আম্পানের আঘাতের ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন জরুরি

সারা রাত তা-ব চালানোর পর ঘূর্ণিঝড় আম্পান একেবারেই দুর্বল হয়ে যায়। বৃহস্পতিবার ভোরের দিকে ঘূর্ণিঝড় আম্পান স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়ে আরও উত্তর-পূর্ব দিকে সরে গেছে বলেও জানা গেছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, একদিকে করোনার প্রভাবে মানুষের জীবন বিপর্যস্ত, অন্যদিকে আম্পানের তা-বে উপকূলীয় অঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে ল-ভ- হয়ে পড়েছে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলসহ ২৬ জেলা। তবে যতোটা আশঙ্কা করা হয়েছিলো, শেষ পর্যন্ত ততোটা প্রলয়ংকরী রূপ নেয়নি আম্পান, এটি স্বস্তিদায়ক। ঘূর্ণিঝড়টি মোকাবেলায় পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিলো। তাছাড়া সুন্দরবনের কারণেও ঝড়টি খুব বেশি তা-বলীলা চালাতে পারেনি। জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড়ের মূল আঘাতটি পড়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। তবে এটি বাংলাদেশের সাতক্ষীরা ও খুলনা অঞ্চলেও প্রচুর তা-ব চালিয়েছে। এক্ষেত্রে রক্ষাকবচের ভূমিকা পালন করেছে সুন্দরবন। গাছপালায় বাধা পেয়ে ঝড়ের কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ ও জলোচ্ছ্বাসের তীব্রতা কমে আসে। উল্লেখ্য, এর আগে ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডর এবং ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আইলা একইভাবে সুন্দরবনে বাধা পেয়ে দুর্বল হয়ে গিয়েছিলো। অবশ্য তারপরও ওই দুটি ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিলো বিপুল।
আম্পানের আঘাতে ক্ষয়ক্ষতি যে নিতান্তই কম হয়েছে তা নয়। এ ১২ জেলা পর্যন্ত ২৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। উপকূলীয় অঞ্চলগুলোয় গাছপালা, কাঁচা ঘরবাড়ি, বেড়িবাঁধ ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জলোচ্ছ্বাসে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বহু মানুষ হয়ে পড়েছে পানিবন্দি। অনেক স্থানে বিদ্যুত, টেলিফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। সাতক্ষীরা, খুলনা, বরগুনা, পটুয়াখালীসহ বিভিন্ন জেলায় বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। অনেক স্থানে ফাটল ধরেছে বাঁধে। এখন প্রয়োজন বানের পানিতে ফসল ডুবে গিয়ে এবং অন্যান্য কারণে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের পাশে দাঁড়ানো। যাদের ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে, তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা। যেসব এলাকা বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে, সেসব এলাকার বাঁধ দ্রুত পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ নিতে হবে। এমনিতেই আমাদের উপকূলীয় অঞ্চলের বাঁধগুলো রয়েছে অত্যন্ত নাজুক অবস্থায়। ইতঃপূর্বে ভেঙে যাওয়া অনেক বাঁধ জোড়াতালি দিয়ে মেরামত করা হয়েছে। ফলে সেগুলো ভেঙে পড়ার ঝুঁকি সব সময়ই বেশি। বাঁধগুলোর উচ্চতা বাড়িয়ে টেকসইভাবে মেরামত করা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। বস্তুত ঘূর্ণিঝড়ের তা-ব থেকে উপকূলীয় এলাকাকে রক্ষার সবচেয়ে বড় উপায় হল মজবুত ও সুউচ্চ বাঁধ।
যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষেত্রে আগাম ব্যবস্থা, সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ অপরিহার্য। আম্পানের ক্ষেত্রে আগাম ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়ার কারণে আমরা দেখেছি, উপকূলীয় অঞ্চলের বিপুলসংখ্যক মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছিলো। সরকারের প্রচারণা ও আগাম সতর্কতামূলক বিভিন্ন পদক্ষেপে মানুষ যে সতর্ক হয়ে উঠছে, এটি তারই প্রমাণ। ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, ঝড়, জলোচ্ছ্বাসসহ যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষেত্রেই আগাম ও পর্যাপ্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়ার বিকল্প নেই। কারণ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধ বা বন্ধ করা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে পূর্বপ্রস্তুতি ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব।
দেশে এমন একসময় ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলো, যখন করোনা মহামারী সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রশাসনকে। তা সত্ত্বেও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য ত্রাণ প্রেরণ এবং তাদের পুনর্বাসনে নিতে হবে দ্রুত পদক্ষেপ। ত্রাণ কাজ স্বচ্ছতার সঙ্গে পরিচালিত হতে হবে। এমনিতেই করোনার কারণে বহু মানুষের আয়-রোজগারের পথ হয়ে গেছে বন্ধ। তার ওপর ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে অনেকের কৃষিক্ষেত্র, গবাদিপশু ও মৎস্য চাষের ক্ষেত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রশাসনের পাশাপাশি এনজিওগুলোও এদের পাশে এসে দাঁড়াবে

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More