স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে কঠোর অবস্থানে পুলিশ : চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরের বিভিন্ন স্থানে মাস্ক বিতরণ

মাস্ক না পরায় আলমডাঙ্গায় ৩০ যুবককে রোদে বসিয়ে রেখে শাস্তি : চুয়াডাঙ্গায় ২৫ যুবককে দেড়ঘণ্টা আটক রেখে কাউন্সিলিং

স্টাফ রিপোর্টার: মাস্ক না পরা ও মাস্ক পরতে অনীহা প্রকাশে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা করেছে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গায় ২৫ যুবককে দেড়ঘণ্টা আটক রেখে কাউন্সিলিং শেষে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। অপরদিকে আলমডাঙ্গায় মাস্ক না পরায় ৩০ যুবককে প্রচন্ড রোদে আধাঘণ্টা বসিয়ে রেখে শাস্তি দেয়া হয়েছে। সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল আইন ২০১৮ এর কোনো ধারায় অবশ্য এ ধরনের শাস্তির বিধান না থাকলেও মানুষকে সচেতন করতে একটু কঠোর হতে হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এদিকে, এই তাপমাত্রায় এভাবে একটানা ২০-৩০ মিনিট কড়া রোদে বসিয়ে রাখলে বা দাঁড় করিয়ে রাখলে হিটস্ট্রোক, মাথাব্যথা, চর্মরোগসহ বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা তৈরি হতে পারে মনে করেন চিকিৎসকরা। এদিকে চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরের বিভিন্ন স্থানে মাস্ক বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।
চুয়াডাঙ্গায় গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শহরের শহীদ হাসান চত্বর থেকে তাদের আটক করে পুলিশ লাইনে নেয় চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশ। চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবু তারেকের নেতৃত্বে এ অভিযান চালায় সদর থানা পুলিশ।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গায় করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ প্রতিরোধে পুলিশের পক্ষ থেকে সব থানা এলাকায় পথচারীদের মাঝে মাস্ক বিতরণ করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সদর থানা পুলিশ শহীদ হাসান চত্বরে পথচারীদের মাঝে মাস্ক বিতরণ ও জনসচেতনতামূলক প্রচারণা চালান। এ সময় মাস্কবিহীন ও মাস্ক পরিধানে অনিহা প্রকাশের কারণে রাস্তায় চলাচলকারী ২৫ জনকে আটক করে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ লাইন্সে নেয়া হয়। সেখানে দেড়ঘণ্টা আটক রেখে তাদেরকে মাস্ক পরিধানের গুরুত্ব সম্পর্কে অবহিত করা হয়। পরে মাস্ক দিয়ে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ আবু জিহাদ ফকরুল আলম খান বলেন, পুলিশ সুপারের নির্দেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের (প্রশাসন) তত্ত্বাবধানে চুয়াডাঙ্গায় সাধারণ মানুষের মাঝে মাস্ক বিতরণ করে। এ সময় যারা মাস্ক ছাড়া ও মাস্ক পরিধানে অনীহা দেখানোয় রাস্তায় চলাচলকারী ২৫ যুবককে আটক করে পুলিশ লাইনে নেয়া হয়। তাদেরকে দেড়ঘণ্টা আটক রেখে সচেতনামূলক নির্দেশনা ও মাস্ক দেয়া হয়। এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।
আলমডাঙ্গা ব্যুরো জানিয়েছে, আলমডাঙ্গায় স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করে মাস্ক পরিধান না করায় ৩০ যুবককে রোদে বসিয়ে রেখে শাস্তি দিয়েছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে আলমডাঙ্গা থানা চত্বরে তাদের বসিয়ে রেখে শাস্তি দেয়া হয়।
পুলিশ জানায়, জনসাধারণেরর মাঝে সচেতনতা বাড়াতে ও স্বাস্থবিধি মানাতে পুলিশের পক্ষ থেকে প্রতিদিন মাস্ক বিতরণ করা হচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপারের নির্দেশে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশের পক্ষ থেকে পথচারী ও জনসাধারণের মাঝে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে মাস্ক বিতরণ করা হয়। যারা মাস্কবিহীন চলাচল করছে তাদের আটক করে থানা চত্বরে প্রায় ২০ মিনিট রোদে বসিয়ে রাখা হয়। পরে তাদের মাঝে মাস্ক বিতরণ করে ছেড়ে দেয়া হয়। যাদের মুখে মাস্ক নেই কেবল তাদেরকেই শাস্তির মুখে পড়তে হয়েছে।
