বন্ধুদের লাগাতার আড্ডায় চুয়াডাঙ্গায় প্রতীত সংগঠন পেলো পূর্ণতা

মাছ মাংশ পুড়িয়ে ধোয়াটে স্বাদে খাওয়া আর ফুটবল খেলে আয়োশি গা ব্যাথা করার খেয়ালি কর্মসূচি

বিশেষ প্রতিনিধি: বন্ধু…..উ.. বলে গলাফাটিয়ে ডেকে কাছে বসিয়ে দু’দণ্ড গপ্পে মাতলেই পালিয়ে যায় জীবন সংগ্রামের বহু কষ্ট। আর বন্ধুরা যখন বহুদিন পর জমিয়ে আড্ডায় মাতে তখন? দুনিয়াদারিই থাকে না তাদের কাছে। টানা ৩ দিন ধরে একদল বন্ধু মেতে ছিলেন বন্ধুত্বের রকমারি আয়োজন নিয়ে। চুয়াডাঙ্গার এসএসসি ’৮৬? নাকি এর ভিত্তিতে গড়া বন্ধু সংগঠন প্রতীত? বন্ধুত্বে নাম-ধাম, ধনি-গরিব, জাত-পাত মানে নাকি? যে যেভাবেই দেখুক, যে নামেই ডাকুক- দু’বছর আগে বন্ধু আহমেদ দানিয়েল ইসলামের উৎসাহে গড়ে ওঠা বন্ধু সংগঠনের ভ্রণ এবারের ফাগুনে তিন দিনের লাগাতার আড্ডায় পেয়েছে পূর্ণতা।
বন্ধুদের লাগাতার কর্মসূচিতে যেমন ছিলো বার্বিকিউ পার্টি, তেমনই ছিলো ফুটবল খেলে আয়েশি গা ব্যথা করার সৌখিনতা। শখের বহর যতোই হোক, কখনো মুজিবনগর, কখনো নীল কুঠি, কখনও চুয়াডাঙ্গার মনোরম স্থানগুলোতে আড্ডা জমিয়ে আলোকিত করে রেখেছিলেন এই বন্ধুরা। সকলকে এক জায়গায় হতে হবে, সব কাজ বাদ দিয়ে বসতে হবে আড্ডায় এ তাগিদ কিছুদিন ধরেই দিয়ে আসছিলেন লে. কর্নেল আহমেদ দানিয়েল ইসলাম ও ভিজে উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮৬ ব্যাচের ফার্সট বয় রংধনুর পরিচালক আব্দুস সালামসহ ক্লাসমেটদের প্রায় সকলে। দিনে বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন, সন্ধ্যায় আড্ডা। ফাঁকে ফাঁকে ফুটবলে কিক। বল কুড়িয়ে হাপিয়ে দুঃশালা বলে দীর্ঘশ^াস ছাড়ার মধ্যেও যে স্বর্গীয় সুখ লুকিয়ে ছিলো, আড্ডার আগে বোঝেননি কেউ। কয়লার আগুনে পুুড়িয়ে ধোয়াটে স্বাদের মাছ মাংস খাওয়ার মজাটা যেমন নিয়েছেন বন্ধুরা, তেমনই গায়ে গা ঘেসে সকলেই নিয়েছেন একে অন্যের শরীরের উষ্ণতা। বিদ্যালয়ের বেঞ্চে বসে কার গায়ে কেমন গন্ধ ছিলো তাও উঠে এসেছে প্রাণখোলা আড্ডায়। কেউ কেউ মনের অজান্তেই গেয়ে উঠেছেন, ‘পুরান সেই দিনের কথা ভুলবি কিরে হায়, ও সেই চোখের দেখা প্রাণের কথা, সে কি ভোলা যায়…..।’
১৯ থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাত পর্যন্ত প্রতীত নামের বন্ধু সংগঠনের বন্ধুদের মেতে থাকার বিষয়টি বিরল না হলেও অনন্য উদাহরণ। আগামীতে এই সংগঠনের মাধ্যমে সেবামুলক নানা কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষে প্রণয়ন করা হয়েছে গঠনতন্ত্র। ৩ দিনের এক রাতে তা অনুমোদনও