মার্কিন শুল্ক চাপে ভারতের নতুন কৌশল কি কাজ দেবে?

ভারত–মার্কিন বাণিজ্য সম্পর্কে নতুন মোড়। ওয়াশিংটনে চাপা টানাপোড়েনের মাঝেই ভারত এবার নিল লবিং কৌশল।

জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানীতে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাস সম্প্রতি আন্তর্জাতিক লবিং প্রতিষ্ঠান মার্কারি পাবলিক অ্যাফেয়ার্স–এর সঙ্গে তিন মাসের একটি চুক্তি করেছে। আগস্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এই চুক্তি কার্যকর থাকবে। মাসে খরচ ধরা হয়েছে ৭৫ হাজার মার্কিন ডলার।

ভারত সরকারের এই পদক্ষেপের পেছনে প্রধান কারণ ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক নীতি। আগামী ২০২৫ সালের ২৭ অগাস্ট থেকে ভারতের আমদানির ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হবে বলে ঘোষণা এসেছে।

এর পাশাপাশি প্রতিশোধমূলক আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক আগেই আরোপিত হয়েছে। ফলে ভারতের বাণিজ্যিক খরচ বহুগুণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

মার্কিন বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো সম্প্রতি অভিযোগ করেছেন, ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনা কমাচ্ছে না। তার ভাষায়, ‘শুল্ক কার্যকর হবেই, ভারত ব্রাজিলের সঙ্গে সর্বোচ্চ ক্যাটাগরিতে পড়বে।’

মার্কারি পাবলিক অ্যাফেয়ার্সকে বেছে নেওয়ার বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। সংস্থাটির নেতৃত্বে আছেন প্রাক্তন সিনেটর ডেভিড ভিটার। আরও উল্লেখযোগ্য তথ্য হলো—ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী সুসি ওয়াইলস একসময় এই প্রতিষ্ঠানের ওয়াশিংটন ও ফ্লোরিডা কার্যালয়ে কাজ করেছেন।

পরে তিনি সরাসরি ট্রাম্পের নির্বাচনী টিমে যুক্ত হন। ফলে ভারতের এই সিদ্ধান্তকে অনেক বিশেষজ্ঞ ওয়াশিংটনের ভেতরকার প্রভাব বিস্তারের কৌশল হিসেবেই দেখছেন।

তবে ভারত একা নয়। পাকিস্তানও একইভাবে আক্রমণাত্মক লবিং চালাচ্ছে। দেশটি অর্থনৈতিক সংকট সত্ত্বেও মাসে প্রায় ৬ লক্ষ ডলার ব্যয় করছে। ইতিমধ্যেই ছয়টি ভিন্ন ভিন্ন লবিং সংস্থা তাদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে।

ফলও মিলছে—পাকিস্তান তুলনামূলক কম শুল্ক হার (১৯ শতাংশ) ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে এবং সেনাপ্রধান আসিম মুনির হোয়াইট হাউসে বৈঠকের সুযোগ পেয়েছেন।

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের এই লবিং কার্যক্রম ওয়াশিংটনে প্রভাব বিস্তারে সহায়ক হতে পারে। তবে শুল্ক হ্রাসের নিশ্চয়তা নেই। কারণ, মার্কিন প্রশাসনের আপত্তির মূল কেন্দ্রবিন্দু ভারতের জ্বালানি নীতি ও রাশিয়া–সংযোগ। শুধুমাত্র লবিং নয়, প্রয়োজন অর্থনৈতিক কৌশলেও পরিবর্তন আনা।

তবুও এই পদক্ষেপ ভারতের কূটনৈতিক পরিসর বাড়ানোর দিকেই ইঙ্গিত করছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শুল্ক প্রশ্নে তাৎক্ষণিক সাফল্য না মিললেও দীর্ঘমেয়াদে প্রতিরক্ষা, প্রযুক্তি ও বিনিয়োগ খাতে মার্কিন সহযোগিতা ধরে রাখতে ভারতের জন্য এই প্রচেষ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে। ভারত–মার্কিন সম্পর্কের আসন্ন অধ্যায় তাই অনেকটাই নির্ভর করবে লবিংয়ের ফলাফলের উপর।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More