মালয়েশিয়া প্রবাসে ৭০ বাংলাদেশি শ্রমিকের বেতনের ২ কোটি টাকা আত্মসাৎ

৫ মাস সময় নিয়ে গাঢাকায় প্রতারক সেলিম : সালিসেও পাওনা উদ্ধার না হওয়ার শঙ্কা

মেহেরপুর অফিস: মালয়েশিয়া প্রবাসে এলাকার ৪৩ জন বাংলাদেশি শ্রমিকের বেতন বাবদ এক কোটি ১০ লাখ টাকা তুলে আত্মসাৎ করেছে সেলিম হোসেন (৩৮) নামের এক প্রতারক। প্রতারক সেলিম হোসেন মেহেরপুর সদর উপজেলার আমদহ ইউনিয়নের আশরাফপুর গ্রামের সুঁড়িপাড়ার সোহরাব হোসেনের ছেলে। এ ঘটনায় আশরাফপুর গ্রামে এক গ্রাম্য সালিসে সোহবার হোসেন আগামী ৬ মাসের মধ্যে টাকা ফেরত দেয়ার আশ^াস দিয়ে ডিডে স্বাক্ষর দিলেও টাকা ফেরত পাবেন কিনা তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দে রয়েছেন পাওনাদার ও তার স্বজনরা।
মেহেরপুর সদর উপজেলার আশরাফপুর গ্রামের রশিদ আলী খাঁর ছেলে সোহরাব খাঁ (৩৪)। ৭ বছর আগে তিনি বাবার জমি-জায়গা বিক্রি ও ধার দেনা করে চাকরি নামের সোনার হরিণ ধরতে মালয়েশিয়া যান। সোহবার খাঁন এক বছর আগে ব্রড গ্রোজ মনিটরিং চায়না (বিজিএমসি) কোম্পানিতে চাকরি নেন। ওই কোম্পানিতে সুপার ভাইজার হিসেবে কর্মরত মালয়েশিয়া প্রবাসী আশরাফপুর গ্রামের প্রতারক সেলিম হোসেন। সেলিম হোসেনের অধীনে কাজ করেন আশরাফপুর গ্রামের ১৩ জনসহ মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, যশোর, সাতক্ষীরা, নড়াইল, মাদারীপুর, পটুয়াখলী ও কুমিল্লা জেলাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার মোট ৭০ জন বাংলাদেশি। ভূক্তভোগী ৭০ জনের বেতন বাবদ পাওনা ২ কোটিরও অধিক টাকা আত্মসাৎ করে গাঢাকা দিয়েছে প্রতারক সেলিম হোসেন।
মালয়েশিয়া থেকে সোহরাব খাঁ জানান, মহামারী করোনা ভাইরাসে লকডাউনে কোম্পানির সুপার ভাইজার সুবাদে সেলিম হোসেন চলতি বছরের মে মাসের ১১ তারিখে কোম্পানির শ্রমিকদের বেতন বাবদ ৪ লাখ ৪১ হাজার ৮শ’ রিঙ্গিত তুলে নেয়। কিন্তু শ্রমিকদের বেতন না দিয়ে সে টাকা আত্মসাৎ করে সেলিম। এর আগেও সে শ্রমিকদের বেতন দেয়ার নামে একাধিকবার মোটা অঙ্কের রিঙ্গিত তুলে আত্মসাৎ করে। অর্থ আত্মসাতের পর লকডাউন থাকায় সেলিম হোসেন মালয়েশিয়ায় পালিয়ে আছে। গত ১৫ জুন কর্মস্থল থেকে প্রায় ৫০ মাইল দূর থেকে পাওনাদাররা তাকে খুঁজে আনেন এবং তাদের বেতন পরিশোধের কথা বললে সে ১৭ জুন তারিখে পাওনা পরিশোধ করবে বলে জানায়। ওই দিনও পাওনা পারিশ্রমিক দিতে না পেরে আগামী ৫ মাসের মধ্যে সকলের পাওনা পরিশোধ করবে বলে জানায় সেলিম হোসেন।
মেহেরপুরের আশরাফপুর গ্রামের রশিদ আলী খাঁ জানান, তার ছেলের পাওনা ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা, একই গ্রামের মৃত আওলাদের ছেলে মো. জামালের ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, গাংনীর খাসমহল গ্রামের ফকির ম-লের ছেলে আসাদুলের ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা, ঝিনাইদহের সিরাজুল ইসলামের ছেলে শামিনের ২ লাখ ৩৯ হাজার টাকা, আশরাফপুর গ্রামের ইয়াস নবীর ছেলে বাচ্চুর ২ লাখ টাকা বেতন বাবদ পাওনা রয়েছে সেলিম হোসেনের কাছে। এভাবে এ পর্যন্ত ৪৩ জন মালয়েশিয়া প্রবাসী বাংলাদেশির পাওনা প্রায় এক কোটি ১০ লাখ টাকা। পাওনা পরিশোধের দাবি তুলে ওই ৪৩ জনের স্বজনরা আশরাফপুর গ্রামের প্রতারক সেলিম হোসেনের বাবা সোহরাব হোসেনের সাথে দেনদরবার করেন। এ নিয়ে গত শুক্রবার বিকেলে আশরাফপুর গ্রামের কালু মিস্ত্রির কারখানাপাড়ার বটতলায় গ্রাম্য সালিস বসে।
সালিস সভায় উপস্থিত ছিলেন আমদহ ইউপি চেয়ারম্যান আনারুল ইসলামের ছেলে মেহেরপুর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বারিকুল ইসলাম লিজন, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ঝন্টু হালসানা, সাধারণ সম্পাদক জিয়া, সহসম্পাদক ইজারুল গাইন প্রমুখ। ওই সালিসে পাওনা টাকা পরিশোধের কথা বলে বাবা সোহরাব হোসেন ৬ মাসের সময় চান এবং তিনশ’ টাকার ডিডে স্বাক্ষর করেন। তবে পিতা সোহরাব হোসেন পরে জানান তার মাত্র ৬ বিঘা জমি আছে। যা বিক্রি করে সর্বোচ্চ ৩০ লাখ থেকে ৩৬ লাখ টাকা পাবো। আমি কিভাবে টাকা পরিশোধ করবো? এ খবরে পরিশ্রমের টাকা না পাওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন পাওনাদাররা।
তবে স্থানীয়রা জানান, সেলিম হোসেন প্রায় ২২ বছর ধরে প্রবাসী। প্রথমে তিনি ৮ বছর সৌদিতে পরে ১৪ বছর ধরে মালয়েশিয়া অবস্থান করছেন। তিনি তার মামতো বোন শিবপুর গ্রামের মনিহার বেগমকে বিয়ে করেছে। এক সন্তানের জননী মনিহার বেগম জামায়াত ইসলামীর একজন রোকন। তিনি কেদারগঞ্জ বাজার এলাকায় ৫ কাঠা জমি কিনেছেন। মেহেরপুর সরকারি কলেজপাড়ায় আরও ১০ কাঠা জমি কেনার পাঁয়তারা করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় আরও অনেকে বলেছেন- মনিহার বেগম এলাকার ২৬ ঘরে ৫ হাজার টাকা এবং ২৪ ঘরকে ১০ হাজার টাকা করে সুদ প্রদান করেছেন। এরপরও ভূক্তভোগী ওই মালয়েশিয়া প্রবাসী বাংলাদেশি পাওনাদার ৭০ জন যদি তাদের পাওনা টাকা না পান তবে তা হবে খুবই দুঃখজনক।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More