যে বোধ আমার যাপিত জীবনের অনুসঙ্গ

সরদার আল আমিন: ‘মুক্ত আকাশটাকে ৮৮টি নক্ষত্রপুঞ্জে ভাগ করেছেন জ্যোর্তিবিজ্ঞানিরা। আর আইল দিয়ে খ- খ- করেছেন সমাজপতিরা। সমাজের স্বার্থেই হয়তো আকাশে টানতে হয়েছে সীমারেখা। ধরিত্রীর বুকে বসে আকাশসীমা লংঘনের প্রশ্ন ওঠে তখন, যখন ‘আমরা আর তোমরা’ বিভেদ তীব্রতর হয়। সীমারেখা মানেই ভাগাভাগি, বিভক্তি। বিহঙ্গ জানে না, মানেও না। তারপরও নিরাপত্তার স্বার্থে খুঁজে নেয় নিরাপদ স্থান। সমাজের কিছু মানুষ থাকে যাদের বিভক্তির আবাহেও হৃদয়টাকে মুক্ত আকাশের মত নিজেকে বিশাল করে রাখতে হয়। তা না হলে নানা মতবাদে আর আদর্শের সংঘাতে ন্যায় অন্যায়ের পার্থক্য উবে যায়। পদে পদে পড়তে হয় বিশ^াস-অবিশ^াসের দোলাচালে। যাকে আমরা সব দলের উর্ধ্বে, অবিভক্ত বিবেক বলে জানি তাকে কি গ-িবদ্ধ হওয়া মানায়?’ সাবলিল ভাষায় তীব্র আঘাতযুক্ত প্রশ্ন পর্যদস্থ করেছে আমাকে। আমি দৈনিক মাথাভাঙ্গা সম্পাদক চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব সভাপতি সরদার আল আমিন। গতকাল বুধবার সকাল হতে না হতে অসংখ্য ফোন। অভিনন্দনের সংখ্যা বেশি হলেও তার মধ্যে এই একটি প্রশ্ন মনে হলো, নীতি-নৈতিকতাস্খলন থেকে রক্ষা করলো আমাকে। অভিবাদন সকলকে।
একেবারেই ইচ্ছে ছিলো না বললে সত্যের অপোলাপ হবে। দোষে গুণেই মানুষ। সকল মানুষ তার দোষে গুণে নিজে সুন্দর। যদিও সুন্দর দেখার জন্য ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি অপরিহার্য। সকলকে সব জায়গায় মানায় না। তবে যে যেখানেই থাকুক সমাজের জন্য, দেশের জন্য নিজের সবটুকু উজাড় করে দিতে পারে। সেটাই উচিৎ। শ্রমিক যখন নিজের সবটুকু দেয়, শিক্ষক যখন নিজের শ্রেষ্ঠত্ব মেলে ধরেন শিক্ষার্থীর মাঝে, শিক্ষিত যখন কাজে লাগান তার অর্জিত সবটুকু শিক্ষা, তখন ওই ভূবনডাঙ্গা নিজের আলোয় আলোকিত হয়। দৃষ্টান্ত ছড়ায় পৃথিবীর সবখানে। দিগন্তও তোলে তৃপ্তির ঢেকুর। আমি ওই অনন্য সমাজ গড়ার স্বপ্ন দেখি। নিজের অবস্থান থেকে করণীয়টা করার সর্বাত্মক চেষ্টায় ব্রত। যার কলমটাই স্বম্বল তার লেখনি কেড়ে নিলে, কি থাকে? সযত্মে লাগানো গাছে ফুল ফুটলো না বলে উপড়ে ফেলা ফালতু প্রেমিকের মধ্যে ভালবাসা কতটুকু থাকে জানি না, তাতে স্বার্থান্ধতাই যে বেশি, তা সমাজের অধিকাংশেরই অজানা নয়। রাজনীতি যেমন সমাজের জন্য, রাজনীতি না করা রাজনীতিও যদি যথাযথভাবে করা যায় তাও সমাজেরই মঙ্গল বয়ে আনে। বিশেষ করে গ-িবদ্ধ হওয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে তোলা প্রশ্ন তারই প্রমাণ দেয়। তা হলে ইচ্ছে হলো কেনো? চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়ার প্রসঙ্গটাই বা সামনে এলো কেনো? শুধুই কি নিজেকে ওজন করা? না, নিশ্চয় তা নয়। নির্বাচনী তফশিল ঘোষণার কয়েকদিনের মাথায় বেশ কিছু রাজনৈতিক পছন্দের মানুষের সাথে আলাপচারিতা আমাকে আমার আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়। নিজের সাথে নিজের কথোপকথন, একদফা দাবি নিয়ে সহধর্মীনির আন্দোলন। বেশ ভালোই কাটছিলো। দুর্বল ইচ্ছেটা ক্রমশ সবল হতে থাকলো। সহকর্মীসহ বন্ধু-বান্ধব সবধরণের সহযোগিতার হাতও বাড়ালো। শেষ পর্যন্ত গিন্নির দাবি না মানার সিদ্ধান্তে সহযোদ্ধাদের পাশে পেয়ে ‘দেখি না কি হয়’ ভেবে ঝাঁপিয়ে পড়ার পথেই ঝুঁকতে থাকলাম। পত্রিকার পাতায় প্রথম প্রকাশও পেলো। তারপর সেলফোন হয়ে উঠলো ব্যস্ত। বৃষ্টি ভেজা দিনটা গেলো চোখের পলকে। ঘোর কাটলো। এক পর্যায়ে ক্লান্ত হয়েই এই লেখা। যারা ফোন করেছেন তাদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞ।
আমার আকাশ আমি ভাগ করবো না। এটাই শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত। এতে গিন্নির একদফা দাবিও পুরণ হলো, আমাকে যারা দল মত বর্ণের ঊর্ধ্বেই রাখতে চান তাদেরও পূরণ হলো প্রত্যাশা। আমারও থাকা হলো আমারই ভূবনে। সংবাদপত্রের অপর নাম সমাজের দর্পণ। আয়না। যে আয়নার পারদ সযত্মে লেপন নিজের হাতে, সেই লেপনে ঢেউ কিম্বা মরচে পড়লে সমাজের ছবি বাঁকা অথবা ঘোলা হওয়ার ঝুঁকি। তা হতে দেয়া গর্হিত অপরাধেরই সামিল। বিশেষ করে বিবেক তাই বলে। এই বোধ আমার যাপিত জীবনের অনুসঙ্গ। দৈনিক মাথাভাঙ্গা যেভাবে পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করেছে, অর্জিত সম্মান অক্ষুন্ন রাখতে পাঠককূলের সহযোগিতা কাম্য।
প্রসঙ্গতঃ জেলা পরিষদ অতিবগুরুত্বপূর্ণ এবং খুবই মর্যদার স্থান। অনেক কিছু করার সুযোগ রয়েছে ওখানে। ওখানে রাজনৈতিক নেতাদেরই মানায়। আমাদের সমাজ আমরা ওইভাবে গড়ে তুলেছি। তুলতে হয়েছে সমাজেরই স্বার্থে। জেলা পরিষদ নির্বাচনে অর্থে কিম্বা অন্য কোন প্রলোভনে বিভ্রান্ত না হয়ে যোগ্য প্রার্থীকে নির্বাচিত করার অনুরোধ ভোটারদের প্রতি। এটাই আশা করে সমাজ। সকলকে আবারও প্রাণঢালা সালাম ও শুভেচ্ছা। পুনশ্চঃ ক্ষমতার মসনদ আমি চাই না। কলমই আমার হীরম্বয় হাতিয়ার।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More