শীত কেটে তাপমাত্রা বাড়বে : শিলাবৃষ্টিসহ বজ্রঝড়ের পূর্বাভাস

চুয়াডাঙ্গায় একদিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা কমেছে ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস

স্টাফ রিপোর্টার: চলতি মাসে দুটি মৃদু বা মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। মাসের দ্বিতীয়ার্ধে শীত কেটে গিয়ে ক্রমেই তাপমাত্রা বাড়ার ধারায় ফিরতে পারে। একইসঙ্গে ফেব্রুয়ারিতে শিলাবৃষ্টিসহ বজ্রঝড়েরও পূর্বাভাস দিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। এছাড়া চুয়াডাঙ্গায় চুয়াডাঙ্গায় একদিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা কমেছে ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস দিতে আবহাওয়া অধিদপ্তরের গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি এ পূর্বাভাস দিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রাজারহাটে ৮ দশমিক ৬ এবং সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কক্সবাজারে ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়াও ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো ১৬ দশমিক ১ ডিগ্রি এবং সর্বোচ্চ সর্বনিম্ন ছিলো ২৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো ১০ দমমিক ২ ডিগ্রি  এবং সর্বোচ্চ ছিলো তাপমাত্রা ছিলো ২৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

গতকাল বৃহস্পতিবার আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঢাকার ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কমিটির নিয়মিত বৈঠক হয়। অধিদপ্তরের পরিচালক ও বিশেষজ্ঞ কমিটির চেয়ারম্যান মো. আজিজুর রহমান এতে সভাপতিত্ব করেন। বিশেষজ্ঞ কমিটির চেয়ারম্যান বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসে সামগ্রিকভাবে দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। এ মাসের প্রথমার্ধে দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে এক থেকে দুটি মৃদু (৮-১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বা মাঝারি (৬-৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। যদিও বৃহস্পতিবার থেকেই উত্তরাঞ্চলের নীলফামারী, পাবনা, দিনাজপুর ও কুড়িগ্রামে মৃদু শৈত্যেপ্রবাহ শুরু হয়েছে। এ মাসে দিন ও রাতের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে বাড়বে। তবে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে দেশের নদী অববাহিকায় মাঝারি বা ঘন কুয়াশা এবং অন্যত্র হালকা বা মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। পরিচালক আরও বলেন, এ মাসে দেশের কোথাও কোথাও এক থেকে দুদিন শিলাবৃষ্টিসহ বজ্রঝড় হতে পারে। ফেব্রুয়ারিতে দেশের সব প্রধান নদ-নদীতে স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বিরাজমান থাকতে পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তর ডিসেম্বর মাসের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস প্রতিবেদনে জানিয়েছে, সদ্যে শেষ হওয়া জানুয়ারি মাসে সার্বিকভাবে সারাদেশে স্বাভাবিকের চেয়ে শতভাগ কম বৃষ্টিপাত হয়েছ। জানুয়ারি মাসে স্বাভাবিকভাবে দেশে গড়ে ২ দিন বৃষ্টি হওয়ার কথা এবং গড় বৃষ্টির পরিমাণ হওয়ার কথা ৯ মিলিমিটার। সেখানে কোনো বৃষ্টিই হয়নি। জানুয়ারিতে দেশের সবচেয়ে কম সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৫ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল শ্রীমঙ্গলে, গত ২০ জানুয়ারি এ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এ মাসে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা শূন্য দশমিক ৫ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা শূন্য দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস স্বাভাবিকের চেয়ে কম ছিলো। একইসঙ্গে সারাদেশের তাপমাত্রা শূন্য দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম ছিলো।

চুয়াডাঙ্গায় ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে একলাফে ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা কমেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে গত বুধবার তাপমাত্রা ছিল ১৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, একদিনের ব্যবধানে হঠাৎ তাপমাত্রা এতটা কমে যাওয়ার ঘটনা অস্বাভাবিক। আকস্মিক তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকে প্রচ- শীত অনুভূত হচ্ছে। টানা ১০দিন পর বৃহস্পতিবার সকালে শহরবাসীকে আবার শীতের মোটা পোশাক পরতে দেখা গেছে। দুপুরেও মানুষজনকে শীতের পোশাক পরে চলাচল করতে দেখা গেছে। চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার পুরাতনপাড়ার বাসিন্দা গৃহবধূ জলি বেগম বলেন, ‘চাইর-পাঁচদিন ধইরে মনেই হইচোলোনা যে শীতকাল আচে। অ্যাকেবারে ফাল্গুন মাসের মতো অবস্তা। তবে বুদবার (বুধবার) রাইত থিকে বেশ জাড় (শীত) লাগতি শুরু করেচে।’

চুয়াডাঙ্গার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রকিবুল হাসান বলেন, সাধারণত তাপমাত্রা গড়ে ২ থেকে ৩ ডিগ্রি ওঠানামা করে থাকে। তবে তিনি তার ১৯ বছরের চাকরিজীবনে একলাফে তাপমাত্রা ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে দেখেননি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এমনটা হতে পারে বলে ধারণা করছেন তিনি।

আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে, গত ২১ জানুয়ারি চুয়াডাঙ্গায় সর্বশেষ শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়। ওই দিন জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিলো ৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পরদিন ২২ জানুয়ারি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর তাপমাত্রা আরেক দফায় বেড়ে যায়। ২৩ জানুয়ারিতে তাপমাত্রা ১৩ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২৪ জানুয়ারি ১৪ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২৫ জানুয়ারি ১৪ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২৬ জানুয়ারি ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২৭ জানুয়ারি ১৪ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২৮ জানুয়ারি ১৪ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২৯ জানুয়ারি ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৩০ জানুয়ারি ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৩১ জানুয়ারি ১৫ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ১ ফেব্রুয়ারি ১৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়।

তাপমাত্রার অস্বাভাবিক ওঠানামায় শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায় বলে মনে করছেন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের পরামর্শক আবুল হোসেন। তিনি বলেন, তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভবে ওঠানামা করছে। এতে শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা, জ্বর, সর্দি-কাশিসহ শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাবে। শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠ রোগীদের জন্য এসব রোগের ঝুঁকি বেশি।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More