মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় রেকর্ড : বেড়েছে হিটস্টোকের ঝুঁকি

দেশের পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপপ্রবাহ : হাপিয়ে উঠেছে প্রাণিকূল

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গাসহ দেশের পশ্চিম-উত্তরোঞ্চলের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। চলতি মরসুমের দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা গতকাল রোববার চুয়াডাঙ্গায় ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। গত আট বছরের মধ্যে এ জেলায় এটিই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন জেলার হাটকালুগঞ্জে অবস্থিত প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সামাদুল হক। আজ সোমবার চুয়াডাঙ্গা, যশোর ও রাজশাহী অঞ্চলে আরও বাড়তে পারে।
সামাদুল হক বলেন, ২০১৪ সালের ২১ মে চুয়াডাঙ্গার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিলো ৪৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত আট বছরের মধ্যে আজ (গতকাল) রোববার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে শুক্রবার ৩৫ ডিগ্রি ও শনিবার ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিলো এ জেলায়। সব মিলিয়ে টানা তিন দিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়। প্রচ- রোদের কারণে চুয়াডাঙ্গায় মানুষের চলাফেরা কমে এসেছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ বাইরে বের হচ্ছে না।
দেশের আবহাওয়া দুদিন উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের আভাস না থাকলেও ৫ দিনের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে বৃষ্টি/ বজ্রবৃষ্টির প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে। গত তিন দিন ধরে চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। গতপরশু শনিবার ছিলো ৩৯ দশমিক ৫। পরদিনই তাপমাপা যন্ত্রের পারদ উঠেছে আরও দেড় ডিগ্রি ওপরে। তীব্র খরায় চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুর ও ঝিনাইদহসহ দেশের পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চলের প্রাণিকূল উষ্ঠগত হয়ে উঠেছে। দুপুরে ছিলো যেনো আগুনের হলকা। গরম বাতাস গায়ে লেগে জ¦লেছে। চোখমুখে দফায় দফায় পানি দিয়েও পথচারিদের স্বস্তি মেলেনি। বিকেলে রোদের তীব্রতা হ্রাস পেলেও গরমে হাসফাস করেছে মানুষ। এ অবস্থায় আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ হিমালয়ের পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। সিলেট বিভাগের দু এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়ার সাথে প্রবল বিজলী চমকানোসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। রাজশাহী, পাবনা, যশোর এবং চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। রংপুর, দিনাজপুর, নিলফামারী ও পটুয়াখালী অঞ্চলসহ ঢাকা বিভাগ, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারী ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যচ্ছে। প্রবাহমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। আজ সোমবার বাড়তে পারে আরো তাপ। গতকাল রোববার বেলা ৩টায় চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি ও সর্বনি¤œ শ্রীমঙ্গলে ২২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। ঢাকায় সর্বোচ্চ ৩৬ দশমিক ৪ সর্বনি¤œ ২৬ দশমিক ৭, চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ ৩৩ দশমিক ৪ ও সর্বনি¤œ ২৭ দশমিক ৫, সিলেটে সর্বোচ্চ ৩৩ দশমিক ৫, সর্বনি¤œ ২৩ দশমিক ৮, রাজশাহী ৪০ দশমিক ৩ সর্বনি¤œ ২৫ দশমিক ৯, রংপুরে ৩৬ দশমিক ৪ সর্বনি¤œ ২৪, খুলনায় সর্বোচ্চ ৩৮ দশমিক ৫, সর্বনিম্ন ২৭, যশোরে ৪০ দশমিক ৪ সর্বনি¤œ ২৬ ডিগ্রি সেলসয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সামাদুল হক বলেন, বর্তমানে চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে তীব্র দাবদাহ বয়ে চলেছে। বৃষ্টি না হলে তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে।
