আদৌ কি নিরাপদ সড়ক আমরা পেয়েছি

সম্পাদকীয়

সড়কে প্রাণহানি কমিয়ে আনার কি কোনো উপায় নেই? নিরাপদ সড়কের দাবিতে আমাদের দেশে সংগঠনেরও অভাব নেই। কিন্তু কেউ কাজের কাজ করছে বলে মনে হয় না। সবাই লোক দেখানো কাজে মেতে ওঠে। প্রতিদিন সড়কে ঝরছে প্রাণ। কেউ মা, কেউ বাবা, আবার কেউ হারাচ্ছেন সন্তান। কেউ কেউ পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে। শত শত পরিবার হয়ে যাচ্ছে অসহায়। নতুন সরকারকে মনে করিয়ে দিতে চাই নিরাপদ সড়কের কথা। সরকার যদি এ বিষয়টির দিকে সুনজর না দেয়, তাহলে সড়কে মৃত্যুর মিছিল কখনই থামবে না। আমাদের আগে পরীক্ষা করে দেখতে হবে কোন কোন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনা বেশি হয় এবং কেন হয়। আমরা যদি সমস্যাটা বের করতে পারি, তবে সমাধান কেন বের করতে পারব না? দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় গত তিন দিনে সড়ক দুর্ঘটনায় ১০জন নিহতের খবর ছাপা হয়েছে। এরমধ্যে গতকাল মঙ্গলবার ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে স্যালোইঞ্জিন চালিত ভ্যানের সাথে মাছবোঝাই পিকআপের সংঘর্ষে স্বামী ও স্ত্রী নিহত হয়েছেন। সে সময় আহত হয়েছে ভ্যানের দুই যাত্রী। মঙ্গলবার সকাল ৬টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। একইদিনে মেহেরপুরের মুজিবনগরে অবৈধ ট্রলি ট্রাক্টর চাকায় পিষ্ট হয়ে এক স্কুলছাত্র নিহত হয়েছে। এছাড়া ২৭ মার্চ দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় জীবননগরে একটি সড়ক দুর্ঘটনার সংবাদ গুরত্বসহকারে ছাপা হয়েছে। খবরে বলা হয়েছে, জীবননগরের উথলীতে অসুস্থ বাবাকে হাসপাতালে নেয়ার পথে পাওয়ারটিলার চাপায় ছেলে নিহত। ২৬ মার্চ মেহেরপুরের গাংনীতে বাস চাপায় মোটরসাইকেল আরোহী স্কুল শিক্ষকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। আলমডাঙ্গার ভাংবাড়িয়া মোটরসাইকেলের ধাক্কায় আহত আক্কাস আলী নিহতের খবরও স্থান পেয়েছে। একইদিন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে ইটভার মাটি টানা ট্রাক চাপায় স্কুলছাত নিহত খবর ছাপা হয়েছে। ২৫ মার্চ অন্য সড়ক থেকে প্রধান সড়কে উঠার সময় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এছাড়া গত ২৫ মার্চ দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় দুটি সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। ২৪ মার্চ চুয়াডাঙ্গায় ট্রাফিক পুলিশ সার্জেন্টের মোটরসাইকেলের ধাক্কায় এক বৃদ্ধা নিহত হন। তিনি রাস্তা পার হতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে। একই দিনে মেহেরপুরে মোটরসাইকেলের ত্রিমূখী সংঘর্ষে স্কুলছাত্র নিহতের খবরও স্থান পেয়েছে। এসব দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার ঘটনা যে কারও হৃদয় নাড়িয়ে দিতে পারে। জনমনে আজও প্রশ্ন, আদৌ কি নিরাপদ সড়ক আমরা পেয়েছি? থেমেছে কি সড়কে মৃত্যুর মিছিল?

সড়কে প্রতিনিয়ত দীর্ঘ হচ্ছে অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যুমিছিল। একদিকে পরিবহন খাতের সীমাহীন অব্যবস্থাপনা, অন্যদিকে অসচেতন সাধারণ মানুষের খামখেয়ালির ফলে সড়ক হয়ে উঠেছে ভয়ানক মৃত্যুফাঁদ। সড়কে তাজা প্রাণঝরা যেন নিত্যদিনের ঘটনা। সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে গণপরিবহন ও মোটরসাইকেলে। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে পত্র-পত্রিকা, টেলিভিশনসহ প্রতিনিয়ত বিভিন্ন মাধ্যমে দেয়া হচ্ছে নানামুখী সচেতনতার বার্তা। কিন্তু ফলাফল শূন্য। নানাবিধ কারণে সড়কে দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। অতিরিক্ত যান চলাচল, ভাঙাচোরা রাস্তা, ওভারটেকিংয়ের প্রবণতা, ফিটনেস ও লাইসেন্সবিহীন যান চালানো, মাঝপথে যাত্রী ওঠানামা, মাদকাসক্ত হয়ে গাড়ি চালানো, অপ্রাপ্ত বয়সে ড্রাইভিং, বেপরোয়া গতি, অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন, ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন, চালকের অদক্ষতা, প্রতিযোগিতামূলক যান চালানো ইত্যাদি কারণে দুর্ঘটনা থামছে না। বর্তমান সড়কে মোটরসাইকেল আর ট্রাক দুর্ঘটনা ব্যাপক হারে বাড়ছে। মোটরসাইকেল চালকের অধিকাংশই তরুণ। হেলমেটেবিহীন খেয়াল-খুশিমতো বাইক চালানো, ওভারটেকিং, উচ্চগতি ইত্যাদি কারণে সড়কে দুর্ঘটনা বাড়ছে মোটরসাইকেলের। দুর্ঘটনার পেছনে ব্যক্তি সচেতনতার অভাবও বিশেষভাবে দায়ি। সড়ক দুর্ঘটনা রোধ ও শৃঙ্খলা ফেরাতে দক্ষ ট্রাফিক আইন জানা ও দায়িত্ববোধসম্পন্ন সচেতন চালক তৈরি করতে হবে। এ ছাড়া দুর্ঘটনা রোধে ব্যক্তি সচেতনতার বিকল্প নেই। তাই সচেতনতা ও আইনের যথাযথ প্রয়োগ বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবি।

আমরা মনে করি, সড়ক পরিবহনকে নিরাপদ করতে হলে ২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়নের পাশাপাশি এ খাতে যে মাফিয়া চক্র জেঁকে বসেছে, তাদেরও সমূলে উৎপাটন করতে হবে। এই চক্র যে কেবল যাত্রীদের জিম্মি করেছে তাই নয়, তারা সাধারণ পরিবহনশ্রমিকদেরও মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে। সড়কে শৃঙ্খলা ফিরে এলে যাত্রী, পরিবহন মালিক ও শ্রমিক-সবাই নিরাপদে থাকবেন। এ বিষয়ে আইনের যথাযথ প্রয়োগ, আইন ভঙ্গকারী ব্যক্তিদের উপযুক্ত শাস্তি ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি বাড়ানোর বিকল্প নেই।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More