ঢাকার অপরাধ জগতের আলোচিত সুব্রত বাইনসহ দুই শীর্ষ সন্ত্রাসীকে গ্রেফতারে সক্ষম হওয়া সেনা অভিযানের একটি বড় সাফল্য সন্দেহ নেই। এই গ্রেফতারের ঘটনা ঘটল এমন এক সময়ে, যখন দেশে, বিশেষত রাজধানীতে অপরাধমূলক কর্মকান্ড ক্রমেই বাড়ছে। গত মঙ্গলবারই সকাল ১০টার দিকে মিরপুরে ফাঁকা গুলি করে ও ছুরি মেরে এক মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ীর নগদ ২২ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এ ধরনের ঘটনা আজকাল প্রায়ই ঘটছে, যার ভিডিও চিত্র ছড়িয়ে পড়ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ফলে সাধারণ মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত। এই যখন অবস্থা, তখন শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদের গ্রেফতারের খবর কিছুটা হলেও স্বস্তি দিয়েছে মানুষকে। মঙ্গলবার ভোরে যৌথ বাহিনীর অভিযানে কুষ্টিয়া শহরের একটি বাড়ি থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। উল্লেখ্য, এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের তৎপরতা একসময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ইন্টারপোলের রেড নোটিশপ্রাপ্ত এ সন্ত্রাসীদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কারও ঘোষিত হয়েছিল। গ্রেফতার হওয়ার পর তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকা থেকে সুব্রত বাইনের দুই সহযোগীকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।
বস্তুত গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার কারণে এবং কয়েকজন বড় সন্ত্রাসী কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। একটি সূত্রে বলা হয়েছে, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনকে ৬ আগস্ট গোপন বন্দিশালা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। এরপর চেহারা পরিবর্তন করে বিভিন্ন স্থান ঘুরে তিনি এবং মোল্লা মাসুদ কুষ্টিয়ায় বাসা ভাড়া নিয়ে সেখানে অবস্থান করছিলেন। এখন তারা ধরা পড়লেও অনেক ছোট-বড় সন্ত্রাসী বাইরে রয়েছে, যাদের কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। তাদের গ্রেফতারেও যৌথ বাহিনীকে তৎপর হতে হবে। বাড়াতে হবে গোয়েন্দা কার্যক্রম।
প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও হত্যার ঘটনা ঘটছে। বিভিন্ন ইস্যুতে রাজধানীর যত্রতত্র রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হচ্ছে। সংঘর্ষ, গণপিটুনি যেন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর নয় মাস পেরিয়ে গেছে। পুলিশ এখন সক্রিয়। গ্রেফতার ও বেআইনি সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার মতো সুযোগ দিয়ে সেনাবাহিনীকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দিয়েছে সরকার। তারপরও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেন স্বাভাবিক হচ্ছে না, তা খতিয়ে দেখা দরকার। অভিযোগ উঠেছে, পুলিশ আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হচ্ছে না। বিভিন্ন ঘটনায় নগরীতে জনভোগান্তি সৃষ্টি হলেও পুলিশ সেভাবে অ্যাকশনে যাচ্ছে না। প্রশ্ন উঠেছে পুলিশের গোয়েন্দা কার্যক্রম ও আগাম ব্যবস্থা গ্রহণ না করা নিয়েও। বস্তুত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব প্রথমত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। নানা দাবি-দাওয়া নিয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যে ধরনের ঘটনার সৃষ্টি করা হচ্ছে, তা নৈরাজ্যের পর্যায়ে পড়ে। এসব ঘটনায় মানুষের ভোগান্তি চরমে উঠছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে, বিশেষত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অত্যন্ত দক্ষতা ও বিচক্ষণতার সঙ্গে এসব ঘটনা মোকাবিলা করতে হবে, যাতে জনভোগান্তির কারণ দূর হয়, সেই সঙ্গে পরিস্থিতিরও অবনতি না ঘটে।
পরবর্তী পোস্ট
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.