সব রেকর্ড ভেঙে এবার বুয়েটে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন চুয়াডাঙ্গার ৬ জন 

নবম শ্রেণি থেকে প্রকৌশলী হওয়ার জেদ নিয়ে ভর্তিযুদ্ধে শক্ত অবস্থানে ইসরাক জাহান মায়া

আব্দুস সালাম: অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে চুয়াডাঙ্গাতে পড়াশোনা করে এবার বুয়েটে মেধার ভিত্তিতে ৫জন ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেছে। অপেক্ষামান তালিকায় সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন আরও একজন। এর আগে ২০০৯ ও ২০১৪ সনে অপেক্ষামান তালিকাসহ ভর্তির যোগ্যতা অর্জনের রেকর্ড করেছিলেন ৫ জন। গতবছর এ সংখ্যা ছিলো মাত্র ৩ জন। এবার বুয়েটে ভর্তিযুদ্ধে চুয়াডাঙ্গা জেলার ৬ জনের শক্ত অবস্থানকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন স্থানীয় শিক্ষানুরাগী মহলের অনেকে।

                    বুয়েটে ১ হাজার ২শ ৭৫টি আসনের বিপরীতে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রিলিতে ১৮ শিক্ষার্থী অংশ নেয়ার সুযোগ পায়। এর মধ্যে লিখিত ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার যোগ্যতা অর্জন করে ৬ হাজার জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে মেধার ভিত্তিতে সরাসরি ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেছে চুয়াডাঙ্গার ৫ জন। সুবিধাজনক অপেক্ষমান তালিকায় রয়েছে একজন। যারা ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেছে এদের মধ্যে ইসরাক জাহান মায়া, চুয়াডাঙ্গা বুজরুকগড়গড়ি মাদরাসাপাড়ার আল ইমরান ও বিলকিস আরার মেয়ে অন্যতম। মায়ার অবস্থান ৩৭১। ইসরাক জাহান মায়া চুয়াডাঙ্গা সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় সব বিষয়ে জিপিএ-৫ পাওয়ার গৌরব অর্জন করে। এবার তিনি বুয়েটে ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ার সুযোগ করে নিলেন। চুয়াডাঙ্গা মহিলা কলেজ রোডের মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক ও মোছা. আসমাউল হুসনার ছেলে মো. আরেফিন রাজ্জাক মেধা। তার অবস্থান ৫০৬। আরেফিন রাজ্জাক মেধা চুয়াডাঙ্গা ভিক্টোরিয়া জুবেলি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে সকল বিষয়ে জিপিএ-৫ পাওয়ার গৌরব অর্জন করে। এবার তিনি বুয়েটে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ করে নিলো। চুয়াডাঙ্গা কোর্টপাড়ার অ্যাড. মো. মহসীন আলী ও আঞ্জুমান আরার ছেলে মুহতাসিম ফাইয়াজ হামিমের অবস্থান ৬১৪। চুয়াডাঙ্গা ভিক্টোরিয়া জুবেলি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় সব বিষয়ে জিপিএ-৫ পাওয়ার গৌরব অর্জন করে। এবার তিনি বুয়েটে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ করে নিলো। আলমডাঙ্গার বাবুপাড়ার মো. ইসমাইল মাহমুদ ও মোছা. রওশন আরার ছেলে মো. ফরহাদ মোনায়েম বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষায় ৯১০ তম স্থানে রয়েছে। আলমডাঙ্গা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও আলমডাঙ্গা সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। এবার তিনি বুয়েটে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ার সুযোগ করে নিয়েছে। দামুড়হুদা দশমিপাড়ার মো. আসমত আলী বিশ^াস ও মোছা. শামসুন্নাহারের ছেলে আসিব আসমত নিবিড় বুয়েটে ভর্তিযুদ্ধে ৯৬৩তম অবস্থানে রয়েছেন। তিনি চুয়াডাঙ্গা ভিক্টোরিয়া জুবেলি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এবার নিবিড় বুয়েটে ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রডাক্টসন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ার সুযোগ করে নিয়েছেন। এছাড়া অপেক্ষমাণ তালিকার সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালপাড়ার ড. মো. বসিরুল আজম ও মোছা. শামীমা আক্তারের ছেলে শুফান শাহী বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষায় ১৪৫৫ তম অবস্থান অধিকার করেছেন। অপেক্ষমাণ তালিকায় তার অবস্থান ১৮০।

