সাধারণ ছুটি বেড়ে ১৬ মে পর্যন্ত : দোকানপাট খুলবে ১০ মে

ঈদের ছুটিতে কেউ বাড়ি যেতে পারবে না : গণপরিবহন বন্ধ থাকবে

স্টাফ রিপোর্টার: করোনভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ষষ্ঠ দফায় আরও ১০ দিনের সাধারণ ছুটি দিয়েছে সরকার। এবারের ছুটির মেয়াদ ১৬ মে পর্যন্ত। গতকাল এ ছুটির আদেশ জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সাধারণ ছুটি দিলেও ঈদুল ফিতর সামনে রেখে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সারা দেশে সীমিত পরিসরে শর্তসাপেক্ষে ব্যবসা-বাণিজ্য ও শপিং খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। একইভাবে সীমিত পরিসরে অফিস-আদালতও খোলা থাকবে। তবে এই সময়ে সারা দেশে মানুষের চলাচল সীমিত রাখতে আন্তজেলা বাসসহ সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। পণ্য পরিবহনের জন্য বিশেষ পারসেল ট্রেন চালু থাকবে। অবশ্য পণ্য না পাওয়ায় চট্টগ্রাম ও ঢাকার মধ্যে চালু হওয়া বিশেষ পারসেল ট্রেনটি গতকাল বন্ধ ছিলো।
ঈদের ছুটির সময় সরকারি কর্মকর্তারা নিজ নিজ কর্মস্থল ত্যাগ করতে পারবেন না। এ বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া হয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে। অন্যদিকে চলমান ছুটির মধ্যেই সীমিত আকারে শেয়ারবাজারে লেনদেন চালু করতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (এসইসি) চিঠি দিয়েছে। এ দফায় ছুটির আদেশে জানিয়ে দেয়া হয়েছে, রাত ৮টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত অতীব জরুরি ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়া যাবে না। এর আগে এ নিষেধাজ্ঞা ছিলো সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত। যথারীতি বন্ধ থাকবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টার। পরিস্থিতি বিবেচনায় এবারের ছুটির আদেশে বেশকিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণের ফলে চেহারা পাল্টেছে লকডাউনের। সবকিছুতেই চলে এসেছে শিথিলতা। সাধারণ ছুটির মেয়াদ বৃদ্ধি করে ৭ থেকে ১৬ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। ষষ্ঠ দফার এ ছুটির মধ্যে ৮, ৯, ১৫ ও ১৬ মে চার দিন আছে সাপ্তাহিক ছুটি। পঞ্চম দফার ছুটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আজ ৫ মে। এর সঙ্গে যুক্ত ছিলো ৬ মে বুদ্ধপূর্ণিমার সরকারি ছুটি।
খোলা রাখা যাবে শপিং মল: রোজার ঈদ সামনে রেখে সাধারণ ছুটির আবরণে চলমান লকডাউন কিছুটা শিথিল করা হয়েছে। বিশেষ করে চারটি শর্তে সারা দেশে জেলা-উপজেলায় ১০ মে থেকে সীমিত আকারে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত শপিং মল খোলা রাখার কথা বলা হয়েছে সরকারি আদেশে।
গতকাল দেওয়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওই আদেশে বলা হয়েছে, রমজান ও ঈদুল ফিতর সামনে রেখে সীমিত পরিসরে ব্যবসা-বাণিজ্য চালু রাখার স্বার্থে দোকানপাট ও শপিং মল খোলা রাখার সুযোগ দেয়া হচ্ছে। এজন্য চারটি শর্ত দেয়া হয়েছে। এগুলো হলো-বড় শপিং মলের প্রবেশমুখে হাত ধোয়া ও স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখতে হবে। শপিং মলে আসা যানবাহনকে অবশ্যই জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা রাখতে হবে। বেচাকেনার সময় ক্রেতা-বিক্রেতার পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে এবং দোকানপাট ও শপিং মল বিকাল ৪টার মধ্যে অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।
ঈদ পর্যন্ত বন্ধ থাকবে গণপরিবহন: ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে চলমান লকডাউন কিছুটা শিথিল করা হলেও এবার রোজার ঈদের সময় আন্তঃজেলা যাত্রী পরিবহন বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন নিয়ে গতকাল দেয়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আদেশে বলা হয়েছে, ঈদুল ফিতরের সরকারি ছুটিতে কেউ কর্মস্থল ত্যাগ করতে পারবেন না। ওই সময়ে আন্তঃজেলা গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বলছে, সাধারণ ছুটির এই সময়ে এক জেলা থেকে আরেক জেলা এবং এক উপজেলা থেকে আরেক উপজেলায় জনসাধারণের চলাচল ‘কঠোরভাবে’ নিয়ন্ত্রিত থাকবে। জেলা প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তা সতর্কভাবে বাস্তবায়ন করবে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে জনগণকে অবশ্যই ঘরে অবস্থান করতে হবে। রাত ৮টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত অতীব জরুরি ছাড়া (প্রয়োজনীয় কেনাবেচা, ওষুধ কেনা, চিকিৎসাসেবা, মৃতদেহ দাফন/সৎকার ইত্যাদি) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে আসা যাবে না। আদেশে বলা হয়েছে, সাধারণ ছুটি বা চলাচলে নিষেধাজ্ঞার সময়ে জরুরি সেবা যেমন- বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও অন্যান্য জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দর (স্থলবন্দর, নদীবন্দর ও সমুদ্রবন্দর) কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট, ডাকসেবা এবং এ-সংশ্লিষ্ট সেবা কাজে নিয়োজিত যানবাহন ও কর্মীরা এ ছুটির বাইরে থাকবেন। সড়ক ও নৌপথে সকল প্রকার পণ্য পরিবহনের কাজে নিয়োজিত ট্রাক, লরি, কার্গো ভেসেল চলাচলও অব্যাহত থাকবে।