এদিকে, সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮ এর কোনো ধারায় অবশ্য এ ধরনের শাস্তির বিধান পাওয়া যায়নি। এ আইনের ২৪(১) ধারায় ‘সংক্রামক রোগের বিস্তার এবং তথ্যগোপন’ এর অপরাধের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি সংক্রামক জীবাণুর বিস্তার ঘটান বা বিস্তার ঘটিতে সহায়তা করেন বা জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও অপর কোনো ব্যক্তি সংক্রমিত ব্যক্তি বা স্থাপনার সংস্পর্শে আসিবার সময় সংক্রমণের ঝুঁকির বিষয়টি তাহার নিকট গোপন করেন তাহলে ওই ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হবে একটি অপরাধ।’ এই অপরাধের দ- হিসেবে ২৪ (২) ধারায় বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনূর্ধ্ব ৬ (ছয়) মাস কারাদ-ে, বা অনূর্ধ্ব ১ (এক) লক্ষ টাকা অর্থদ-ে, বা উভয় দ-ে দ-িত হইবেন।’
মাস্ক পরিধান না করলে অর্থদ- বা কারাদ-ের বিধান থাকলেও সেটি কেন অনুসরণ করা হয়নি, এমন প্রশ্নের জবাবে আলমডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর কবীর বলেন, ‘পুলিশ সুপারের নির্দেশে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে একটু কঠোর হতে হচ্ছে। আমরা মাইকিং করে মানুষকে সচেতন করছি। মাস্ক দিচ্ছি। যারা মাস্কবিহীন রাস্তায় চলাচল করছেন কেবল তাদেরকেই শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে। পরে সচেতনতামূলক নির্দেশনা দিয়ে ও মাস্ক দিয়ে তাদের ছেড়ে দেয়া হচ্ছে।’
একই প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) জাহাঙ্গীর আলম জানান, আমরা কেবলমাত্র মানুষকে সচেতন করতে কাজ করছি। এখানে আইনের কোনো প্রয়োগ করা হয়নি। মাস্ক না পরার অপরাধে যাদেরকে থানা চত্বরে বসিয়ে রাখা হয়েছিলো তাদেরকে মাস্ক দিয়ে সতর্ক করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার বলেন, স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করলে শারীরিক বা মানসিকভাবে কাউকে শাস্তি দিতে হবে এমন বিধান নেই। আইনের কোথাও এমনটা বলা হয়নি। তবে, পুলিশ ভালোর জন্য হয়তো কাজটি করেছে।
চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. এএসএম মারুফ হাসান জানান, এই তাপমাত্রায় মানুষকে একটানা ২০-৩০ মিনিট কড়া রোদে বসিয়ে রাখলে বা দাঁড় করিয়ে রাখলে হিটস্ট্রোক, মাথাব্যথা, চর্মরোগসহ বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে। একেক জনের জন্য একেক রকম উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
দামুড়হুদা অফিস জানিয়েছে, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় করোনার দ্বিতীয় ঢেউ প্রতিরোধে মাস্ক বিতরণ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে দামুড়হুদা, মডেল থানা, দর্শনা ও জীবননগর থানার দায়িত্বে থাকা সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আবু রাসেলের উদ্যোগে সচেতনার লক্ষ্যে দামুড়হুদা বাসস্ট্যান্ড এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় পথচারী মোটরসাইকেল চালক, পাখিভ্যান, ইজিবাইকসহ বিভিন্ন যানবাহন চালকদের মুখে মাস্ক পরিয়ে দেন দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি আব্দুল খালেক, ওসি (অপারেশন) দোহা, থানার সেকেন্ড অফিসার এস আই বাকী বিল্লা। এ সময় দামুড়হুদা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল খালেক স্বাস্থ্যবিধি মেনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলার আহ্বান জানান। সকলকে সর্তক করে বলেন, আজ সকলকে মৌখিকভাবে সর্তক করা হচ্ছে। আগামীতে কেউ মাস্কবিহীন চলাচলকারীদের আর্থিক জরিমানা করা হবে।
কার্পাসডাঙ্গা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দামুড়হুদা উপজেলার দামুড়হুদা থানা পুলিশের কার্পাসডাঙ্গায় মাস্ক বিতরণ ও সচেতনামূলক প্রচারণা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টার দিকে মডেল থানার ওসি আব্দুল খালেকের নেতৃত্বে থানা পুলিশের একটি দল কার্পাসডাঙ্গা বাজারের বিভিন্ন স্থানে পথচারী ও স্থানীয়দের মাঝে করোনা প্রতিরোধে মাস্ক বিতরণ ও সচেতনামূলক প্রচারণা চালায়। ওসি আব্দুল খালেক বলেন, অযথা ঘরের বাইরে বের না হওয়ার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়। একইসাথে সকলকে মাস্ক ব্যবহার করার জন্য আহ্বান জানানো হয়। মুখে মাস্ক না ব্যবহার করার কারণে ১১ জনকে কার্পাসডাঙ্গা পুলিশ ফাঁড়িতে ১ ঘণ্টা আটক করে রাখা হয়। পরে তাদের মাঝে মাস্ক বিতরণ করাসহ সচেতনামূলক প্রচারণা দেয়ার পরে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন ওসি অপারেশন মো. সামছুজ্জোহা, এস আাই আতিকুর রহমান জুয়েল, এএসআই জাহিদুল ইসলামসহ পুলিশ সদস্যরা।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More