আশেপাশেই প্রতারক : সতর্ক না হলেই সর্বনাশ

প্রতারকেরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই লোভের টোপে প্রতারণা করে। এ হিসেবে প্রতারিতের অর্থ-সম্পদ গচ্চা যাওয়া মূলত লোভ সামলাতে না পারারই খেসারত। যদিও এ কথা বলে প্রতারিতের কাটা ঘায়ে নূনের ছিটা দেয়া আমাদের সমাজে মানায় না। যে সমাজের অধিকাংশ মানুষ সরল সোজা সে সমাজে প্রতারকরা সুযোগ খোঁজে। সরতলার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রথমে বিশ^াস স্থাপন, তারপরই প্রতারণা। গোপনে বা প্রকাশ্যে প্রতারিতের সংখ্যা বাড়তে থাকলে অবিশ^াস তথা আস্থাহীনতা সমাজের অগ্রযাত্রায় অন্যতম অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। বাড়ায় দারিদ্র্য। মূলত এসব কারণেই প্রতারকদের মুখোশ উন্মোচনে প্রশাসনের আশু পদক্ষেপ প্রয়োজন। দায়িত্ব পালনে গড়মশি সর্ব ক্ষেত্রেই সর্বনাশ ডেকে আনে।
প্রতারণা ঠিক কতো প্রকার? রকম যতোই হোক, প্রতারকদের মূল মন্ত্র বিশ^াস স্থাপন করে লোভের টোপে ঠকানো। কিছু ক্ষেত্রে কিছুটা ব্যতিক্রমও আছে। প্রতারক শুধু লোভ দেখিয়ে নয়, নিজের অসহাত্বের কথা বলেও প্রতারণা করে। মাঝে কিছুদিন বহিরাগত ভিক্ষকদের বেশ কয়েকজনের টাকা ছিনিয়ে নেয়ার কথা বলে মসজিদের সামনে দাঁড়িয়ে হাত পেতে প্রতারণা করতে দেখা গেছে। ভিক্ষুকের টাকা ছিনতাই? অভিন্ন ঘটনা যখন বাড়তে লাগলো সমাজেরই কিছু সচেতন মানুষ এদিকে নজর দিলেন, ব্যাস! বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে গেলো। দূরে বাড়ি, রাগ করে এসেছি বলে সন্ধ্যায় মহল্লার কোন গলির মুখে দাঁড়িয়ে করুণ বদনে আশ্রয় চেয়ে রাতে সব কিছু হাতিয়ে নেয়ার ঘটনাও চুয়াডাঙ্গায় কম নয়। বাস ট্রেন লঞ্চ স্টিমারে সহযাত্রী সেজে প্রতারণার পাশাপাশি মলম অজ্ঞানপার্টির খপ্পরে পড়ার খবর তো প্রায় প্রতিদিনই পত্র পত্রিকার পাতায় উঠে আসে। হকারের নিকট থেকে ঝালমুড়ি কিম্বা রাস্তার পাশের ডাবওয়ালার কাছ থেকে ডাব কিনে খাওয়ার পর জ্ঞান হারিয়ে কাছে থাকা অর্থকড়ি মূল্যবান সম্পদ হারানোর উদাহরণও কম নেই। পশু হাটের আশেপাশের কিছু হোটেল থেকে খাদ্য খেয়েও গরু কেনা টাকা হারানোর অভিযোগ উঠেছে। প্রতারকদের এ ধরনের প্রতারণা অনেকটা পুরোনো হলেও সেলফোন বা মোবাইলফোন আসার পর জিনের বাদশা সেজে স্বর্ণের মুর্তি কিম্বা রাতারাতি কোটিপতি বানিয়ে দেয়ার কথা বলে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার হিড়িকও দেখা গেছে। ইন্টারনেট মেইলে মিলিয়ন বিলিয়ন ডলার পাওয়ার বার্তা দিয়ে প্রতারণার ফাঁদ পাতে প্রতারকচক্র। অনলাইন ভিত্তিক কোম্পানি খুলে কয়েক বছর আগে ইউনিপে কয়েক হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার ক্ষত সমাজের বুকে এখনও থকথক করছে। ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরের হুন্ডি কাজল? ওই সময় প্রায় সারা দেশেই আলোচিত বিষয় হয়ে ওঠে। এতো কিছুর পরও কি প্রতারণা থেমেছে? প্রতারকচক্রের লোভের টোপে পাতা ফাঁদে পড়া কি বন্ধ হয়েছে? সম্প্রতি অনলাইন ভিত্তিক একটি কোম্পানি মাঠ পর্যায়ে এজেন্ট নিয়োগ দিয়ে মোটা অংকের লাভের টোপে অনেকেরই নিকট থেকে মোটা অংকের অর্থ নিয়েছে। লোভে পড়া লগ্নিকারীদের লাভও দিচ্ছে। পরিণতি? বিষয়টি পত্রস্থ হয়েছে বলে অনেকেই হয়তো সতর্ক হয়েছেন, কেউ কেউ ভাবছেন।
শিশুকালে সহপাঠীদের মধ্যে একটি কথা শোনা যেতো, বলা হতো ‘তুমি থাকো ডালে ডালে আমি থাকি পাতায় পাতায়, তুমি পাতায় পাতায় হলে আমি থাকি ডগায় ডগায়।’ চালাকির অর্থে বলা কথার সাথে প্রতারকদের অনেকটা মিল আছে। ওরা সমাজের সরল সোজা মানুষগুলোকে অনেকটা ওরকমই ভাবে। তা না হলে কি বোকা বানাতে পারে? বিজ্ঞান প্রযুক্তি যুগে প্রতারণার ক্ষেত্রেও প্রযুক্তির প্রয়োগ থাকা স্বাভাবিক। নিজের যুক্তি দিয়ে লোভের টোপ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে না পারা মানেই ঘোরে থাকা। আশেপাশেই প্রতারক। সতর্ক না হলেই সর্বনাশ। প্রতারণা থেকে রক্ষা পেতে নিজেকে যেমন সতর্ক করতে হবে, তেমনই প্রশাসনকেও হতে হবে সোচ্চার। তবেই কমবে প্রতারকদের উৎপাত।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ
1 টি মন্তব্য
  1. Shahabuddin molla বলেছেন

    নিজের যুক্তি দিয়ে লোভের টোপ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে না পারা মানেই ঘোরে থাকা

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More