খুনের পর লাশ গুম হওয়া রাকিবকে ৫ বছর পর জীবিত উদ্ধার

গাংনীতে জামাই হত্যার অভিযোগে শ্বশুরকুলের লোকজন আসামি
গাংনী প্রতিনিধি: মৃত্যুর ৫ বছর রকিবুজ্জামান রিপন নামের এক ব্যক্তিকে জীবিত উদ্ধার করেছে পুলিশ। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কুষ্টিয়ার একটি দল গাজীপুর থেকে তাকে উদ্ধার করেছে। রকিবুজ্জামানকে অপহরণ ও খুন গুম করার অভিযোগে তার পিতা মামলার করেছিলেন শ^শুর ও তার লোকজনের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। উদ্ধার হওয়া রকিবুজ্জামান রিপন (৩০) মেহেরপুর সদর উপজেলার গোভীপুর গ্রামের দত্তপাড়ার মনিরুল ইসলামের ছেলে। ২০১৭ সালে গাংনী উপজেলার ভরাট গ্রামে শ^শুরবাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হন রিপন। রিপনকে গতকাল মঙ্গলবার মেহেরপুর আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে বলে জানান পিবিআই কর্মকর্তা।
পিবিআই কুষ্টিয়ার পরিদর্শক মনিরুজ্জামান জানান, রকিবুজ্জামান রিপন গাংনীর ভরাট গ্রামের আকবর হোসেনের মেয়ে শ্যামলী খাতুনকে বিয়ে করে ঘরজামাই হিসেবে বসবাস করছিলো। তাদের ঘরে একটি পুত্র সন্তান জন্ম নেয়। স্বামী স্ত্রীর মধ্যে কলহ শুরু হওয়ায় ২০১৭ সালের ৮ জুলাই নিরুদ্দেশ হন রকিবুজ্জামান রিপন। রিপনের বাবা মনিরুল ইসলাম বাদী হয়ে মেহেরপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলা করেন। মামলায় তিনি ছেলেকে খুনের পর লাশ গুম করার অভিযোগ আনেন। মামলায় রাকিবের শ্বশুর বাদশা মিয়া, শাশুড়ি সফিরন খাতুন, চাচাশ্বশুর হারেজ আলী ও স্ত্রী শ্যামলী খাতুনকে আসামি করা হয়। আদালত মামলাটি গাংনী থানার পুলিশকে তদন্ত করার নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশনায় সদর থানা পুলিশ দীর্ঘদিন তদন্ত করে রিপনকে জীবিত অথবা মৃত কোনোভাবেই উদ্ধার করতে না পেরে বিজ্ঞ আদালতে চুড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করেন। পরবর্তীতে বিজ্ঞ আদালত থানা পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন গ্রহণ না করে পুলিশ সুপার, পিবিআই কুষ্টিয়াকে তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশনা পেয়ে পিবিআই কুষ্টিয়ার পুলিশ তদন্ত শুরু করেন এবং সোর্স নিয়োগ করে খুঁজতে থাকেন রিপনকে। কয়েকদফা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় রিপনের পরিবার ও শশুরবাড়ির লোকজনকে। অবশেষে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রিপনের জীবিত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হন এবং গাজীপুর জেলার শ্রীপুর থানাধীন রাজেন্দ্রপুর এলাকায় ডার্ড কম্পোজিট টেক্সটাইল লিমিটেডে চাকরি করছেন মর্মে নিশ্চিত হয় পিবিআই। গত ২০ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ইন্সপেক্টর মনিরুজ্জামানসহ একটি টিম ওই টেক্সটাইল মিলের সামনে অবস্থান নিয়ে রিপনকে উদ্ধার করে। রিপনের প্রাথমিক জবানবন্দী শেষে মঙ্গলবার মেহেরপুরের বিজ্ঞ আদালতে পাঠানো হয়।
পিবিআই পরিদর্শক আরও জানান, ভিকটিম রিপন কৌশলে মো. শরিফুল ইসলাম ছদ্মনাম ধারণ করে গাজীপুর শ্রীপুরে অবস্থান করে। সেখানে ডার্ড কম্পোজিট টেক্সটাইল লিমিটেডে টেকনিশিয়ান পদে চাকরি নেন এবং গত বছর মার্চ মাসে গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ থানার মনমথ কুঠিপাড়ার সিরাজুল ইসলামের মেয়ে শিমলা আক্তারকে (২০) জামালপুরের সরিষাবাড়ি একটি কাজি অফিসে বিয়ে করেন। ওই ঘরেও একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। যার বয়স মাত্র ৬ মাস।
এদিকে রিপনের উদ্ধারের স্বস্তি নেমে এসেছে পিতা ও শশুর বাড়ির লোকজনের মাঝে। রিপনের পিতার দায়ের করা মামলায় রিপনকে আদালতে সোপর্দ করা হচ্ছে। বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশনায় মামলার পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে বলেও জানান পিবিআই পরিদর্শক।
আদালতে হাজিরা দিতে এসেছিলেন রাকিবের প্রথম স্ত্রী শ্যামলী খাতুন। তিনি বলেন, হঠাৎ করে বাড়ি থেকে টাকা ও সোনার গয়না নিয়ে উধাও হয়ে যান রাকিব। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পাওয়া যায়নি। রাকিব যখন বাড়ি ছেড়ে চলে যান, তখন তাদের ছেলের বয়স ছিলো ছয় মাস। একদিনের জন্যও যোগাযোগ করেননি, এখন ছেলেকে নিতে চাইছেন।
রাকিবের বাবা মনিরুল ইসলাম বলেন, পাঁচটি বছর ছেলে কারও সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। এ কারণে পরিবারের সবাই মনে করেছিলেন শ্বশুরবাড়ির লোকেরা ছেলেকে খুন করে লাশ গুম করে ফেলেছেন। এ কারণে মামলা করেছিলেন। এখন যখন ছেলেকে পাওয়া গেছে, তাই মামলাটি তুলে নেয়া হবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More