এদিকে তীব্র দাবদাহে পবিত্র রমজানে রোজদারসহ সাধারণ মানুষের নাভিশ^াস উঠেছে। খেটে খাওয়া মানুষগুলোকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ঈদের কেনা কাটায় হাট বাজারে রাস্তাখাটে মানুষের ভিড় দিন দিন বেড়েই চলেছে। এ অবস্থায় হিট স্টোকের ঝুঁকি বাড়ছে। ফলে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনের অনুরোধ জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। তারা বলেছেন, রোজদারদের ইফতারির পর প্রচুর পরিমাণের পানি পান করা প্রয়োজন। ইফতার থেকে সেহরী পর্যন্ত অন্তত ১২ গ্লাস পানি পান করতে হবে। ইফতারিতে ভাজাপোড়া পরিহার করে ফল সরবতের দিকে ঝুঁকতে হবে। সেহরীতেও গোস্ত মাংস এড়িয়ে চলতে পারলে ভালো। খুব বেশি প্রয়োজন না হলে তীব্র রোদে বের হওয়া উচিত নয়।
রিকশাচালক শাকের আলী বলেন, অন্যান্য দিন বেলা তিনটা নাগাদ তিন থেকে চারশ টাকা উপার্জন হলেও আজ (গতকাল) বিকেল পর্যন্ত মাত্র ১২০ টাকা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘গরমের ঠেলায় জীবনটা কাহিল অবস্থা। রোদের তেজ দেকে মানুষ ঘর থেকে বেরই হচ্চে না। লোকজন ঘর থেকে বের না হলো আমরা পাচেঞ্জার পাবো কি করে। আর আয়-ইনকামই বা কামন করে হবে।’ বড় বাজারের পোশাক বিক্রেতা লিটু বিশ্বাস বলেন, ‘প্রতিবছর রোজার শেষ সপ্তায় খদ্দের ঠেলে নড়ানো যায় না। আজকে সকাল থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত কিছু খদ্দের এলো। তারপর থেকে বাজার প্রায় ফাঁকা। খদ্দের আসবে কি না বুঝা যাচ্ছে না।’
গরমের তীব্রতার কারণে বাজারে তরমুজ, ডাব ও আখের রসের চাহিদা বেড়ে গেছে। প্রশাসনের অভিযানের পর বেশ কিছুদিন তরমুজ পিস হিসেবে বিক্রি হলেও রোববার বড়বাজার, কোর্টমোড় ও রেলবাজার সবখানেই কেজি হিসেবে বিক্রি করতে দেখা যায়। প্রতি কেজি তরমুজের দাম ছিলো ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। আজাদুল ইসলাম নামের একজন ক্রেতা বলেন, কয়েক দিন আগে যে তরমুজ ২৪০ টাকায় কিনেছি। আজকে তা ওজন করে কিনতে হলো ৪০০ টাকায়।’
কেদারগঞ্জ নতুন বাজারে ডাব বিক্রেতা আরিফুল ইসলাম প্রতিটি ডাবের দাম ৭০ থেকে ৮০ টাকা চাওয়ায় আক্বাছ আলী নামের এক ক্রেতার সঙ্গে প্রায় হাতাহাতি অবস্থা। আক্বাছের অভিযোগ দুই দিন আগেও যে ডাব ৫০ টাকায় কিনেছেন, তাপ বেড়ে যাওয়ায় একই আকারের ডাবের দাম হাঁকানো হচ্ছে ৭০ টাকা। আর ক্রেতা আরিফুলের দাবি, আগে পাইকারি প্রতিটি ডাব ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় কিনলেও গত কয়েক দিন গরমের কারণে তা ৫৫ থেকে ৬৫ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে।
শহরের সিঅ্যান্ডবি এলাকায় আখের রস কিনতে রোজাদারদের ভিড় দেখা যায়। কিন্তু দাম শুনে কেউ কেউ রস না কিনেও ফিরে যান। হযরত আলী নামের একজন ক্রেতা অভিযোগ করেন, ‘এতো দিন এক গ্ল¬াস আখের রস ১০ টাকা দরে কিনে এলেও আজ এক লাফে তা বাড়িয়ে ২০ টাকা করা হয়েছে। এটা কি মগের মুল্লুক।’ রস বিক্রেতা নূর ইসলাম বলেন, রোজার মাসে এমনিতেই আখের রসের চাহিদা বেড়ে যায়। গত কয়েক দিন ধরে তীব্র গরমের কারণে চাহিদা বেড়েই চলেছে। বেশি দামে আখ কেনার কারণে রসের দামও বাড়ানো হয়েছে।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More