স্টাফ রিপোর্টার: স্থলপথে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করেছে ভারত। শুধু ভারতের নব সেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরামে ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশন (এলসিএস)/ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট (আইসিপি) দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাবপত্র রপ্তানি করা যাবে না। পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্ধা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন বা এলসিএসের জন্যও এটি প্রযোজ্য হবে। ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গতকাল শনিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ খবর জানিয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রেও। বাংলাদেশের রপ্তানিকারকেরা বলছেন, ভারতের এই বিধিনিষিধে দেশের রপ্তানি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রায় ১৫৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যই বেশি। এ ছাড়া বিভিন্ন কোম্পানি প্লাস্টিক পণ্য ও আসবাব রপ্তানি করে। অবশ্য বাংলাদেশ থেকে মাছ, তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি), ভোজ্যতেল ও ভাঙা পাথর আমদানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করেনি ভারত। পাশাপাশি ভারতের বন্দর ব্যবহার করে নেপাল ও ভুটানে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ প্রযোজ্য হবে না। পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সহসভাপতি আবদুল্লাহ হিল রাকিব প্রথম আলোকে বলেন, ভারতে স্থলপথে পণ্য রপ্তানি সহজ। তিন দিনের মধ্যে পণ্য রপ্তানি করা যায়। এখন বন্দর ব্যবহার করতে হলে দুই সপ্তাহ লাগবে, যা রপ্তানিতে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমিয়ে দেবে। গত এপ্রিলে ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে নিজ দেশের বন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে বাংলাদেশের পণ্য যাওয়ার ব্যবস্থা প্রত্যাহার করে ভারত। ভারতের সেন্ট্রাল বোর্ড অব ইনডাইরেক্ট ট্যাক্সেস অ্যান্ড কাস্টমস (সিবিআইসি) এ সুবিধা বাতিল করে আদেশ জারি করেছিল। ২০২০ সালের ২৯ জুন এ-সংক্রান্ত এক আদেশে এই সুবিধা দেয়া হয়েছিলো। তখন বাংলাদেশ থেকে তৃতীয় কোনো দেশে পণ্য রপ্তানিতে ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে ভারতের কলকাতা বন্দর, নবসেবা বন্দর ও কলকাতা বিমান কার্গো কমপ্লেক্স ব্যবহার করার সুযোগ দিয়েছিল সিবিআইসি। গত এপ্রিল থেকে সে সুবিধা প্রত্যাহার করে নেয় ভারত। এরপর গত ১৫ এপ্রিল বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) স্থলপথে ভারত থেকে সুতা আমদানি নিষিদ্ধ করে। এখন স্থলবন্দর ব্যবহার করে বাংলাদেশ থেকে পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ভারতীয় আমদানিকারকদের জন্য বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্যসচিব মো. মাহবুবুর রহমান গতরাতে বলেন, ‘দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে সুসম্পর্ক আশা করি বলে বিষয়টিকে আমরা গভীরভাবে দেখছি। এভাবে বিচ্ছিন্নতা বাড়লে উভয় পক্ষেরই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। আমরা এ বিষয়ে ভারতের সঙ্গে দর-কষাকষি করব।’ এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের ব্যাপারে আলোচনা করতে ভারতের ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে কয়েক দিনের মধ্যেই অনুরোধ আসবে বলে মনে করছেন বাণিজ্যসচিব। ভারতীয় পদক্ষেপের পরিপ্রেক্ষিতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এখন কী করবেন? এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্যসচিব বলেন, রোববার অনুষ্ঠেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় এ নিয়ে কথা হতে পারে। বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনসহ কয়েকজন উপদেষ্টা এ নিয়ে আলাদা বৈঠকও করতে পারেন। ভারতে বাংলাদেশ হাইকমিশন সূত্র জানিয়েছে, তারা গতকাল দুপুরের পর এই বিধিনিষেধের খবর পায়। ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। এর আগে ট্রান্সশিপমেন্ট–সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রেও ভারত কিছু জানায়নি।
ভারতের বাজারে বড় রপ্তানিকারকদের একটি বাংলাদেশের প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রায় সব স্থলবন্দর ব্যবহার করে আমরা বিভিন্ন ধরনের পানীয় থেকে শুরু করে কনফেকশনারি সামগ্রী, প্লাস্টিকসহ বিভিন্ন ধরনের সামগ্রী ভারতের বাজারে রপ্তানি করি। ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় স্থলবন্দর ব্যবহার করে এসব সামগ্রী আমদানিতে যে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সেটি কার্যকর হলে আমাদের পণ্য রপ্তানি মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হবে।’
পূর্ববর্তী পোস্ট
মহেশপুর সীমান্তে অবৈধ ভারত থেকে অনুপ্রবেশের দায়ে ২৫ নারী-পুরুষ আটক
পরবর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.