সিয়াম সাধনার মাসে অতিরিক্ত লাভ পরিবহার করা ব্যবসায়ীদের নৈতিক দায়িত্ব

চুয়াডাঙ্গা জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির মাসিক সভায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান

স্টাফ রিপোর্টার: ২৫ মার্চ কালরাত্রি এবং পরদিন মহান স্বাধীনতা দিবসের সকল কর্মসূচি যথাযথ গুরুত্বসহকারে পালনে সকলকে আন্তরিক হওয়ার উদাত্ব আহ্বান জানিয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান বলেছেন, আসন্ন মাহে রমজানের পবিত্রতা রক্ষার্থে সকলকে সজাগ হওয়ার পাশাপাশি দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক পর্যায়ে রাখতে সংশ্লিষ্ট সকলকে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। সিয়াম সাধনার মাসে অস্বাভাবিক লাভ পরিহার করা ব্যবাসায়ীদের নৈতিক কর্তব্যেরই অংশ।

গতকাল রোববার সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মাসিক উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম সকল সরকারি দফতরের জেলা শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিকট থেকে দাফতরিক কর্মকা-ের বিস্তারিত অবহিত হন এবং প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেয়ার মধ্যে শিক্ষার মান বৃদ্ধি ও কৃষি উৎপাদনে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনা প্রতিপালনে সকলকে সচেষ্ট হওয়ার অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে চুয়াডাঙ্গার সর্বক্ষেত্রে স্মার্ট করে গড়ে তোলার জন্য করণীয় নির্ধারণও করা হবে। দফতর ভিত্তিক তথা বিভাগীয়ভাবে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সম্ভবনার প্রস্তাবনা মন্ত্রী পরিষদে প্রেরণ করতে হবে।  এ ক্ষেত্রে গড়িমশি কাম্য নয়।

