রোজায় চুয়াডাঙ্গার বাজারেও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি

বেগুন ঝিঙে পটল থেকে শুরু করে ভোজ্যতেল স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে
স্টাফ রিপোর্টার: সিয়াম সাধনার মাস পবিত্র রমজান এলেই দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রীর দাম স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে যায়। এবারও এক লিটার ভোজ্য তেলের দাম বেড়েছে ৫০-৬০ টাকা। আনাজের বাজারে বেগুনের দাম? ঝিঙের সাথে পাল্লা দিয়ে পটলও সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। ক্ষিরা শশা? ইফতারির পাতে দু এক টুকরোও অনেকের জন্য দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। এদিকে, জেলা প্রশাসনের বেধে দেয়া দামের চেয়ে বেশি দামে মাংস বিক্রির অভিযোগ উঠেছে বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে।
পবিত্র রমজানের দ্বিতীয় দিনে চুয়াডাঙ্গার নিচের বাজারে কয়েক দফা ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়েছে। বেশ কয়েকজনকে জরিমানাও করা হয়েছে। এতে আনাজের মূল্য কমেনি। কেনো? জবাব নেই। এক কেজি বেগুন ১শ টাকা, ঝিঙে ১শ টাকা। এককেজি ডাটা নিতে হলে গুনতে হচ্ছে ৮০ টাকা। পটল, ক্ষিরা ভেনডি ৬০ টাকা কেজি। উচ্ছে? তাও নাক উঁচু করা দর। এক কেজি উচ্ছে কিনতে হলে গুনতে হচ্ছে ৯০ টাকা। আলুর দামটা অবশ্য গতবারের তুলনায় এবার কম। ১৬ টাকা কেজি। করোনা ভাইরাস মহামারির মধ্যে লেবুর দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক মাত্রা। লেবু টিপে রস কতটুকু বের হবে কি হবে না তা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও এক হালি কিনতে হলে গুনতে হচ্ছে অর্ধশত টাকা। রোজায় লেবুর শরবত অনেকের কাছেই হয়ে উঠেছে দুঃস্বপ্ন। ছোলার দাম দুদিনে বেড়েছে কেজিতে ১৫ টাকা। যে ছোলা ছিলো ৬৫ টাকা, সেই ছোলা কঠোর লকডাউনে ১৫ টাকা বেড়ে ৮০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। তরমুজ? এখন আর ছোট মোটা দেখে তথা চোখের আন্দাজে বিক্রি হয় না। কিনতে হয় কেজি দরে। কঠোর লকডাউনের আগের দিন যে তরমুজের দাম ছিলো ২৫ টাকা কেজি। তা দুদিনের মধ্যেই হয়ে গেছে ৪৫ টাকা কেজি। এরপরও দেদারছে কেনার ধুম লেগেছে। অবশ্য যাদের আয় ভালো তাদেরই ভিড় তরমুজের দোকানে। অল্প আয়ের মানুষের সেদিকে তাকানোর জো নেই। দিনমজুরদের এমনিতেই কাজ নেই। তারপর সন্তান যদি তরমুজের বায়না ধরে তাহলে ওতে মানুষ মরছে বলেই ক্ষ্যান্ত করতে হচ্ছে। মুরগির বাজারে খুব একটা হেরফের হয়নি। এক কেজি সোনালী মুরগি আড়াইশ টাকা, লেয়ার ২শ ৪০ টাকা, প্যারেন্ট আড়াইশ টাকা, বয়লার দেড়শ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। দেশী মুরগী? ওর স্বাদ ভুলতে বসেছে সকলে। চুয়াডাঙ্গার বাজারে এক কেজি দেশী মুরগী কিনতে হলে গুনতে হচ্ছে ৪শ ৮০ টাকা। চতুর বিক্রেতা তেমন ক্রেতা পেলে দেশী বলে সোনালী গোচিয়ে দিতেও ছাড়ছে না। এ অভিযোগ বহু ভোক্তার। মাছের বাজারে এক কেজি রুই আড়াইশ থেকে দুইশ ৬০ টাকা, কাতলা ২শ ৮০ টাকা, টেংরার দাম ৫শ ছুঁই ছুঁই। গতকাল চুয়াডাঙ্গার নিচের বাজারের মাছপট্টিতে এর দাম ছিলো ৪শ ৮০ টাকা। সিলভার ১শ ৩০ টাকা। খামারের এক কেজি পাঙ্গাস ১শ ২০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। নদীর পাঙ্গাস? সে তো বহু আগেই ধরাছোঁয়ার বাইরে। মুদি দোকানে সবকিছুরই দাম বেড়েছে। যে ভোজ্য তেল কিছুদিন আগেও ছিলো ১শ ৫ থেকে ১০ টাকা লিটার। তা এখন কিনতে হলে গুনতে হচ্ছে দেড়শ’ থেকে একশ ৭০ টাকা। ক’দিনের মধ্যে দ্রব্যমূল্যের এতো ঊর্ধ্বগতি কেনো? জবাব নেই। তবে খুচরা বিক্রেতাদের অধিকাংশেরই অভিন্ন উক্তি। যেমন কিনছি তেমন বেচছি। সামান্য কিছু লাভ তো করতেই হবে। তবে আনাজের বাজারে বেগুন ঝিঙের এতো দামের বিষয়ে সুষ্ঠু জবাব মেলেনি। ক্ষেতের তথা চাষিদের নিকট থেকে যে যে দামেই কিনুক খুচরা বিক্রির সময় ক্রেতার ভিড় বুঝে দাম হাকানোর প্রবণতা যেনো পেয়ে বসেছে। চালের বাজারেও দাম বেড়েছে।
ভোক্তা সাধারণ দ্রব্যমূল্যের লাগামহীনতার বিষয়ে বিরূপ মন্তব্য করে বলেছেন, দাম হাকলেই যখন বিক্রেতারা পেয়ে যাচ্ছেন তখন বাড়তি মুনাফা করবে না কেনো? আমাদের সমাজে আয়ে ভারসাম্য নেই। থাকলে কি আর অস্বাভাবিক মূল্য হাকলে তা বিক্রি হতো?
