মোদির তিন মন্ত্র কি ট্রাম্পের শুল্কঝড় সামলাতে পারবে?

ভারত–মার্কিন সম্পর্ক নতুন এক ঝড়ের সামনে দাঁড়িয়ে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আকস্মিকভাবে ভারতের রপ্তানি পণ্যের উপর উচ্চ শুল্ক চাপিয়ে দিলেন। ফলে ভারতীয় অর্থনীতির উপর চাপ বেড়েছে।

এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তিনটি প্রধান নীতির কথা সামনে আনলেন—স্বদেশী পণ্যে জোর, জিএসটি সংস্কার, এবং দ্রুত বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদন।

প্রথমত, মোদি দেশবাসীকে আহ্বান জানিয়েছেন “স্বদেশি”কে শক্তিশালী করতে। দেশীয় উৎপাদন ও দেশীয় শিল্পকে বাঁচানোই এখন প্রধান লক্ষ্য।

তার বক্তব্য, “যা বিদেশি, তা নয়, যা দেশি তাই কিনুন।” দ্বিতীয়ত, জনগণের ক্রয়ক্ষমতা ধরে রাখতে সরকার জিএসটি সংস্কারের পথে হাঁটছে। বহু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের কর কমানোর ঘোষণা ইতিমধ্যেই হয়েছে।

তৃতীয়ত, মোদি সরকার একের পর এক আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চুক্তি এগিয়ে নিচ্ছে—ইউরোপীয় ইউনিয়ন, নিউজিল্যান্ড, ওমানসহ একাধিক দেশের সঙ্গে চুক্তি আলোচনায় রয়েছে।

কিন্তু এই পদক্ষেপ যথেষ্ট কি? অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মত বিভক্ত। আমেরিকার নামকরা অর্থনীতিবিদ জেফ্রি স্যাক্স মন্তব্য করেছেন, ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত “নিজের দেশের জন্যই ক্ষতিকর এবং আন্তর্জাতিক আইনের বিরোধী।”

তার মতে, ভারতের প্রতিক্রিয়া যুক্তিপূর্ণ এবং চিন্তাশীল। অপরদিকে, ভারতের প্রাক্তন আরবিআই গভর্নর রঘুরাম রাজন স্পষ্ট বলেছেন—“বন্দুক ঠেকিয়ে আলোচনা চলতে পারে না।” তার আশঙ্কা, ভারত এই চাপ সামলাতে গিয়ে আরও দুর্বল হতে পারে।

কোঠাক অলটারনেটসের বিশ্লেষণ বলছে, ট্রাম্পের শুল্কনীতি ভারতের জিডিপি ০.৩ থেকে ০.৬ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দিতে পারে। অন্যদিকে, এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল মনে করছে ভারতীয় অর্থনীতি যথেষ্ট শক্তিশালী, সাময়িক ধাক্কা আসলেও প্রবৃদ্ধি থামবে না। তবে বিপদে রয়েছেন শ্রমিকেরা। টেক্সটাইল ও রত্নশিল্পে প্রায় তিন লক্ষ শ্রমিকের চাকরি ঝুঁকিতে পড়তে পারে—এমন আশঙ্কার খবর দিয়েছে টাইমস অফ ইন্ডিয়া।

আন্তর্জাতিক কূটনীতিতেও নতুন টানাপোড়েন দেখা দিয়েছে। ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস বলছে, ১৯৯৮ সালের মতোই এখন ভারত–মার্কিন সম্পর্কে গুরুতর ফাটল তৈরি হয়েছে।

যদিও চ্যাথাম হাউসের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, সম্পর্ক ভাঙছে না, বরং ভারত বহুমুখী কূটনীতির পথে হাঁটছে। অর্থাৎ, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও থাকবে, আবার চীন–রাশিয়া–ব্রিক্সের দিকেও নজর রাখবে।

এই মুহূর্তে প্রশ্ন একটাই—মোদির “তিন মন্ত্র” ভারতকে ঝড়ের মধ্য দিয়ে নতুন অর্থনৈতিক শক্তির পথে নিয়ে যাবে, না কি চাকরি হারানো, বিনিয়োগ কমা আর রাজনৈতিক অস্থিরতার দিকেই ঠেলে দেবে?

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More