আর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আদেশে বলা হয়েছে, এবারের রোজার ঈদের ছুটির সময় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ নিজ কর্মস্থলে থাকতে হবে। ঈদুল ফিতরের সরকারি ছুটিতে কেউ কর্মস্থল ত্যাগ করতে পারবে না। এ আদেশে আরও বেশ কিছু বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে-কৃষিপণ্য, সার, কীটনাশক, খাদ্য, শিল্পপণ্য, রাষ্ট্রীয় প্রকল্পের মালামাল, কাঁচাবাজার, খাবার, ওষুধের দোকান, হাসপাতাল ও জরুরি সেবা এবং এসবের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মীদের ক্ষেত্রে এ ছুটি প্রযোজ্য হবে না। চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক ও কর্মী এবং ওষুধসহ চিকিৎসা সরঞ্জাম বহনকারী যানবাহন ও কর্মী, গণমাধ্যমে (ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট) নিয়োজিত কর্মীরা এ ছুটির আওতায় পড়বেন না।
ওষুধশিল্প, উৎপাদন ও রপ্তানিমুখী শিল্পসহ সব কলকারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে চালু রাখতে পারবে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ প্রণীত ‘বিভিন্ন শিল্পকারখানায় স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকরণে নির্দেশনা’ প্রতিপালন নিশ্চিত করতে হবে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরে শিল্পকারখানা, কৃষি এবং উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলো ও পরিবহন পর্যায়ক্রমে উন্মুক্ত করা হবে। ছুটির সময় কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখা যাবে না। রমজান, ঈদ এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধা বিবেচনায় ব্যাংকিংব্যবস্থা চালু রাখার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে। সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন অফিসগুলো প্রয়োজন অনুসারে খোলা রাখবে। সেইসঙ্গে তারা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা জারি করবে।
শেয়ারবাজারে লেনদেন চালু করতে ডিএসইর চিঠি: এদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে চলমান সাধারণ ছুটির মধ্যে শেয়ারবাজারে লেনদেন চালু করার সম্মতি চেয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) চিঠি দিয়েছে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (এসইসি)। ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী সানাউল হক স্বাক্ষর করা চিঠিতে ১০ মে লেনদেন চালু করার সম্মতি চাওয়া হয়েছে। চিঠিতে জানানো হয়েছে, কমিশনের সম্মতির পরে লেনদেন চালু করতে তিন দিন সময় দিতে হবে। কারণ, ডিএসইরও লেনদেন চালু করার জন্য প্রস্তুতির বিষয় আছে। এদিকে ব্যাংকিং লেনদেন-কার্যক্রম-স্বল্পতার কারণে শেয়ারবাজারে দুই ঘণ্টার বেশি লেনদেন করা সম্ভব হবে না বলে কমিশনকে জানানো হয়েছে। এ ক্ষেত্রে অবশ্য চেক ক্লিয়ারিংয়ের জন্য ব্যাংকগুলোর সহযোগিতা চাওয়া হবে। চিঠিতে বলা হয়েছে, লেনদেন চালু হলেও এ মুহূর্তে সব সেবা দেয়া সম্ভব হবে না। এর আগে ৩০ এপ্রিল লেনদেন চালুর নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় ডিএসই পরিচালনা পর্ষদ।
১৬ মে পর্যন্ত গণপরিবহন বন্ধ: করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) এর বিস্তার রোধকল্পে সরকার সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সাধারণ ছুটি আগামী ১৬ মে পর্যন্ত বর্ধিত করায় দেশব্যাপী চলমান গণপরিবহন বন্ধের সিদ্ধান্ত আগামী ১৬ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। গতকাল সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এ সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। পরে তা গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি আকারে জানিয়ে দেয়া হয়। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের উপপ্রধান তথ্য অফিসার মো. আবু নাছের স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে ১৬ মে পর্যন্ত গণপরিবহন চলাচল বন্ধের কথা বলা হলেও আগের মতোই জরুরি পরিষেবা যেমন-বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও অন্যান্য জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরসমূহের কার্যক্রম (স্থলবন্দর, নদীবন্দর ও সমুদ্রবন্দর), পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট, ডাকসেবা ও সংশ্লিষ্ট কাজ, খাদ্যদ্রব্য, সড়ক ও নৌপথে সব প্রকার পণ্য, রাষ্ট্রীয় প্রকল্পের মালামাল, ওষুধ, ওষুধশিল্প, চিকিৎসা সেবা ও চিকিৎসাবিষয়ক সামগ্রী পরিবহন, শিশুখাদ্য, ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া, ত্রাণবাহী পরিবহন, কৃষিপণ্য, শিল্পপণ্য, সার ও কীটনাশক, পশুখাদ্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের উৎপাদিত পণ্য, দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত পণ্য এবং জীবনধারণের মৌলিক পণ্য উৎপাদন ও পরিবহন এ নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবে বলে জানানো হয়েছে। তবে পণ্যবাহী যানবাহনে যাত্রী পরিবহন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More