স্বেচ্ছাসেবকদের স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধে কমিটি গঠনসহ বিলম্বে পৌছুনো চিকিৎসকদের কারণ দর্শানো নোটিশ 

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা : সকলকে সেবার ব্রত নিয়ে কাজ করার পুনঃ তাগিদ দিলেন ছেলুন জোয়ার্দ্দার এমপি

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির পূর্ব নির্ধারিত ১৪তম সভার দিনেও অফিসিয়াল সময়ের ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট পর্যন্ত হাসপাতালে যেসকল চিকিৎসক উপস্থিত হননি; তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সন্তোষজনক কারণ দর্শাতে না পারলে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

গতকাল বুধবার সকাল ৮টায় হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের সম্মেলন কক্ষে কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এছাড়া হাসপাতালে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি স্বেচ্ছাসেবক রয়েছে। স্বেচ্ছাবেকদের কাজ পর্যবেক্ষণসহ প্রয়োজনীয় সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক নিযুক্ত রেখে বহিরাগতদের উৎপাত বন্ধে শক্তিশালী একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি যাচাই বাছাই ছাটাইসহ নিযুক্তকরণের সার্বিক দায়িত্ব পালন করবে। অপরদিকে পুরাতন ভবন থেকে নতুন ভবনে মেডিসিন ও শিশু ওয়ার্ড স্থানান্তর করে রোগীর দুর্ভোগ লাঘব করারও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে গতকালের সভায়। সভায় বলা হয়েছে, হাসপাতালের আন্তঃ বিভাগ ও বর্হিবিভাগের কর্তব্যরতরা অফিসিয়াল সময় মেনে সুচিকিৎসা দিচ্ছেন কি-না তাও পর্যবেক্ষণ করা জরুরী হয়ে পড়েছে। কোভিড-১৯’র চূড়ান্ত সংক্রমণের সময় উত্থাপিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে গঠিত তদন্ত কমিটি এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন উপস্থাপন করবে বলেও সভায় বিশেষভাবে জানানো হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার দৃঢ়তার সাথে বলেছেন, যখন যেটা বলা হয়, তখন সেটা করা হয় এরপরও হাসপাতালে কর্তব্যরতদের মধ্যে কেউ কেউ দায়িত্বে অবহেলা করে চলেছেন। এতে দূর দূরান্ত থেকে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা অনেকেই প্রত্যাশিত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। চিকিৎসা সেবার মতো মহৎ পেশায় নিয়োজিতদের নিকট থেকে এটা আশা করা যায় না। মেনেও নেয়া যায় না। যে ক’জন দায়িত্ব পালন করছেন তাদের ওপর ভর করে কর্তব্য অবহেলাকারীরা পার পাচ্ছেন। এটা হবে কেনো? বিবেকের তাড়নায় হলেও চুয়াডাঙ্গায় স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়াতে সকলকে আন্তরিক হতে হবে। লোকবল সঙ্কট নিরসনে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাব নেই। সরকার ওষুধ পথ্য পর্যাপ্ত দিচ্ছে। সম্মিলিতভাবে আন্তরিকতার সাথে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করার মধ্য দিয়ে চুয়াডাঙ্গায় সেবার মান প্রত্যাশিত পর্যায়ে নেয়া অসম্ভব নয়।

সভার সভাপতি গুরুত্বের সাথে বলেন, সভায় সিদ্ধান্ত নিলেই হবে না। যথযথভাবে তা প্রতিপালন করতে হবে। সভার সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা জরুরী হয়ে পড়েছে। হাসপাতাল সড়কটি অবশ্যই একমুখি করতে হবে। সড়কের প্রশস্ততা বাড়ানোর লক্ষ্যে যা যা করনীয় তা করতে হবে। সড়ক সংস্কারও করা জরুরী। পৌরসভাকে এদিকে বিশেষ নজর দেয়া দরকার। হাসপাতাল এমন একটি স্থান যেখানে যে কোনো সময় যে কোনো ব্যক্তিকে জরুরীভাবে আসতে হতে পারে। ফলে এদিকে বিশেষ নজর দিয়ে চিকিৎসা নিতে আসা মানুষগুলোর দুর্ভোগ-হয়রানী লাঘবে সংশ্লিষ্ট সকলের সচেষ্ট হওয়া নৈতিক দায়িত্ব। তাছাড়া হাসপাতালের একজন চিকিৎসক কীভাবে একজন অধিনস্থ কর্মচারীকে লাঞ্ছিত করেন তা খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। একজন চিকিৎসকের ঔদ্ধতপূর্ণ আচরণ আশা করা যায় না। মেনে নেয়াও উচিৎ হবে না। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য লোকবল লাগবে বলা হয়েছিলো। দেয়া হয়েছে। ব্লাড ব্যাংক দিন রাত ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার জন্য দুজনকে চাওয়া হয়েছিলো। দেয়া হয়েছে। পয়ঃনিষ্কাষন ব্যবস্থার উন্নতি করতে গণপূর্ত বিভাগ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। তার আগে যা করলে পরিষ্কার পরিছন্ন থাকে তা করতে হবে। সকলে আন্তরিক হলে স্বল্প লোকেও অনেক কিছু করে দেখানো যায়। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য একটি কক্ষ বরাদ্দ দেয়া হোক। ওই কক্ষে যা যা প্রয়োজন তার সবই দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেয়া হবে। ওই কক্ষে নির্ধারিত বেডে শুধুমাত্র মুক্তিযোদ্ধাদেরই রেখে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দিতে হবে। স্বেচ্ছাবেকদের স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ করতে হবে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত রাখার যেমন দরকার নেই, তেমনই অদক্ষ অর্থলিপ্সুদের হাসপাতালে স্থান নেই। গঠিত কমিটি এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। হাসপাতালে পরীক্ষা নিরীক্ষার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রয়েছে। সরকার নির্ধারিত অল্প খরচে রোগী সাধারণ যাতে ডায়াগণস্টিক করতে পারে তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি ব্যাংকে নয়, একটি কাউন্টার বা একস্থান থেকে রশিদের মাধ্যমে টাকা গ্রহণ করতে হবে। রশিদ ছাড়া কোনো ব্যক্তি একটি টাকাও কাউকে দেবেন না। এ বিষয়ে দেয়াল লেখনও লাগাতে হবে।

