শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে ৩০ মার্চ : স্বাস্থ্যবিধি মেনেই শিক্ষার্থীদের ক্লাস হবে

‘পঞ্চম দশম ও দ্বাদশে সপ্তাহে ৫ দিন ক্লাস, অন্য শ্রেণির শিক্ষার্থীদের একদিন’

স্টাফ রিপোর্টার: প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৩০ মার্চ খুলে দেয়া হবে। এর মধ্যে পঞ্চম, দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য সপ্তাহে পাঁচ থেকে ছয় দিন ক্লাস চলবে। অন্য শ্রেণিগুলোতে সপ্তাহে এক থেকে দুইদিন ক্লাস অনুষ্ঠিত হবে। তবে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের এখনই ক্লাসে আনা হবে না। পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আগামী জুনে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলে সেটি জুলাইয়ে নেয়া হতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের শিক্ষার্থীদের ১৭ মে’র মধ্যে করোনার টিকা নিশ্চিত করা হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে দুই ঘণ্টাব্যাপী আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক শেষে গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ৮টায় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, চলতি বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য যথাক্রমে ৬০ দিন ও ৮৪ দিনের ক্লাস নেয়ার সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রকাশ করা হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর এসব ক্লাস নেয়া হবে। এসএসসি পরীক্ষা জুনে নেয়ার কথা থাকলেও তা হয়তো জুলাইয়ে চলে যেতে পারে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার আগে শিক্ষা প্রকৌশল, স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যারা কাজ করেন, তাদের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ মেরামতের কাজ সম্পন্ন করা হবে। স্বাস্থ্যকর্মীরাও তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে মনিটরিং করবেন। এছাড়া শিক্ষা প্রশাসনের মাঠপর্যায়ে যেসব কর্মকর্তা রয়েছেন তারাও এসব বিষয় মনিটরিং করবেন নিয়মিতভাবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ১৭ মে আবাসিক হল খুলে দেয়ার ঘোষণা দেয়া আছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ সময়ের মধ্যে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ মেরামতের কাজ সম্পন্ন করবেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে মন্ত্রী বলেন, ‘টিকাদানের সংখ্যা যত বাড়বে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তত তাড়াতাড়ি স্বাভাবিক করে নিতে পারব। প্রাথমিক পর্যায়ের প্রায় দেড় লাখ শিক্ষক টিকা নিয়েছেন। শিক্ষকদের দ্রুত টিকা নিশ্চিত করা হচ্ছে। সুরক্ষা অ্যাপেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তাদের তালিকা। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে সহযোগিতা পেতে চিঠি দেয়া হয়েছে।’ বিশ্ববিদ্যালয় খোলার আগে শিক্ষার্থীদের টিকাদানের ব্যাপারে দীপু মনি বলেন, ‘দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক হলে প্রায় ১ লাখ ২৯ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। আমরা প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার টিকা দেয়ার ব্যাপারে ইতোমধ্যে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সঙ্গে কথা বলেছি। ইউজিসির মাধ্যমে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় আবাসিক হলে থাকা শিক্ষার্থীদের নাম, এনআইডি ও সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম লিখে পাঠালে তাদের তালিকা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হবে। এই শিক্ষার্থীরা দ্রুত রেজিস্ট্রেশন করে নিকটে টিকা কেন্দ্র থেকে টিকা নিতে পারবেন। আশা করছি, ১৭ মে’র আগে আবাসিক হলের শিক্ষার্থীদের টিকা দিতে পারবো।’ মন্ত্রী বলেন, ‘আসন্ন রমজান মাসে পুরো ছুটি থাকবে না। এক বছর তো বন্ধ থাকলো। আগে তো আমরা রোজার মধ্যে ক্লাস করেছি। ছাত্রছাত্রীরাও বাসায় থাকতে থাকতে হাঁপিয়ে উঠেছে। আমি মনে করি রোজার মধ্যে ক্লাসে আসতে তাদের কোনো সমস্যা হবে না।’ মন্ত্রিপরিষদ কক্ষে অনুষ্ঠিত গতকালের বৈঠকে কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আব্দুল মান্নান, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব আমিনুল ইসলাম খান, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) কামাল হোসেন, পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলমসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে ২২ ফেব্রুয়ারি আয়োজিত এক ভার্চুয়াল প্রেস ব্রিফিংয়ে দীপু মনি জানিয়েছিলেন, সরকারি-বেসরকারি সব বিশ্ববিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান ঈদুল ফিতরের পর আগামী ২৪ মে শুরু হবে। এর আগে ১৭ মে খুলে দেয়া হবে আবাসিক হলগুলো। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় অনলাইনে ক্লাস চলমান থাকবে। কোনো বিশ্ববিদ্যালয়েই ক্লাস শুরুর আগে কোনো পর্যায়ের পরীক্ষা হবে না। শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরু হওয়ার পর থেকেই পরীক্ষাগুলো শুরু হবে। নির্ধারিত সময়ের আগে কোনো ক্লাসও শ্রেণিকক্ষে অনুষ্ঠিত হবে না।
প্রসঙ্গত, দেশে গত বছর ৮ মার্চ প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্তের পর ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চলমান ছুটি ধাপে ধাপে বাড়িয়ে সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী আজ ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত করা ছিলো।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More