উদ্বেগ বাড়াচ্ছে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি

আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি দেশজুড়েই চরম উৎকণ্ঠার কারণ হয়ে উঠেছে। উদ্বেগ বহু মানুষের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। সারা দেশেই বেড়েছে হত্যা, ডাকাতি, অপহরণ ও ছিনতাইয়ের ঘটনা। বেড়েছে ধর্ষণ ও ধর্ষণ-পরবর্তী হত্যার ঘটনা। মব সৃষ্টি করে হত্যা-নির্যাতনের ঘটনাও ঘটছে অহরহ। যৌথ বাহিনী, পুলিশ ও র্যাবের সাঁড়াশি অভিযানেও থামানো যাচ্ছে না এসব অপরাধ কর্মকা-। ধর্ষণের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না শিশুকন্যা থেকে বৃদ্ধা পর্যন্ত। আবার লাশবাহী অ্যাম্বুল্যান্স থামিয়ে ডাকাতির মতো চাঞ্চল্যকর ঘটনাও ঘটছে। গত বৃহস্পতিবার কুমিল্লার মুরাদনগরে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে এক নারীকে ধর্ষণ করা হয়। পরে ঘটনাটির ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এতে দেশজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করে সর্বস্তরের মানুষ। এর আগের দিন রাতে কুষ্টিয়ার মিরপুরের ছাতিয়ান ইউনিয়নের কালিতলা সড়কে একটি লাশবাহী অ্যাম্বুল্যান্সে সশস্ত্র ডাকাতির ঘটনা ঘটে।
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল থেকে আয়েশা খাতুন (৫০) নামের এক নারীর মরদেহ নিয়ে পরিবারের সদস্যরা বাড়ি ফেরার সময় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় অ্যাম্বুল্যান্সে থাকা স্বজনদের মারধরের পাশাপাশি তাদের স্বর্ণাংলকার ও টাকা লুট করা হয়। অলংকারের জন্য মরদেহেও তল্লাশি চালিয়েছে ডাকাতদল। এ রকম ঘটনা অহরহ ঘটছে। অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, সব ধরনের অপরাধ বাড়ার পেছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে, দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে অবনতি হয়েছিল, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা তা এখনো পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেননি।
ফলে অপরাধ কর্মকা- থামছে না। প্রায়ই চাঞ্চল্যকর অপরাধের ঘটনায় দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হচ্ছে। এসব চাঞ্চল্যকর ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে দেশের বাইরেও ছড়িয়ে পড়ায় দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্যে দেখা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত পাঁচ মাসে দেশে এক হাজার ১৩৯টি ডাকাতি ও দস্যুতার মামলা হয়েছে, যা গড়ে প্রতি মাসে ২২৮টি। গত বছর প্রতি মাসে এই সংখ্যা ছিল গড়ে ১৫৮। এই পাঁচ মাসে হত্যা মামলা হয়েছে এক হাজার ৫৮৭টি, যা গড়ে প্রতি মাসে ৩১৭টি। আগের বছর প্রতি মাসে ছিল ২৮৬টি। নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় গত পাঁচ মাসে ৯ হাজার ১০০ মামলা হয়েছে, যা গড়ে প্রতি মাসে এক হাজার ৮২০টি। আগের বছর গড়ে প্রতি মাসে নারী ও শিশু নির্যাতনের আইনে মামলা ছিল এক হাজার ৪৬৪টি। অপহরণের মামলা এই পাঁচ মাসে গড়ে প্রতি মাসে ৮৭টি; গত বছর প্রতি মাসে ছিল ৫৪টি। চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনায় এই পাঁচ মাসের মধ্যে গড়ে প্রতি মাসে ৯৮৫টি মামলা হয়েছে। গত বছর প্রতি মাসে গড়ে ৯৪৫টি মামলা হয়েছে। অন্যদিকে দায়িত্ব পালন করতে গেলে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনাও বেড়েছে। পাঁচ মাসের মধ্যে গড়ে প্রতি মাসে পুলিশের ওপর ৫৭টি হামলার মামলা হয়েছে; আগের বছর এই সংখ্যা ছিল প্রতি মাসে ৫৪। এই পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির কতটা অবনতি হয়েছে। আর চুরি-ছিনতাইয়ের সব ঘটনায় মানুষ মামলা করেও না।
সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনিভিত্তিক আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড পিস (আইইপি) এ বছরের গ্লোবাল পিস ইনডেক্স (জিপিআই) প্রকাশ করেছে। এতে বাংলাদেশ একলাফে আগেরবারের চেয়ে ৩৩ ধাপ পিছিয়েছে। এক বেলা না খেয়ে হলেও মানুষ নিরাপদে এবং মান-সম্মানের সঙ্গে বসবাস করতে চায়। তাই আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More