সভায় উপস্থিত থেকে গুরুত্বপূর্ণ মতামতসহ বক্তব্য রাখেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান, পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন, সিভিল সার্জন ডা. সাজ্জাত হোসেন, পৌর মেয়র জাহাঙ্গীর আলম মালিক খোকন, গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী, চুয়াডাঙ্গা বিএমএ সভাপতি মার্টিন হীরক চৌধুরী, সিনিয়র কনসালটেন্ট সার্জারি ডা. ওয়ারিউর রহমান নয়ন, বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরুল ইসলাম মালিক, চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব সভাপতি সরদার আল আমিন, এ্যাপেক্স ক্লাবের চুয়াডাঙ্গা সভাপতি আব্দুর রশিদ প্রমুখ। বক্তব্যে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান বলেন, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবার মান নিশ্চিত করতে কমিটির সভাপতি জাতীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন ব্যক্তিগতভাবে যে অবদান রাখছেন তা বিরল। প্রশংসার দাবি রাখে। সংসদ সদস্য যেভাবে আন্তরিকতার সাথে দিক নির্দেশনা দিয়ে হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পুনঃ পুনঃ আহ্বান জানিয়ে আসছেন তাতে সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক হওয়া প্রয়োজন রয়েছে। আমরা যারা প্রশাসনে কর্মরত তাদের যেমন সবসময়ই প্রস্তুত থাকতে হয় তেমনই চিকিৎসকের মতো মহান পেশায় যারা রয়েছেন তারা তো সেবার ব্রত নিয়েই রয়েছেন তাদের আরও বেশি নিবেদিত হওয়ার বিকল্প নেই। আমাদের সরকার স্বাস্থ্যখাতকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে বরাদ্দও বেশি দিচ্ছে। বিশে^র অনেক দেশে যখন ভ্যাকসিন কিনতে হয়েছে তখন আমাদের দেশে বিনামূল্যে ব্যপক প্রচার প্রচারণা চালিয়ে করোনা প্রতিরোধক দিয়েছে। এ জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশে বিদেশে প্রশংসনীয় হয়েছেন, হচ্ছেন। আমাদের সদিচ্ছা দিয়ে সকল প্রতিকূলতাকে দূরে সরিয়ে স্বস্তির সুন্দর সমাজ গঠনে অবদান রাখতে হবে। সভায় পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, হাসপাতাল সড়ক একমুখিকরণে ট্রাফিক পুলিশ ও সদর থানা পুলিশ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। ইতোমধ্যেই সংশ্লিষ্টদের নিকট নির্দেশনা পৌঁছে দেয়া হয়েছে। সিভিল সার্জন সাজ্জাত হোসেন বলেন, হাসপাতালে কর্মরত সকলে যদি যথাযথ সময়ে উপস্থিত হন, যথাসময়ে প্রস্থান করেন তাহলে সেবার পরিমান অবশ্যই বাড়বে। এটা নিশ্চিত করতে হাসপাতালের তত্বাবধায়কের সিদ্ধান্তকেই চূড়ান্ত বলে বিবেচনা করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট তা প্রেরণের ব্যবস্থা নেয়া হবে। সরকারি চাকরি করে সরকারি নিদের্শনা মোতাবেক দায়িত্বপালনে গড়িমশিও দুর্নীতি। এটা মেনে নেয়া হবে না। ফলে সকলকে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানাচ্ছি।

কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আতাউর রহমান। গত সভার তথা ১৩তম সভার কার্যবিবরণী উপস্থাপন করেন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. ফাতেহ আকরাম দোলন। সভায় কমিটির সদস্যদের মধ্যে মহিলা কাউন্সিলর সুলতান আরা রত্মা, নাসিং প্রতিনিধি মোছা. ফেরদৌস আরা খাতুন রোকেয়াসহ অধিকাংশই উপস্থিত থেকে গুরুত্বপূর্ণ অভিমত পোষণ করেন। সভা শেষে সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন উপস্থিত ডিসি, এসপিসহ সকলকে সাথে নিয়ে হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ড পরিদর্শন করেন। এ সময় গাইনী কনসালটেন্ট ডা. আকলিমা খাতুন ওয়ার্ডের সুবিধা অসুবিধার বর্ণনা করেন। পরে সিভিল সার্জন কার্যালয়েও সংক্ষিপ্ত মতবিনিময়ে মিলিত হন।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More