এদিকে, পবিত্র রমজান উপলক্ষ্যে চুয়াডাঙ্গার অধিকাংশ মাংসের দোকানে জেলা প্রশাসন কর্তৃক দেয়া নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। গতকাল বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের নিচের বাজার, কেদারগঞ্জ নতুন বাজার, রেলবাজার, বেলগাছি রেলগেট, জাফরপুর মোড়, মুন্না মোড়, মুন্সিগঞ্জ পশুহাট, মোমিনপুর রেলগেটসহ রাস্তার পাশের কিছু ভ্রাম্যমাণ মাংসের দোকানে সরেজমিনে খোঁজখবর নেয়া হয়। এতে মাংস ক্রেতা ও মাংস বিক্রেতাদের জিজ্ঞাসাবাদে এবং মাংস ক্রয় করে প্রমাণিত হয় গত ১৩ মার্চ দুপুর ১২টায় চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণমূলক প্রস্তুতিসভার সিদ্ধান্ত মানা হচ্ছে না। ওই সভায় জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকারসহ জেলা দোকান মালিক সমিতি, চেম্বার অফ কমার্স, কাচাঁবাজার মালিক সমিতি, মাছ-মাংস বাজার সমিতির নেতৃবৃন্দ, জেলা মার্কেটিং অফিসার, সাংবাদিক ও সুধী সমাজের উপস্থিতিতে পবিত্র রমজান উপলক্ষে গরু, খাসি, বকরী, ব্রয়লার ও দেশী মুরগীর কেজি প্রতি মূল্য নির্ধারণ করা হয়। সেই নির্ধারিত মূল্য মাংস ব্যবসায়ীদের দোকানে টানিয়ে মাংস বিক্রির কথা থাকলেও তা মানা হয়নি। তালিকা টানানো তো দূরের কথা জেলা প্রশাসনের নির্দেশনাকে থোড়ায় কেয়ার করে মাংস ব্যবসায়ীরা মাংস বিক্রি করেছেন। চুয়াডাঙ্গা বড় বাজারের মাংস ব্যবসায়ী ওহিদুল ইসলাম গরুর মাংস বিক্রি করেছেন কেজি প্রতি ৫৫০ টাকা, খাসির মাংস ৭৫০ টাকা, আতিয়ার কসাই গরুর মাংস বিক্রি করেছেন ৫৩০ টাকা, রেলবাজারে গরু ও বকন গরুর মাংস বিক্রি করা হয়েছে প্রথমে ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকায়, দুপুর পরে অবশ্য মাইকিং করে গরুর মাংস বিক্রি করা হয়েছে ৪৫০ টাকা, রেলবাজারের রাজুর দোকানে দেশী মুরগী ৫০০ টাকা, সোনালী মুরগী ২৮০ টাকা ও ব্রয়লার কেজি প্রতি বিক্রি করা হয়েছে ১৫০ টাকা দরে। কেদারগঞ্জ নতুন বাজারে গরুর মাংস ৫৪০ টাকা, মুন্সীগঞ্জ পশুহাট, কমলাপুর পিটিআই ব্রিজ মোড়ে ও নীলমণিগঞ্জ মোমিনপুরে ৫৪০ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস বিক্রি করা হয়েছে। তবে জাফরপুর মোড়ের মাংস ব্যবসায়ী সজল আলী ভেজালমুক্ত এড়ে গরুর মাংস জেলা প্রশাসন কর্তৃক নির্ধারিত ৫২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন। এদিকে গত বুধবার বেলগাছী রেলগেট, দৌলতদিয়াড় ফায়ার সার্ভিস মোড়ের ভ্রাম্যমাণ মাংসের দোকানে মাংস বিক্রি না করা হলেও নূরনগর-জাফরপুর মুন্না মোড়ের পৌরসভা কর্তৃক অনুমতিবিহীন মাংস ব্যবসায়ী হাসিয়ার রহমান কোনো নিয়ম-নীতি ও জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা না মেনেই গরুর মাংস কেজি প্রতি বিক্রি করেছেন ৫৫০-৫৬০ টাকা করে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হাবিবুর রহমানের নিকট জানানো হলে তিনি বলেন, আমি বড়বাজার নীচের বাজারে মনিটরিং করার জন্য দোকানগুলোতে গিয়েছি। আমরা বেশ কয়েকজন মাংস ক্রেতা ও বিক্রেতার সাথে কথা বলেছি তাতে প্রতীয়মান হয়েছে জেলা প্রশাসন কর্তৃক নির্ধারিত মূল্য অধিকাংশ মাংসের দোকানে মানা হচ্ছে না। রমজানের প্রথম দিন আমরা জরিমানা না করে মৌখিকভাবে নির্ধারিত মূল্যে মাংস বিক্রির জন্য বলেছি। তবে দ্বিতীয় রমজান (বৃহস্পতিবার) মিটলেস ডে থাকায় আজ (শুক্রবার) থেকে মাংসের দোকান মনিটরিংসহ কঠোরভাবে বাজার মূল্য নিয়ন্ত্রণ করা হবে।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More