সীমান্তে অবৈধভাবে যাতায়াতই সংক্রমণ বাড়ছে : অধিকাংশ রোগী ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত

স্টাফ রিপোর্টার: ভারত সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ছে। দেশের আটটি বিভাগের অন্যান্য জেলার তুলনায় সীমান্তবর্তী খুলনা, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের বেশকিছু জেলায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাড়ছে মৃত্যুও। স্বাস্থ্য ও রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে বর্তমানে অধিকাংশ রোগী ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হচ্ছেন। দেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলো থেকে ভারতে পাসপোর্ট ছাড়া অবৈধভাবে যাতায়াতকারীদের মাধ্যমে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে। স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে তাদের করোনা নমুনা পরীক্ষা, আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টাইনে আনতে না পারলে সংক্রমণ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় খুলনা বিভাগে এক হাজার ৪৬৬ জনের করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে ৫৪৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়। নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার ৩৭ শতাংশ। রংপুর বিভাগে ৪৪৩ নমুনা পরীক্ষায় ১১৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়। শনাক্তের হার ২৬ শতাংশ। একই সময়ে রাজশাহী বিভাগে চার হাজার ১৩৭ জনের নমুনায় ৬৭৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়। শনাক্তের হার ১৬ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশের আট বিভাগে ৪৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। মোট মৃত্যুর ৫০ শতাংশ অর্থাৎ ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে তিন বিভাগে (খুলনা বিভাগে ছয়জন, রংপুর বিভাগে পাঁচজন এবং রাজশাহীতে ১১ জন)।
সম্প্রতি ৫০টি জিনোম সিকোয়েন্সিং পরীক্ষায় ৪০টি (৮০ শতাংশ) নমুনায় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট, আটটি (১৬ শতাংশ) নমুনায় বিটা ভ্যারিয়েন্ট (সাউথ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট) শনাক্ত হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা থেকে সংগৃহীত ১৭টি নমুনার ১৫টিতে এবং গোপালগঞ্জ জেলা থেকে সংগৃহীত সাতটি নমুনার সবগুলোতে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়। খুলনা শহর থেকে সংগৃহীত তিনটি নমুনার সবগুলোতে এবং ঢাকা শহরের চারটি নমুনার দুটিতে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনা সম্পর্কিত পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, (৮ এপ্রিল থেকে জুন ৮) ৮ এপ্রিল সারাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ছিলো ৬ লাখ ৬৬ হাজার ১৩২ জন ও মৃতের সংখ্যা ছিল ৯ হাজার ৫২১ জন। এক মাস পর ৮ মে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয় ৭ লাখ ৭২ হাজার ১২৭ জন ও মৃতের সংখ্যা হয় ১১ হাজার ৮৭৮ জন এবং সর্বশেষ আজ (৮ জুন) আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে আট লাখ ১৫ হাজার ৮১২ এবং মৃতের সংখ্যা ১২ হাজার ৯১৩ জনে দাঁড়ায়। গত দুই মাসে আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ৪৯ হাজার ৬৮০ জন অর্থাৎ প্রায় দেড় লাখ রোগী বেড়েছে। একই সময়ে মৃতের সংখ্যা বেড়েছে তিন হাজার ৩৯২ জন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ১৯ হাজার ১৬৫টি নমুনা পরীক্ষায় মোট দুই হাজার ৩২২ জন রোগী শনাক্ত হয়। বিভাগওয়ারী দেখা গেছে, ঢাকা বিভাগে নয় হাজার চারটি নমুনা পরীক্ষায় ৫৪৪ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৬০২টি নমুনা পরীক্ষায় ৪৯ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে দুই হাজার ৬৪৩টি নমুনা পরীক্ষায় ২৯১ জন, রাজশাহী বিভাগে চার হাজার ১৩৭টি নমুনা পরীক্ষায় ৬৭৩ জন, রংপুর বিভাগে ৪৪৩টি নমুনা পরীক্ষায় ১১৪ জন, খুলনা বিভাগে এক হাজার ৪৬৬টি নমুনা পরীক্ষায় ৫৪৪ জন, বরিশাল বিভাগে ২৭০টি নমুনা পরীক্ষায় ৩৯ জন এবং সিলেট বিভাগে ৬০০টি নমুনা পরীক্ষায় ৬৯ জন রোগী শনাক্ত হয়।
