সামরিক অভিযানে সশস্ত্র বাহিনীকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিলেন মোদি //যেকোনো সময় পাকিস্তানে হামলা : প্রস্তুত ইসলামাবাদ

সীমান্তে গুলিবিনিময় অব্যাহত : ভারতের গোয়েন্দা ড্রোন ভূপাতিত

মাথাভাঙ্গা মনিটর: ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর হামলার বদলা নিতে তিন সামরিক বাহিনীকে ‘পূর্ণ স্বাধীনতা’ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি তাদের বলেছেন, যখন খুশি ‘অ্যাকশন’ নিন। আর নিরাপত্তা জোরদারের অংশ হিসাবে কাশ্মীরে মঙ্গলবার থেকে অর্ধেকের বেশি পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এদিকে নিয়ন্ত্রণরেখায় পঞ্চম দিনের মতো সোমবার রাতেও গুলিবিনিময় হয়েছে। ওদিকে ভারতের দুটি ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি করেছে পাকিস্তান। সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, পহেলগাঁওয়ে হামলার বদলা নিতে তিন সামরিক বাহিনীকে ‘পূর্ণ স্বাধীনতা’ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গতকাল মঙ্গলবার নিজ বাসভবনে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল, চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ (সিডিএস) জেনারেল অনিল চৌহানসহ তিন বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী। সেই বৈঠকে তিনি স্পষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছেন যে, যখন খুশি, যেখানে খুশি পহেলগাঁও হামলার বদলা নিতে পারে ভারতীয় সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনী। কীভাবে হামলা চালানো হবে, কীভাবে পরিকল্পনা করা হবে, সেসংক্রান্ত বিষয়ে কোনো বাহিনীর হাত-পা বেঁধে রাখা হবে না। যেমন মনে হবে, তেমনভাবেই ‘অ্যাকশন’ নেয়ার স্বাধীনতা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বৈঠক সূত্র এনডিটিভিকে জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন সন্ত্রাসবাদকে সমুচিত জবাব দিতে আমরা জাতীয়ভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তিনি আরও বলেছেন, ভারতের সামরিক বাহিনীর ওপর তার পূর্ণ আস্থা এবং বিশ্বাস রয়েছে। এ বৈঠকের কিছুক্ষণ পরেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং ক্ষমতাসীন বিজেপির উপদেষ্টা রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের প্রধান মোহন ভাগবত প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে পৌঁছান। জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর বার্তায় সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপের ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। বুধবার মন্ত্রিসভার নিরাপত্তাবিষয়ক কমিটির বৈঠকের আগে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো।
হিন্দুস্তান টাইমস জানায়, বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর বুধবার দ্বিতীয়বারের মতো মন্ত্রিসভার নিরাপত্তাবিষয়ক কমিটির (সিসিএস) বৈঠকে বসছেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মন্ত্রিসভার নিরাপত্তাবিষয়ক কমিটি ভারতের নিরাপত্তাবিষয়ক সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। বুধবার সকাল ১১টায় অনুষ্ঠেয় বৈঠকে এতে ভারতের নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার সিসিএসের সঙ্গে বৈঠকের পর পাকিস্তানের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ, সিন্ধু নদের চুক্তি বাতিলসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেন মোদি।
পাকিস্তান প্রস্তুত রয়েছে: প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মুহাম্মদ আসিফ সোমবার রয়টার্সকে বলেছেন, ভারতের একটি সামরিক অভিযান আসন্ন। সেই অনুযায়ী তারা তাদের বাহিনীকে প্রস্তুত রেখেছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আমাদের সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী করেছি, কারণ যে কোনো মুহূর্তে একটা কিছু হয়ে যেতে পারে। এ অবস্থায় কিছু কৌশলগত সিদ্ধান্তও নিতে হয়। আমরা ইতোমধ্যে সেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানান, পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী সরকারকে সম্ভাব্য ভারতীয় হামলার ব্যাপারে অবহিত করেছে। তবে কেন তিনি হামলাকে অবশ্যম্ভাবী মনে করছেন, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি। তিনি বলেন, পাকিস্তান সর্বোচ্চ সতর্কতায় রয়েছে এবং পারমাণবিক অস্ত্র কেবল ‘দেশের অস্তিত্বের ওপর সরাসরি কোনো হুমকি এলে’ ব্যবহার করা হবে।
এদিকে ভারতের সরকারি নথিতে জানানো হয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকার ৮৭টি পর্যটনকেন্দ্রের মধ্যে ৪৮টি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাকি পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। তবে কতোদিনের জন্য এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। সরকারের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর বরাত দিয়ে এনডিটিভি জানিয়েছে, কুপওয়ারা ও বারামুল্লা জেলার বিপরীত এলাকা এবং আখনুর সেক্টরে সোমবার রাতেও গোলাগুলি হয়েছে। ২৮ এপ্রিল রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী কুপওয়ারা ও বারামুল্লা জেলার বিপরীত এলাকা এবং আখনুর সেক্টরে বিনা প্ররোচনায় ছোট অস্ত্র দিয়ে গুলি চালিয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী এই উসকানির যথাযথ ও কার্যকর জবাব দিয়েছে। তবে তারা এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি এবং কোনো হতাহতের খবর দেয়নি। পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে কোনো তথ্য জানানো হয়নি।
এদিকে কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখার (এলওসি) কাছে ভারতীয় কোয়াডকপ্টার ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করার দাবি করেছে পাকিস্তান। মঙ্গলবার ডন জানিয়েছে, পেহেলগাম হামলার পর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনার ভেতরেই আজাদ কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি)-তে ভারতের একটি নজরদারি ড্রোন ভূপাতিত করেছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। সোমবার পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী কাশ্মীরের ভিম্বার জেলার মানওয়ার সেক্টরে ভারতীয় ওই কোয়াডকপ্টার ড্রোনটি ভূপাতিত করে। নিরাপত্তা সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ‘পাকিস্তান তাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন প্রতিহত করে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর একটি ভারতীয় কোয়াডকপ্টার সফলভাবে ভূপাতিত করেছে।’ একইদিনে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে নিয়ন্ত্রণরেখায় আরও একটি কোয়াডকপ্টার ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি করা হয়েছে। ড্রোনটি পাকিস্তান সীমান্তে টহল দিচ্ছিল বলে সেনাবাহিনী উল্লেখ করেছে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More