করা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে একটি কমিটিও। সালাহ উদ্দীন, আসাদ উল্লাহ আহমেদ, আরিফুজ্জামান পিণ্টু, রাজিবুল হাসান নিপ্নন, সরদার আল আমিন, তালাত মাহমুদ শিমুল, সাহেদ সালাম, সাজ্জাতুল আলম রাজু, আহমেদ দানিয়েল ইসলাম, সৈয়দ শরিফুল আলম বিলাশ, খন্দকার শামীম মাহমুদ রানা, খন্দকার রাহায়ত হোসেন তুষার, ইকরামুল ইসলাম আবীর, আব্দুস সালাম, তালিম হোসেন, পলাশ কুমার আগরওলা, সৈয়দ মামুন আহমেদ তমাল, ফজলে রাব্বি সাগর, এএনএ আশিফ, রফিকুল ইসলাম ফিট্টু, আবু সাঈদ বিটু ও শাহাবুদ্দিন রুবেলসহ অনেকেই আড্ডায় শামিল হন। উপস্থিত সকলের মধ্য থেকেই সংগঠনকে গতিশীল করার তাগিদ ওঠে। আব্দুস সালামকে সভাপতি, সরদার আল আমিনকে সহ সভাপতি, পলাশ কুমার আগারওলাকে সাদারন সম্পাদক, ফজলে রাব্বি সাগরকে যুগ্ম সাধারন সম্পাদক, সাজ্জাতুল অলম রাজুকে কোষাধ্যক্ষ, শাহাবুদ্দিন রুবেলকে দপ্তর সম্পাদক, তালিম হোসেকে আইন বিষয়ক এবং আবু সাঈদ বিটু, তালাত মাহমুদ শিমলু, এএনএম আশিফ, রাজিবুল হাসনাত নিপ্নক ও সাহেদ সালামকে কার্যকরি সদস্য করে গঠিত কমিটিকে ১ বছরে মেয়াদ দেয়া হয়। বলা হয়, এ কমিটি তহবিল গঠনসহ বার্ষিক সাধারন সভা সফল করার লক্ষেই শুধু কাজ করবে না, বন্ধুরা যে যেখানেই থাকুক, সকলকে খুঁজে এক সামিয়নার নিচে আনতে হবে। শুধু কমিটি নয়, সকল সদস্যই নিজ নিজ অবস্থানে থেকে সংগঠনের কার্যক্রমকে গতিশীল করার সার্বিক দায়িত্বও পালন করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন উপস্থিত সকলে।
প্রসঙ্গত: চুয়াডাঙ্গা ভিজে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৮৬ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হওয়াদের নিয়েই প্রথমে বন্ধু সংগঠনের সূত্রপাত ঘটে। পরবর্তিতে পরিধি বাড়িয়ে চুয়াডাঙ্গার ৮৬ ব্যাচ করা হয়। যদিও প্রতীত নামকরণের মধ্য দিয়ে অরাজনৈতিক স্বেচ্ছাসেবী বন্ধু সংগঠন গড়ে তোলায় ওই ব্যাচের বৃত্তে আর বন্ধি রাখা হয়নি গঠনতন্ত্রে। বলা হয়েছে, যারা বন্ধু তাদের সকলেই প্রতীত’র সদস্য হয়ে সুন্দর সমাজ গঠনে অংশ নেয়ার সুযোগ পাবে। প্রতীতও থাকবে সকল সদস্যের পাশে। দুঃসময়ে দূরে নয়, বন্ধুদের সব সময়ই সকলকে থাকতে হবে সকলের পাশে। এ কারণে সংগঠনের নামকরণ করা হয়েছে প্রতীত। যার অর্থ প্রত্যয়, বিশ্বাস।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ
1 টি মন্তব্য
  1. parvezsazzadsumon@gmail.com বলেছেন

    প্রতিদিন ‘দৈনিক মাথাভাংগা’ পত্রিকার ই ভার্সন পড়তে চাই।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More