মেহেরপুরে করোনায় সর্বোচ্চ আক্রান্ত ১৫৪ ॥ মৃত্যু ৩

প্রতিদিন যোগ হচ্ছে নতুন নতুন মুখ॥ লম্বা হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল

মেহেরপুর অফিস: মেহেরপুর জেলায় প্রতিদিনই করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার করোনা আক্রান্ত ও করোনা উপসর্গ নিয়ে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে মৃত্যু হয়েছে জেলার মুজিবনগর উপজেলার বল্লভপুর গ্রামের বেলাল হোসেন (৫৫) ও কোমরপুর গ্রামের রমিজউদ্দিন নিজবাড়িতে করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। এ নিয়ে এ পর্যন্ত জেলায় মারা গেছেন ১০৫ জন। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় মেহেরপুরে নতুন করে সর্বোচ্চ আক্রান্ত হয়েছেন ১৫৪ জন। আক্রান্তের হার শতকরা প্রায় ৩৮.৭ ভাগ। বর্তমানে করোনা পজেটিভ হয়ে জেনারেল হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৮৫৫ জন। প্রতিদিন মেহেরপুরে মৃত্যুর মিছিলে যোগ হচ্ছে নতুন নতুন মুখ। করোনা সংক্রমণে লম্বা হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। দিনেদিনে করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এতে মেহেরপুরে সচেতন মানুষের মাঝে বাড়ছে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা। মেহেরপুরের লকডাউন কঠোরভাবে পালনে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। সাথে যোগ হয়েছে র‌্যাব, সেনা সদস্য ও বিজিবি। তবে গতকাল মঙ্গলবার মেহেরপুর শহরে লকডাউন পালিত হয়েছে ঢিলেঢালা। আর গ্রামে লগডাউন পালিত হচ্ছে না বলে অনেকে জানিয়েছেন।
গত ২৪ ঘণ্টায় মেহেরপুর জেলায় নতুন করে আক্রান্ত ১৫৪ জনের মধ্যে মেহেরপুর সদর উপজেলায় ৬৯ জন, গাংনী উপজেলায় ৭২ জন ও মুজিবনগর উপজেলায় ১৩ জন রয়েছেন। এ নিয়ে বর্তমানে জেলায় মোট করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৮৫৫ জন। গতকাল মঙ্গলবার রাতে সিভিল সার্জন ডা. মো. নাসির উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
মেহেরপুর সিভিল সার্জন অফিস থেকে আরো জানা যায়, কুষ্টিয়া ল্যাব থেকে ৩৯৮টি (পিসিআর ল্যাব-১৮০, এন্টিজেন-২১০ ও জিন এক্সপার্ট-৮) নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়া যায়। এর মধ্যে ১৫৪ জন করোনা রোগী চিহ্নিত হয়েছেন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন মোট ৮৫৫ জন করোনা রোগীর মধ্যে সদর উপজেলার বাসিন্দা ২৭৮ জন, গাংনী উপজেলার বাসিন্দা ৪৬৯ জন ও মুজিবনগর উপজেলার বাসিন্দা ১০৮ জন রয়েছেন। এছাড়া রেফার হয়েছেন ১১৯ জন। এদের মধ্যে সদর উপজেলার ৭৬জন, গাংনী উপজেলার ১৮জন ও মুজিবনগর উপজেলার ২৫ জন রয়েছেন। এছাড়া এ পর্যন্ত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন এক হাজার ৭৯৩ জন। যার মধ্যে সদর উপজেলায় ৯৮১ জন, গাংনী উপজেলায় ৫৭৫ জন ও মুজিবনগর উপজেলায় ২৩৭ জন রয়েছেন। এছাড়া এ পর্যন্ত জেলায় মারা গেছেন কমপক্ষে ১০৫ জন। এদিকে করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় দফায় উদ্বেগজনক হারে সংক্রমণ বৃদ্ধিতে মেহেরপুর জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত রেখেছে।
এদিকে মেহেরপুর জেলায় উপজেলা পর্যায়ে করোনা ভাইরাস (টিকা) প্রয়োগ শুরু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে সদর, গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলায় টিকা প্রয়োগ শুরু হয়। প্রথম দিনে টিকাদান কেন্দ্রগুলোতে রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত মানুষের ব্যাপক উপস্থিতি ছিল। আগ্রহের সাথে টিকা গ্রহণ করেন ৩৫ বা তদুর্ধ্ব বয়সের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ। চীনের তৈরি সিনোভ্যাক্স টিকা দেয়া হচ্ছে মেহেরপুরের তিন উপজেলায়। মেহেরপুর সিভিল সার্জন ডা. নাসির উদ্দীন জানান, এ পর্যন্ত মেহেরপুর জেলায় ৩৮ হাজারের উপরে রেজিস্ট্রেশন হয়েছে। এদের মধ্যে ২১ হাজার মানুষকে টিকার প্রথম ডোজ দেয়া হয়েছে। রেজিস্ট্রেশন ও টিকা প্রয়োগ কার্যক্রম চলমান থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউনের ১৩তম দিনে মেহেরপুর সদর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে গণসচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হয়েছে। এদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদুল আলম, মেহেরপুর পৌরসভার প্রধান নিবার্হী কর্মকর্তা মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে এ জনসচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হয়। এ সময় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদুল আলম বলেন, ১৪ দিনের লকডাউন চলাকালে সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কাঁচা তরিতরকারিসহ মুদিখানার দোকান খোলা রাখা যাবে। তিনি আরও বলেন, এই কঠোর লকডাউন চলাকালে সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত হোটেলে খাবার বিক্রি করা যাবে, তবে হোটেলে বসে খাবার খাওয়া যাবেনা। অপ্রয়োজনে বাড়ির বাইরে আসলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More