এই অধঃপতনের জন্য দায়ী কে

সম্পাদকীয়

সামাজিক অবক্ষয় দিনে দিনে চরম আকার ধারণ করেছে। হেন কোনো অপরাধ নেই, যা সমাজে সংঘটিত হচ্ছে না। আমরা দীর্ঘদিন থেকেই লক্ষ্য করে আসছি ধর্ষণ ও হত্যার মতো বিপজ্জনক অপরাধমূলক প্রবণতা সমাজে ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর মধ্যে শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যা ও অবমাননার ঘটনা ঘটেছে। এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, আশুলিয়ায় নিজ স্কুলের ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করতঃ দশম শ্রেণির এক ছাত্র (১৬)। একই সঙ্গে তার চলাফেরা ছিল উচ্ছৃঙ্খল। এসব কারণে ওই স্কুলের শিক্ষক উৎপল কুমার সরকার ছাত্রকে শাসন করেছিলেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে শিক্ষককে ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে ওই ছাত্র। এ ঘটনায় নিহতের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। নিহত উৎপল কুমার সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার এলংজানী গ্রামের মৃত অজিত সরকারের ছেলে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে ১০ বছর ধরে আশুলিয়ার চিত্রশাইল এলাকার হাজি ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে প্রভাষক হিসেবে শিক্ষকতা করছিলেন। একই স্কুলের শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি ছিলেন তিনি।

অন্যদিকে অভিযুক্ত ছাত্র ওই স্কুলের বিজ্ঞান বিভাগের দশম শ্রেণির ছাত্র ও আশুলিয়ার চিত্রাশাইল এলাকার বাসিন্দা।

এখানেই শেষ নয়, ফেসবুকে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বহিষ্কৃত মুখপাত্র নূপুর শর্মার সমর্থনে কলেজের এক হিন্দু শিক্ষার্থীর পোস্ট দেয়াকে কেন্দ্র করে গত ১৮ জুন দিনভর বিক্ষোভ, সহিংসতা চলে মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজ ক্যাম্পাসে। গুজব ছড়িয়ে দেয়া হয় ওই শিক্ষার্থীর পক্ষ নিয়েছেন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। পুলিশ পাহারায় বিকেল ৪টার দিকে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে ক্যাম্পাসের বাইরে নিয়ে যাওয়ার সময় তাকে দাঁড় করিয়ে গলায় জুতোর মালা পরিয়ে দেয় একদল মানুষ। শিক্ষক স্বপন কুমার হাত উঁচিয়ে ক্ষমা চাইতে থাকেন। পরে তাকে তুলে নেয়া হয় পুলিশের গাড়িতে। মোবাইল ফোনে ধারণ করা এ ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। পুলিশের সামনে শিক্ষকের এমন অপদস্ত হওয়ার ঘটনায় জনমনে তৈরি হয়েছে তীব্র ক্ষোভ। ঘটনার পর থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন স্বপন কুমার বিশ্বাস। প্রশাসনের দাবি, তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।

প্রশ্ন হচ্ছে, তাদের এই অধঃপতনের জন্য দায়ী কে? সামাজিক অবক্ষয় ও অসহিষ্ণুতা এমন পর্যায়ে চলে গেছে, এ থেকে পরিত্রাণের আর কোনো পথই হয়তো খোলা নেই। যারা সমাজকে, রাষ্ট্রকে পদে পদে কলুষিত করছে, সমাজকে ভারসাম্যহীন ও দূষিত করে তুলছে, সমাজের মানুষের নিরাপত্তা ও অধিকার ক্ষুণœ করছে তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে শিক্ষক অবমাননা ও হত্যার শাস্তি। অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গেলেই কেউ হত্যার শিকার হবেন, মিথ্যাগুজব ছড়িয়ে শিক্ষক লাঞ্ছনা করা হবে, এটা মেনে নেয়া যায় না। এ ব্যাপারে সরকারের পরিকল্পিত ও কঠোর পদক্ষেপ জরুরি।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More