সুজনসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা : পুলিশের সাথে খুঁজছে এলাকাবাসীও

দর্শনার ঈশ্বরচন্দ্রপুরে ছুরিকাঘাতে নিহত শহিদুলের ময়নাতদন্ত শেষে দাফন সম্পন্ন

দর্শনা অফিস: দর্শনার ঈশ্বরচন্দ্রপুরে ফ্রি-ফায়ার গেম খেলা নিয়ে বিরোধের জেরে ছুরিকাঘাতে নিহত শহিদুলের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল রোববার ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ দাফন সম্পন্ন হয়। এর আগে ময়নাতদন্ত শেষে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ। এদিকে, ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনায় দর্শনা থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। গতকাল রোববার নিহত শহিদুল ইসলামের মেয়ে আমেনা খাতুন বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় প্রধান অভিযুক্ত সুজনসহ ৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। গতরাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এ মামলায় কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তবে শুধু পুলিশই নয়, প্রধান অভিযুক্ত সুজনসহ সকলকে খুঁজছে ঈশ্বরচন্দ্রপুরবাসীও। এদিকে এ ঘটনার পর থেকে সুজনসহ তার পরিবারের সদস্যরা বাড়ি ছেড়ে দিয়েছে গা ঢাকা।
পুলিশ ও এলাকাসূত্রে জানা গেছে, দর্শনা সরকারি কলেজের ছাত্র সুজন ও জাকিরের মধ্যে ছিলো গভীর বন্ধুত্ব। গত শনিবার দুপুর দেড়টার দিকে দর্শনা পৌর শহরের ঈশ্বরচন্দ্রপুর বড় মসজিদপাড়ার আসানুল ইসলামের ছেলে জাকির হোসেন (১৯) ও একইপাড়ার আমজাদ আলীর ছেলে সুজন ফ্রি-ফায়ার গেমস খেলার সময় পাপড় ভাজা খাচ্ছিলো। এ সময় জাকির ও সুজনের মধ্যে বাকবিত-ার ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে সুজনের বাবাকে গলাছিলা ও কান কালা বলে কটাক্ষ করে জাকির। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সুজন দৌঁড়ে তার বাড়ি চলে যায়। এরপর ধারালো ছুরি নিয়ে তার বাবাসহ কয়েকজনকে নিয়ে হামলা চালায় জাকিরের ওপর।
এ সময় একইপাড়ার তাহার আলীর ছেলে শহিদুল ইসলাম ঠেকাতে গেলে তার বুকে স্বজোরে ছুরিকাঘাত করে সুজন। সুজনের ছুরিকাঘাতে আরও রক্তাক্ত জখম হন শহিদুলের ছেলে ইলফাজ (২২), ফরিদ (৩৫) ও জাকির (২০)। তাদের উদ্ধার করে নেয়া হয় হাসপাতালে। তাদের মধ্যে শহিদুলের অবস্থা সঙ্কটাপন্ন হওয়ায় তাকে নেয়া হয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেল ৩টার দিকে শহিদুলের মৃত্যু হয়। আহত অপর ৩ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
গতকাল রোববার দুপুর ১২টার দিকে লাশ আনা হয় নিজবাড়িতে। এ সময় ঈশ্বরচন্দ্রপুর চৌরাস্তার মোড়ে দূর-দূরান্তের মানুষেরও ভিড় জমে। স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে বাতাস। সৃষ্টি হয় শোকাবহ পরিবেশের।
এ সময় উপস্থিত দর্শনা পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান বলেন, অপরাধীর কোনো ক্ষমা নেই। সুজনকে যে যেখানে পাবে সেখান থেকেই ধরে পুলিশে সোপর্দ করতে হবে। এছাড়া সুজনের সংবাদ পাওয়া মাত্রই খবর দিতে হবে পুলিশকে। ওই ওয়ার্ড কাউন্সিলর আশুর উদ্দিন ও সাবেক মেম্বার আব্দুল হান্নানসহ গ্রামের বেশ কয়েকজন গণ্যমান্য ব্যক্তি বলেন, ফ্রি-ফায়ারসহ বিভিন্ন মোবাইল গেমস সমাজে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। লকডাউনের দোহায়ে ছেলে-মেয়েরা পড়ালেখা না করে দিনদিন ঝুকে পড়েছে এ গেমসে। অনেকেই মোবাইল গেমসে আসক্ত হয়ে অপরাধমূলক কর্মকা-েও জড়িয়েছে। তাই এ গেসম বন্ধ করার দাবি তোলা হয়েছে। জোহর বাদ জানাজার নামাজ শেষে ঈশ্বরচন্দ্রপুর গোরস্তানে দাফন করা হয় শহিদুল ইসলামের লাশ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক মাহফুজুর রহমান মঞ্জু, দর্শনা পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান, প্যানেল মেয়র রবিউল হক সুমন, কাউন্সিলর আশুর উদ্দিন, সাবেক কাউন্সিলর মঈনুদ্দিন আহমেদ মন্টু, সাবেক মেম্বার আ. হান্নান। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সকাল থেকেই চৌরাস্তা মোড়ে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। দফায় দফায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন দর্শনা থানার অফিসার ইনচার্জ মাহাব্বুর রহমান কাজল, ইন্সপেক্টর তদন্ত শেখ মাহবুবুর রহমান ও ইন্সপেক্টর অপরেশন আবু সাঈদ।
এ ঘটনায় নিহত শহিদুলের মেয়ে আমেনা খাতুন বাদী হয়ে সুজন সহ ৬ জনের বিরুদ্ধে গতকাল রোববার দর্শনা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর আবু সাঈদ জানান, মামলার বাকি আসামিদের নাম-পরিচয় তদন্তের স্বার্থে গোপন রাখা হচ্ছে। তবে ওসি কাজল জানান, সুজনসহ মামলার অভিযুক্ত আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশি জাল বিস্তার করা হয়েছে। চিরুনি অভিযান রয়েছে অব্যাহত। দ্রুতই গ্রেফতার করা হবে সুজনসহ অভিযুক্ত আসামিদের। এদিকে দিনে দুপুরে প্রকাশ্য খুনের ঘটনায় চরম আতঙ্কে রয়েছে ঈশ্বরচন্দ্রপুরবাসী। বিরাজ করছে থমথমে অবস্থা।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More