                    বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষায় ৩৭১ তম স্থান অধিকার করা ইসরাক জাহান মায়ার প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেছেন, প্রবাসী পিতার ইচ্ছে ছিলো আমি ডাক্তার হবো। সেই নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় মনে মনে জেদ করেছিলাম, শুধু ছেলেরাই কেনো, মেয়েদেরও তো প্রকৌশলী হতে হবে। সেই থেকে লক্ষ্য পূরণের যুদ্ধে রয়েছি। বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার প্রস্তুতি নিয়ে ভালো করেছি। এই ভালো করার জন্য পিতা-মাতা শিক্ষকসহ সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে মায়া বলেছেন, গণিতের শিক্ষক তন্দ্রা ম্যাডাম আমাকে সবসময় উৎসাহ যুগিয়েছেন। বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেয়ার সময় আম্মু খুবই সহযোগিতা করেছেন। কখন কতটুকু পড়েছেন? জানতে চাইলে মায়া বলেছেন, অবশ্যই বেশি বেশি করে চর্চা করেছি। প্রথম থেকেই পড়েছি, চর্চা করেছি। আবার শরীর মাথা ঠিক রাখার জন্য পরিমাণ মতো ঘুমাতেও হবে। জেগে থাকা মানেই পড়া। মূল পাঠ্যপুস্তকের ওপরই বেশি ভরসা রেখেছি। মেধা বলেছেন, বিশ^বিদ্যালয় ও বুয়েটে বিগত বছরের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নগুলো নিয়ে বেশি বেশি করে পড়েছি। সব বিষয়ে ধারণা রাখার চেষ্টা করেছি। ধৈর্য্য ধরে পড়েছি। ফায়াজ বলেছে, বুয়েটে পড়া বড় ভাইদের দেখে প্রকৌশল হওয়ার স্বপ্ন জেগেছিলো। ইউটিউবের সহযোগিতা পেয়েছি। পাঠ্যপুস্তক বুঝে বুঝে পড়েছি। প্রশ্নব্যাংক সমাধানের সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি। ফরহাদ মোনায়েম বলেছে, ইউটিউবের সহযোগিতা নিয়েছি। শিক্ষকদের সর্বাত্মক সহযোগিতা পেয়েছি। প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষাথী হওয়াই অনেক সুযোগ থেকে বঞ্ছিত হলেও নিজের চেষ্টাটা ছিলো প্রগাড়। নিবিড় বলেছেন, অল্প পড়েছি, তবে নিয়মিত পড়েছি। পড়তে পড়তে কোনো সমস্যা হলে দ্রুত বড়ভাইসহ শিক্ষকদের সহযোগিতা চেয়েছি। সৃষ্টিকর্তার ওপর ভরসা রেখে আত্মবিশ^াসের সাথে পড়েছি। বোন চিকিৎসক। মা শিক্ষক। পিতা সঙ্গীত শিক্ষক। সকলের প্রেরণা আমাকে পড়ার খোরাক জুগিয়েছে।

                    বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষায় অপেক্ষমাণ তালিকায় থাকলেও শুফান শাহী এমআইএসটিতে মেধার ভিত্তিতে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করে রেখেছে। আইইউটিতে মেধার ভিত্তিতে ২১৭তম হয়েছে। এখানে তিনি কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ভর্তি হয়ে রয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

                    প্রসঙ্গতঃ মেডিকেলে ভর্তিতে কোটা থাকলেও বুয়েটে ভর্তির জন্য জেলা ভিত্তিক বা উপজেলা ভিত্তিক কোনো কোটা নেই। দেশের শীর্ষ মেধাবী শিক্ষার্থীদের সাথে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখতে পারলেই বুয়েটে ভর্তির সুযোগ মেলে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More