এতো মৃত্যুর বিনিময়ে কী শিক্ষা পেলাম!

সম্পাদকীয়

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ড থেকে বিস্ফোরণ একটি বার্তা দিয়ে গেলো আমাদের। দেশের কিছু কলকারখানাতে পরিবেশবান্ধব ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা গেছে। তবে অধিকাংশ কারখানা নিরাপদ নয়। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার গবেষণায় জানা যায়: বালাদেশের অধিকাংশ শিল্প কারখানার নিরাপত্তা ঝুঁকিগুলো প্রতিরোধযোগ্য। মালিকপক্ষ, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বাধ্যতামূলক কিছু নিরাপত্তার পদক্ষেপ নিলে বড় ধরনের বিপর্যয় এড়ানো সম্ভব। এ জন্য সবার আগে একটি স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তানীতি প্রণয়ন করা অনিবার্য হয়ে পড়েছে। দেশে এখন এ ধরনের ১৯টি কনটেইনার ডিপো আছে। সম্মিলিতভাবে এ ডিপোগুলো দেশের ১০০ শতাংশ রপ্তানিমুখী কার্গো এবং ২৫ শতাংশ আমদানিমুখী কার্গোর জন্য ব্যবহার হয়। ডিপোগুলোয় নিরাপদ কাজের পরিবেশ তৈরি করা জরুরি। কিন্তু দুঃখজনক হচ্ছে, এখন পর্যন্ত মাত্র কয়েকটি ডিপো সেটা নিশ্চিত করেছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বিএম কনটেইনার ডিপোতে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড নামের একটি রাসায়নিক পদার্থ আগুনের সংস্পর্শে এসে বিস্ফোরকে রূপ নিয়েছিল। হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড নিজে দাহ্য না হলেও এটি উত্তপ্ত হলে তাপীয় বিয়োজনে বিস্ফোরক হিসেবে আচরণ করে। তাই এটাকে কম তাপে সংরক্ষণ করতে হয়। হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডের কারণে লাগা আগুন পানি দিয়ে নেভানো যায় না। বরং এতে আগুনের মাত্রা আরও বাড়ে। এ ধরনের রাসায়নিকের আগুন নেভাতে হয় ফগ সিস্টেমে-ব্যবহার করতে হয় ফোম বা ড্রাই পাউডার জাতীয় অগ্নিনির্বাপণ সামগ্রী। বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিসের ঝুলিতে এই অত্যাধুনিক সামগ্রী আছে কি না সেটাও আমরা নিশ্চিত নই।

দেশে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড উৎপাদনের কারখানাও রয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে এগুলো বিদেশে রপ্তানি হয়। সাধারণত ছোট ছোট ড্রামে ভর্তি করে ২০, ৪০ ও ৪৫ ফুটের কনটেইনারে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডের মত রাসায়নিক বোঝাই করা হয়। বোঝাইয়ের কাজটি ডিপোতে কিংবা কারখানাতে হয়। অথচ আর্ন্তজাতিক মান অনুযায়ী নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য রপ্তানিকারকদের উচিত, রাসায়নিক বোঝাই ড্রামগুলোয় সঠিকভাবে ট্যাগিং ও মার্কিং করা এবং পরিষ্কারভাবে রাসায়নিকের নাম লিখে রাখা। দাহ্য ও ক্ষয়কারক হলে সে-বিষয়ক সাংকেতিক চিহ্ন দেয়া। রাসায়নিকে ভর্তি ড্রামগুলো ডিপোতে স্থানান্তরের সময় প্রতিটি রাসায়নিকের ম্যাটেরিয়াল সেফটি ডেটা শিট বাধ্যতামূলকভাবে ডিপোগুলোকে হস্তান্তর করতে হবে। ম্যাটেরিয়াল সেফটি ডেটা শিটে প্রতিটি রাসায়নিকের বিস্তারিত তথ্য থাকে। যে ডিপো এ রকম ঝুঁকিপূর্ণ, দাহ্য, দুর্ঘটনাপ্রবণ ও ক্ষয়কারক রাসায়নিক ও অন্যান্য দ্রব্য সংরক্ষণ বা কনটেইনার বোঝাই করে, তাদের উচিত সেগুলোর জন্য পৃথক জোন বানানো। সেখানে সর্বোচ্চ অগ্নিনিরাপত্তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More