মেহেরপুরে আ.লীগ মনোনীত প্রার্থীসহ ৩৯ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার

আজ প্রতীক বরাদ্দের মধ্যদিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শুরু করবেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা

মেহেরপুর অফিস: মেহেরপুর সদর উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রব মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। চারজন বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। গতকাল বুধবার দুপুরে রিটার্নিং অফিসারের কাছে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের লিখিত আবেদন করেন তিনি। একই দিনে মেহেরপুর পৌরসভার কাউন্সিলর প্রার্থী একজন এবং চারটি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থী আরও ৫ জন এবং ৩৩ জন মেম্বার প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন।

গতকাল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে এসকল প্রার্থীরা তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নির্বাচনী যুদ্ধ থেকে সরে দাঁড়ালেন। আজ শুক্রবার প্রতীক বরাদ্দের মধ্যদিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শুরু হবে।

এদিকে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের বিষয়টি জেলাজুড়ে আলোচনার প্রধান কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। এ নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মাঝে পাল্টাপাল্টি প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত অব্যহত রয়েছে। বহু সাধন করেই দলের মনোনয়ন পাওয়া যায়। সেই মনোনয়ন পেয়েও কেন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন আব্দুর রব বিশ^াস তা নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত অব্যহত রয়েছে।

প্রতাহারের বিষয়ে জানতে চেয়ে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রব বিশ্বাস বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন এজন্য কৃতজ্ঞ। তবে দলের আরও পাঁচজন বিদ্রোহী প্রার্থী আমার প্রতিদ্বন্দ্বী। দলের নেতাদের কাছে বিষয়টি জানিয়ে প্রতিকার চেয়েছিলাম। কিন্তু বিদ্রোহী প্রার্থীদের কেউ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি। দলের বিরুদ্ধে যদি এতো প্রার্থী হয় তাহলে নির্বাচন করা ঠিক হবে না। তাই আমি নির্বাচন থেকে সরে এসেছি।

মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার আবেদন প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে শ্যামপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত গাংনী উপজেলা নির্বাচন অফিসার আব্দুল আজিজ বলেন, তিনি স্বশীরে উপস্থিত হয়ে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের লিখিত আবেদন করেন। প্রত্যাহারের আবেদন আমি গ্রহণ করেছি। শ্যামপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আর কোন প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি। ফলে সাত প্রার্থীর মাঝে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে।

জানা গেছে, মেহেরপুর পৌরসভা, আমঝুপি, পিরোজপুর ও নবগঠিত শ্যামপুর এবং বারাদী ইউনিয়নে একই সাথে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তাই পৌরসভা ও ইউনিয়নগুলোর নির্বাচনী তফশিলও একই। গতকাল বৃহস্পতিবার পৌরসভা ও চারটি ইউনিয়নের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ছিলো।

মেহেরপুর পৌরসভায় মেয়র পদে বর্তমান মেয়র মাহফুজুর রহমান রিটন আওয়ামী লীগের প্রার্থী এবং তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক মেয়র মোতাচ্ছিম বিল্লাহ মতু স্বতন্ত্র প্রার্থী। ভোটের মাঠে চূড়ান্ত লড়াইয়ে দু’জনই রয়েছেন। অপরদিকে ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী মিজানুর রহমান জনি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এছাড়া আর কোন প্রার্থী প্রত্যাহার করেননি।

চারটি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থী ৫ জন, সাধারণ ওয়ার্ড সদস্য (মেম্বার) পদে ৩১ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ২ জন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। চেয়ারম্যান পদে প্রার্থিতা প্রত্যাহারকারীরা হলেন শ্যামপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রব বিশ্বাস, বারাদী ইউপিতে মাহফুজুর রহমান, আরিফুল ইসলাম, আরজুল্লাহ রহমান এবং পিরোজপুর ইউপিতে সামসুল আলম।

সাধারণ ওয়ার্ড সদস্য (মেম্বার) পদে প্রার্থিতা প্রত্যাহারকারী: মোট ৩১ জন প্রার্থিতা প্রত্যাহারের মাধ্যমে নির্বাচন মাঠ থেকে সরে গেছেন। এরা হলেন বারাদী ইউপির ৩নং ওয়ার্ডে আলতাব হোসেন, ৪নং ওয়ার্ডের মহররম হোসেন এবং ৫নং ওয়ার্ডে হাসানুজ্জামান। পিরোজপুর ইউপির ১নং ওয়ার্ডে ইমাদুল ইসলাম, ৩নং ওয়ার্ডে জন বিশ্বাস, ৪নং ওয়ার্ডে আরিফুল ইসলাম খান, ৬নং ওয়ার্ডে আরিফুল ইসলাম, ৯নং ওয়ার্ডে রফিকুল ইসলাম এবং আবুল কালাম আজাদ। শ্যামপুর ইউপির ৩নং ওয়ার্ডে ইনছান আলী ও মুক্তারুল ইসলাম, ৫নং ওয়ার্ডে ইদ্রিস আলী, ৭নং ওয়ার্ডে ইকরাম হোসেন, আব্দুল বারী, ৯নং ওয়ার্ডে জাহাঙ্গীর হোসেন, ৭নং ওয়ার্ডে মজিবর রহমান, ৯নং ওয়ার্ডে আলাল হোসেন, শামীম হোসেন এবং সেলিম হোসেন। এছাড়াও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে বারাদী ইউপির সংরক্ষিত ৩নং ওয়ার্ডে লালবানু খাতুন এবং শ্যামপুর ইউপির জেসমিন খাতুন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। আগামী ১৫ জুন মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি, পিরোজপুর ও নবগঠিত বারাদী এবং শ্যামপুর ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। একইদিনে মেহেরপুর পৌরসভার ভোট গ্রহণ। শুক্রবার (২৭ মে) চূড়ান্ত প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দ করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ আবু আনছার। ভোট মানেই উৎসব আর উত্তেজনা। শুক্রবার প্রতীক বরাদ্দের মধ্যদিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শুরু হবে। একই সাথে নির্বাচনী মাঠের মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতাও শুরু হচ্ছে। এ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ছাড়া বিরোধী দলের কোনো প্রার্থী নেই। ফলে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের সাথে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের। এমন মন্তব্য করেছেন এলাকার ভোটাররা।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More