপাত করেনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। কাজের পাশে দেখা মিলছে না সড়ক ও জনপথ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের। ফলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ইচ্ছেমাফিক নিম্নমানের কাজ করলেও নালিশ করার জায়গা নেই এলাকার মানুষের। নিয়ামানুযায়ী বাইরে থেকে মাটি এনে রাস্তার দুপাশ ভরাট করার শর্ত থাকলেও তা অগ্রাহ্য। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন রাস্তার পাশে সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানা জমি থেকে মাটি কেটে রাস্তা ভরাট করেছে। এতে জমির মালিকরা ক্ষতিগ্রস্থ হলেও প্রতিকার পাচ্ছেন না। তাছাড়া একটু ভারি বৃষ্টি হলেই রাস্তার পাশে দেয়া ওই মাটি ধ্বসে রাস্তা বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে।

জানা গেছে, সড়কটিতে রয়েছে কয়েকটি কালভার্ট। কালভার্ট নির্মাণে ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের ইট, খোয়া আর ঢাকার  লোকাল রড। স্থানীয়রা এ বিষয়টিতে বাধা দিলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের হুমকিতে মুখ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন তারা। স্থানীয়রা জানান, এ সড়কটি অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ। জেলা থেকে প্রতিদিন কয়েক হাজার মে. টন খাদ্য শস্য রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়। তাছাড়া দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস ও স্থানীয় হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে। সড়কটির গুরুত্ব বিবেচনা করে কর্তৃপক্ষ বড় প্রকল্পের আওতাভুক্ত করেছে। কয়েকশ কোটি টাকার এই প্রকল্পটি সরকারের সুনাম অর্জন হওয়ার কথা। অথচ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে প্রকৌশলীদের আতাতের কারণে তা ভেস্তে যাচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, এ প্যাকেজ আওতাধীন সড়কে কয়েকটি কালভার্ট নির্মাণ হচ্ছে। এতে নিম্নমানের ইট,  বালু আর ঢাকার লোকাল রড ব্যবহার করা হচ্ছে দেদারসে। ফলে নতুন নির্মিত এসব কালভার্ট জীবনঝুঁকির মধ্যে ফেলবে এ সড়কে চলাচলকারীদের। অভিযোগের বিষয়ে মটমুড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সোহেল আহম্মেদ বলেন, আমার পরিষদের সামনে দিয়ে কাজ হচ্ছে। নিম্নমানের ইট, বালু দিয়ে রাস্তা করা হলেও প্রকৌশলীদের কাছে পাইনি। তাছাড়া রাস্তার পাশের মাটি কেটে রাস্তায় দেয়ায় রাস্তা ভেঙে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান স্বেচ্ছাচারিতার ভিত্তিতে শত কোটি টাকার কাজে পুকুর চুরি করছে। জনস্বার্থে সড়কটির কাজ ভালো করা দরকার। এ বিষয়ে জানতে চেয়ে কয়েকদিন আগে কল দেয়া হয় মেহেরপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর সরকারি মোবাইল নম্বর। তিনি কল রিসিভ করে অপর একজন প্রকৌশলীর নম্বরে কল দিতে বলেন। সেই নম্বরে কয়েকদিন যাবত কল দিলেও তা রিসিভ হয়নি। অপরদিকে সাংবাদিকদের অনুসন্ধানের সময় কাজের পাশে পাওয়া যায়নি দায়িত্বপ্রাপ্ত কোন প্রকৌশলীর। যার ফলে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রীর বিষয়ে কোন বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি সড়ক ও জনপথ বিভাগের দায়িত্বশীলদের কাছ থেকে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More