সংঘাত-সহিংসতা গোলাগুলি ও বর্জনের মধ্যদিয়ে দ্বিতীয় ধাপের ৮৩৪ ইউপি নির্বাচন সম্পন্ন

উৎসবমুখর পরিবেশে সুষ্ঠু ভোটগ্রহণের দিনে চার জেলায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে ৭জন নিহত
স্টাফ রিপোর্টার: দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে বৃহস্পতিবার ভোটগ্রহণ চলাবস্থায় দেশের বিভিন্ন স্থানে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। কোনো কোনো স্থানে প্রকাশ্যে দেশীয় অস্ত্র ব্যবহার করে গুলি বিনিময় করে প্রার্থীদের সমর্থকরা। এছাড়া ভোটকেন্দ্র দখল, ব্যালট বাক্স ছিনতাই, ব্যালট পেপারে আগুন ধরিয়ে দেয়া, ধাওয়া-পালটা ধাওয়া, কেন্দ্রের ভেতর ও বাইরে ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানোসহ বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় চার জেলায় সাতজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন তিন শতাধিক। নিহতদের মধ্যে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলায় তিনজন, কুমিল্লার মেঘনায় দুইজন, চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে একজন এবং কক্সবাজার সদর উপজেলায় একজন রয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকায় ১৬টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করেছেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারা। এসব ঘটনায় অন্তত ৩০ জনকে আটক করা হয়। আর জাল ভোট দেওয়ার অভিযোগে বেশ কয়েকজনকে জরিমানা করা হয়েছে।
এদিকে ভোট খুব সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশন সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার। তবে সহিংসতা ও মৃত্যুর খবর দুঃখজনক উল্লেখ করে তিনি বলেন, যারা নিহত হয়েছেন, তাদের কেউ ভোটকেন্দ্রে মারা যাননি। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে ধাওয়া-পালটা ধাওয়া ও সহিংসতা হয়েছে। এতে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে দুই ধাপে তিন দিনে (করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে প্রথম ধাপের ভোট দুইদিনে নেয়া হয়) এক হাজার ১৯৮টি ইউনিয়ন পরিষদে ভোট হয়েছে। এর মধ্যে দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে গতকাল বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ সাতজন নিহত হলেন। এর আগে প্রথম ধাপের ২০৪ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের দিন তিনজন এবং ২০ সেপ্টেম্বর একই ধাপের ১৬০ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তিনজন মারা যান। এসব ইউনিয়নে সব মিলিয়ে ১৫২ জন চেয়ারম্যান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়। গতকাল ভোটগ্রহণ চলাবস্থায় নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার বাঁশগাড়ী ইউনিয়নের পুরান বাজারে একটি কেন্দ্র দখল নিয়ে আওয়ামী লীগ ও একই দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে তিনজন নিহত হন। কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার সদর ইউপির দুটি কেন্দ্রে সরকারদলীয় ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে পৃথক সংঘর্ষে দুজন নিহত হয়েছেন। কক্সবাজারের সদর উপজেলার খুরুশকুল ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডে দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে একজন এবং চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার লেলাং ইউনিয়নে ৮ নম্বর ওয়ার্ডের দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে একজন নিহত হন। দ্বিতীয় ধাপে দেশের ৬৩টি জেলার ১১৫ উপজেলায় বৃহস্পতিবার ৮৩৪টি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলে। এতে ৩ হাজার ৩১০ জন চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ ৪১ হাজার ২১৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনে সহিংসতা এড়াতে ১৪টি জেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়। এ ধাপে ভোটকেন্দ্রের বাইরে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির ২৫ হাজারের বেশি সদস্য মোতায়েন ছিল। আর ভোটকেন্দ্রের পাহারায় ছিলেন পুলিশ ও আনসারের দেড় লাখের বেশি সদস্য। এ ভোট উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে বলে বুধবার আশা প্রকাশ করেছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা।
ইসি সূত্র জানায়, এ নির্বাচনে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ায় ১৬টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। এর মধ্যে কিশোরগঞ্জে একটি, নরসিংদীতে একটি, নেত্রকোনায় দুটি, গোপালগঞ্জে একটি, চট্টগ্রামে দুটি, কক্সবাজারে দুটি, নারায়ণগঞ্জে একটি ও শেরপুরে দুটি কেন্দ্র রয়েছে।
ইসি সচিব যা বললেন : ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর বৃহস্পতিবার নির্বাচন পরিস্থিতি নিয়ে ব্রিফিং করেন ইসি সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার। তিনি বলেন, পুরো দেশে ৮৩৪টি ইউপিতে নির্বাচন হয়েছে। প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় নির্বাচন কমিশন থেকে খোঁজ নিয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদেরও কেউ কেউ অভিমত দিয়েছেন। নির্বাচন কমিশন মনে করে, ভোট খুব সুষ্ঠুভাবে হয়েছে, উৎসবমুখর পরিবেশে হয়েছে। তিনি বলেন, সারা দেশে ৮ হাজার ৪০০ ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হয়। ১০টি ভোটকেন্দ্রে কিছু দুষ্কৃতকারী ব্যালট পেপার, ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেছে। এরকম ঘটনায় ১০টি কেন্দ্রের ভোট বন্ধ করা হয়েছে।
ইসি সচিব বলেন, এর আগে ২০১৬ সালের ইউপি নির্বাচনে ৮৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল। প্রতিটি মৃত্যু দুঃখজনক। ইউপি নির্বাচনে ঘরে ঘরে প্রতিযোগিতা হয়, পাড়ায় পাড়ায় প্রতিযোগিতা হয়। প্রার্থীরা অতি আবেগি হয়ে যান। এসব কারণে নির্বাচনি সহিংসতা হয়ে থাকে। যেসব ঘটনা ঘটেছে, সেগুলো না ঘটলে আরও ভালো হতো। পরবর্তী নির্বাচন আরও ভালো হবে। দ্বিতীয় ধাপে ৬৫-৭৫ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে তিনি ধারণা করছেন।
হুমায়ুন কবীর বলেন, জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তারা যেভাবে ফোর্স চেয়েছিলেন, সেভাবে ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সবাই অত্যন্ত সক্রিয় ছিলেন। এ কারণে সুষ্ঠু ভোট হয়েছে। এই নির্বাচন পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখব কোন জায়গায় জোর দিতে হবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More