শতবর্ষী বৃদ্ধাকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ : ছেলে-পুত্রবধূ ও নাতি আটক

চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার পল্লি ভাংবাড়িয়ায় গভীররাতে ডাকাডাকি করায় বউ-শাশুড়ির বাগবিতন্ডা

আলমডাঙ্গা ব্যুরো/আসমানখালী প্রতিনিধি: চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলায় রাহেলা খাতুন নামে এক শতবর্ষী নারীকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় নিহত রাহেলার একমাত্র পুত্র সেলিম আহমেদ (৫০), পুত্রবধূ রিনা খাতুন (৪২) ও নাতি মো. স¤্রাট হোসেনকে (২৫) আটক করেছে পুলিশ। গতকাল বুধবার দুপুরে উপজেলার ভাংবাড়িয়া গ্রাম থেকে ওই নারীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত রাহেলার ছেলে ও এক মেয়ের জামাতা এ অভিযোগ করেছেন। আটকের পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সেলিম আহমেদ বলেছেন, বৃদ্ধ মাকে তার স্ত্রী ও ছেলে মিলে পিটিয়ে হত্যা করেছে। রাহেলা খাতুন ভাংবাড়িয়া গ্রামের মৃত হুর আলীর স্ত্রী। এ ঘটনায় বৃদ্ধার ছোট মেয়ে তিনজনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।

প্রতিবেশিরা জানান, বিছানায় প্রস্রাব পায়খানা করে ফেলবেন এই আশঙ্কায় রাতে তাকে ভাত না দিয়ে শুকনো পাউরুটি দেয়া হতো। মাঝে মাঝে ভাত দিতে গেলে বৃদ্ধার ছেলে বউ আমাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করতো। বৃদ্ধা রাহিলা খাতুনের ছেলের ঘর থেকে দূরে বাহিরে একটি টিনের চালায় চৌকি পেতে তাকে সেখানে রাখত। রাতে বৃদ্ধার ঘরে আলোর কোনো ব্যবস্থা ছিলো না। অন্ধকারেই রাত কাটাতো বৃদ্ধা রাহিলা খাতুন।

গত মঙ্গলবার গভীর রাতে বৃদ্ধা কেঁদে কেঁদে ছেলেকে ডাকছিলেন। এতে পরিবারের অনেকের কাঁচা ঘুম ভেঙে যায়। ছেলের বউ রিনা খাতুন (৪৫) উঠে গিয়ে বৃদ্ধ শাশুড়িকে গালমন্দ করেন। কিছু কথার জবাব দেন বৃদ্ধা। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে ছেলে ও নাতি ছেলে নির্মমভাবে বৃদ্ধাকে পেটায়। পিটিয়ে ঘরবন্দী করে রাখেন। সকালে প্রতিবেশী নাসিমা খাতুন বৃদ্ধাকে ভাত খাওয়াতে গিয়ে দেখেন বৃদ্ধা গুরুতর অসুস্থ। তার এক হাত ভেঙে গেছে। মাথায় ও কপালে আঘাতের চিহ্ন। কপাল দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। নাসিমা খাতুন ওই অবস্থায় বৃদ্ধাকে খাওয়ায়ে রেখে আসেন। বেলা ১১ টার দিকে তিনি আবারও বৃদ্ধাকে দেখতে যান। গিয়ে দেখেন বৃদ্ধা মারা গেছেন। এ বিষয়টি অন্যান্যদের জানালে প্রতিবেশীদের অনেকে ছুটে যান। তারা বৃদ্ধার ছেলে সেলিম, ছেলের বউ রিনা খাতুন ও নাতি সম্রাটকে ঘরে আটকে রেখে পুলিশকে সংবাদ দেন। পরে পুলিশ তাদের আটক করে থানায় নিয়ে আনেন। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে। প্রতিবেশীরা জানান, ছেলে ও নাতিছেলে বাইলধারা দিয়ে নির্মমভাবে পিটিয়ে মেরেছে বৃদ্ধাকে। কে মেরে হাত ভেঙে দিয়েছে তা জিজ্ঞাসা করলে বৃদ্ধা সম্রাট মেরেছে বলে নাসিমা খাতুনকে জানিয়েছিলেন।

নিহত রাহেলার ছোট মেয়ে সবুরন নেসার স্বামী (মেয়ের জামাই) মঈনুল ইসলাম অভিযোগ করেন, তার শাশুড়ির একমাত্র ছেলে সেলিম আহমেদ ও ছেলের স্ত্রী-সন্তানেরা পাকা ঘরে থাকলেও অসুস্থ মাকে টিনের ছাপড়ায় অযত্ন অবহেলায় রাখতেন। অসুস্থতার কারণে শয্যাশায়ী হওয়ায় ও বিছানা নিয়মিত পরিষ্কার না করায় মলমূত্রের ওপর শুয়ে থাকতেন রাহেলা। ঠিকমতো খেতে না দেয়ায় তার শাশুড়িকে অনেক সময় অভুক্তও থাকতে হতো। প্রতিবেশীরা খাবার দিতে এলে পুত্রবধূ রিনা খাতুন তাদের সঙ্গে ঝগড়া করতেন। ছেলের সঙ্গে রাহেলা খাতুন থাকলেও তাকে প্রায় প্রতিদিনই মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হতো। মঙ্গলবার রাতে সেলিমের সামনেই তার স্ত্রী রিনা খাতুন ও ছেলে সম্রাট হোসেন লাঠিপেটা করেন রাহেলা খাতুনকে। এতে তার কপালে জখম ও বাঁ হাতের কনুই ভেঙে যায়। এসব আঘাতের চিহ্ন পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদনেও উল্লেখ করা হয়েছে।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, রাহেলা খাতুন তিন কন্যা ও এক সন্তানের জননী ছিলেন। একমাত্র ছেলে সেলিম আহমেদের সঙ্গেই থাকতেন তিনি। বার্ধক্যের কারণে প্রায়ই মেয়েরজামাতারা এসে খোঁজখবর নিতেন। গতকাল বুধবার দুপুর ১২টার দিকে ছোট মেয়েরজামাতা মঈনুল ইসলাম শাশুড়ির খোঁজ নিতে এসে জানতে পারেন তিনি মারা গেছেন। খবর পেয়ে আলমডাঙ্গা থানা-পুলিশের একটি দল এসে লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন করে লাশটি সন্ধ্যায় থানায় নিয়ে যায়।

আলমডাঙ্গা থানার ওসি সাইফুল ইসলাম বলেন, চাঞ্চল্যকর বিষয়টি জানার পর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনিসুজ্জামান লালন সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন। নিহত নারীর ছেলে, ছেলের স্ত্রী ও নাতিকে আটক করা হয়েছে।  এঘটনায় রাতেই বৃদ্ধা রাহিলা খাতুনের ছোট মেয়ে সবুরন খাতুন বাদি হয়ে ভাই সেলিম, ভাবী রিনা ও ভায়ের ছেলে স¤্রাটকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More