চুয়াডাঙ্গা শহীদ হাসান চত্বরের সার্বিক উন্নয়নে একটি কমিটি গঠনের গুরুত্ব দিয়ে জেলা প্রশাসক বলেছেন, বীর শহীদ মুক্তিযোদ্ধার নামে নামকরণ করা শহীদ হাসান চত্বরে মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসহ শহীদ হাসানের এবং সর্বকালের সর্বশেষ্ট বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মোরাল নির্মাণের বিষয়টি ভাবতে হবে। সড়ক ও জনপথ বিভাগসহ পৌরসভা যৌথভাবে নকশা প্রণয়নের উদ্যোগ নিতে পারে। চুয়াডাঙ্গার সকল নদী খাল বিল সংরক্ষণের পাশাপাশি মাছ উৎপাদনের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়। বলা হয়, যেহেতু চুয়াডাঙ্গায় তুলনামূলক জলাশয় কম, সেহেতু যেটুকু আছে সেখানে যাতে প্রচুর পরিমাণের মাছের চাষ নিশ্চিত করা যায়, সে লক্ষ্যে বাস্তবমুখি পদক্ষেপ নিতে হবে। আসন্ন পবিত্র রমজানে ইফতারি ও সেহরির সময় যাতে বিদ্যুত থাকে সে লক্ষে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বাড়তি দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয়ার আহ্বান জানিয়ে মাঠের আবাদে যাতে বিদ্যুতের কারণে সেচ ব্যাহত না হয় সে দিকেও বাড়তি নজর রাখতে হবে। পতিত জমি আবাদের আওতায় নেয়ার পাশাপাশি সার বীজ ভেজাল মুক্ত রাখাসহ পিরিমিত প্রয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করতে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের আরও নজরদারি বাড়াতে হবে। গণপূর্ত, এলজিইডি. সড়ক ও জনপথ বিভাগের মাধ্যমে যেসব সড়ক নির্মাণ, সংস্কার, স্থাপনা নির্মাণসহ উন্নয়নমূলক কাজ চলমান রয়েছে তার গুণগত মান নিশ্চিত করতে তদারকি বাড়াতে হবে। বাস্তবায়নাধীন প্র্রকল্পের নিকট সাইনবোর্ড দিয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করতে হবে। যাতে এলাকার সাধারণ সচেতন মানুষও দেখতে পারে কি পরিমাণে কতো টাকা ব্যায়ে কোন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাস্তবায়ন হচ্ছে। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট গত সভার কার্যবিবরণী উপস্থাপন করেন। ওই সভায় গৃহিত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতি সম্পর্ক তথ্য তুলে ধরা হয়। সভায় চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র জাহাঙ্গীর আলম মালিক খোকন পৌর এলাকার কোথায় সুইপার কলোনি নির্মাণ করা হলে কী সহজ হবে তা যেমন তুলে ধরেন, তেমনই তিনি বলেন, মাছের আড়ৎপট্টি বর্তমানে যেখানে রয়েছে সেখানে রাখার কোনো কারণ নেই। এর বৈধতাও নেই। ফলে পৌরসভার নির্ধারিত কোন স্থানে স্থানান্তরের বিষয়টি বিবেচনাধীন। আমরা সম্ভাব্য জমি প্রস্তুত করার বিশেষ উদ্যোগ যথাদ্রুত সম্ভব নেয়া হবে। সদর হাসপাতালের চলমান কার্যক্রম নিয়ে হাল চিত্র তুলে ধরেন সিভিল সার্জনের প্রতিনিধি ডা. আউিলিয়ার রহমান। তিনি হাসপাতালের লোকবল স্বল্পতার বিষয় জানিয়ে দ্রুত তা পূরণ হবে বলে আশাবাদ ব্যাক্ত করেন। আসন্ন মাহ রমজানে রোজাদারদের বিশেষভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, যেহেতু এবার রোজা হচ্ছে গরমের মধ্যে। শরীরে যাতে পানি স্বল্পতা না হয় সে দিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে। ইফতারিতে অবশ্যই ভাজাপোড়া পরিহার করে ফল এবং পানীয়র ওপর বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। সেহরীতেও পরিমান মত খাওয়া উচিৎ। ডায়াবেটিক রোগী যাদের ইন্স্যুলেন্স নিতে হয় তাদের অবশ্যই নিজ নিজ চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে তা নিতে হবে। নিজের ইচ্ছেমতো নেয়া উচিৎ হবে না। তাছাড়া যারা পেপটিক আলসারে ভুগছেন তারা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রোজা রাখবেন কিনা সিদ্ধান্ত নেবেন। পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি সহকারী পুলিশ সুপার (দামুড়হুদা সার্কেল) বলেন, পবিত্র রমজানে বাড়তি টহলদারি থাকে। এবারও সে লক্ষ্যে আগামা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এরপরও কোথাও কোন সন্দেহভাজন ঘোরাফেরা করতে পুলিশে খবর দিতে হবে। সভায় জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কমকর্তা মিজানুর রহমান, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ জেলার ৪ উপজেলার সকল উপজেলা নির্বাহী অফিসার, শিক্ষা অফিসার, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী, গণপূর্ত অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী, সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী, তথ্য অফিসার, ফায়ার সার্ভিস এ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স’র চুয়াডাঙ্গা স্টেশন মাস্টার, চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব সভাপতি সরদার আল আমিন, সাংবাদিক শাহ আলম সনিসহ অনেকেই উপস্থিত থেকে অভিমত ব্যক্ত করেন।

বক্তাদের মধ্যে উঠে আসে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল সড়ক সম্প্রসারণ প্রসঙ্গ। জেলা শহরের যানজোটমুক্ত করতে রিংরোড করার বিষয়টিকেও গুরুত্ব দেয়া হয়। বলা হয়, চলমান শুষ্ক মরসুমে যাতে অগ্নিকা- না ঘটে সে লক্ষ্যে সকলকে সচেতন করতে হবে। নিজ নিজ আবস্থানে থেকে সর্বাত্মক সতর্কতা অবলম্বনের প্রয়োজন রয়েছে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More