বিভিন্ন বিভাগের গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগী শনাক্তকৃত জেলাগুলো হলো- ফরিদপুর, নোয়াখালী, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, জয়পুরহাট, দিনাজপুর, যশোর, খুলনা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা।
দেশে গতবছর অর্থাৎ ২০২০ সালের ১৮ মার্চ প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হয়। সর্বশেষ গত ২৪ ঘণ্টায় (গতকাল মেঙ্গলবার ৮ জুন) ৪৪ জনসহ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সর্বমোট ১২ হাজার ৯১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিভাগীয় পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে সর্বোচ্চ ৭৫ শতাংশের বেশি রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
ঢাকা বিভাগে সর্বমোট সাত হাজার ২৪৭ জন (৫৭ দশমিক ১২ শতাংশ) ও চট্টগ্রাম বিভাগে দুই হাজার ৪৭৫ জনের (১৯ দশমিক শূন্য ১৭ শতাংশ) মৃত্যু হয়। অন্য ছয়টি বিভাগের মধ্যে রাজশাহীতে ৭৩৮ জন (পাঁচ দশমিক ৭২ শতাংশ), খুলনায় ৮২৫ জন (ছয় দশমিক শূন্য ৩৯ শতাংশ), বরিশালে ৩৮৯ জন (তিন দশমিক শূন্য ১ শতাংশ), সিলেটে ৪৭৯ জন (তিন দশমিক শূন্য ৭১ শতাংশ), রংপুরে ৪৯৩ জন (তিন দশমিক শূন্য ৮২ শতাংশ) এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ২৬৭ জনের (দুই দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ) মৃত্যু হয়।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও বর্তমানে আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ড. মুশতাক হোসেন বলেন, গত সপ্তাহ পর্যন্ত করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতি মোটামুটি স্থীতিশীল থাকলেও বর্তমানে সংক্রমণ ধীরে ধীরে বাড়ছে। ভারত সীমান্তবর্তী বিভিন্ন জেলার বাসিন্দা ও ওই সকল জেলায় ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন কাজে যাতায়াতকারী মানুষের মধ্যে করোনা শনাক্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন জেলার সঙ্গে প্রতিবেশী ভারতের সীমান্ত রয়েছে। সীমান্তপথে বিশেষ বিবেচনায় বৈধ পাসপোর্টধারী যাত্রী, যারা করোনার নেগেটিভ সনদ নিয়ে ভারত থেকে ফিরছেন তাদের ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে রেখে নমুনা পরীক্ষা করে তবেই ছাড়া হচ্ছে। তবে সীমান্তবর্তী বিভিন্ন জেলায় বৈধ পাসপোর্ট ছাড়াও অবৈধভাবেও বিপুলসংখ্যক লোকজনের যাতায়াত রয়েছে। তাদের অনেকেই ফিরে কোয়ারেন্টাইনে থাকার ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। লক্ষণ ও উপসর্গ না থাকায় তাদের সঙ্গে মিশে অজ্ঞাতসারেই অনেকেই করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। ড. মুশতাক হোসেন বলেন, করোনার সংক্রমণরোধে সরকার সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে লকডাউন, করোনার নমুনা পরীক্ষা ও শনাক্ত এবং বৈধ পাসপোর্ট নিয়ে আসা যাত্রী ও তাদের স্বজনদের কোয়ারেন্টাইনে নেয়াসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তবে পাসপোর্ট ছাড়া অবৈধপথে যারা আসছেন স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে তাদের করোনার পরীক্ষায় উদ্ধুদ্ধ করতে হবে।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More