কম্বাইন্ড হারভেস্টার কৃষিতে যন্ত্র বিপ্লব

সম্প্রতি বোরো ধান কাটতে শ্রমিক সংকট নিয়ে আমরা লিখেছি। এরপর সরকার এ ব্যাপারে ত্বরিত পদক্ষেপ গ্রহণ করে। তারই জের ধরে সামাজিক ও ব্যক্তিগত নানা উদ্যোগও পরিলক্ষিত হয়। ফলে আমরা আজ এই সংকট বহুলাংশে কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছি। কৃষকরা তাদের কষ্টার্জিত ফসল ঘরে তুলতে পেরে বেজায় খুশি। আমরা দুটি পরামর্শ দিয়েছিলাম। এক. স্বাস্থ্যবিধি মেনে জরুরি ভিত্তিতে অন্য জেলা থেকে সংকটাপন্ন জেলায় কৃষকদের এনে ধান কাটার ব্যবস্থা গ্রহণ করা। দুই. আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির সুলভ সরবরাহ নিশ্চিত করা। এ পরিপ্রেক্ষিতে শ্রমিকের অভাব থাকা জেলাগুলোতে ধান কাটার জন্য দ্রুত শ্রমিক নিয়োগ দেয়া হয় এবং আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি কম্বাইন্ড হারভেস্টার ও রিপার সরবরাহের জন্য ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় কৃষি মন্ত্রণালয়। ফলে ৫০-৭০ শতাংশ ভর্তুকিতে কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয় করে লাভবান হন কৃষকরা। কৃষি যন্ত্রপাতির মধ্যে জাপানি প্রযুক্তির কম্বাইন্ড হারভেস্টার অধিক কার্যকারিতার পরিচয় দিয়েছে এবং এখনো দেচ্ছে।
এই বছর চলতি বোরো মরসুমে প্রায় ৪৫ লাখ হেক্টর জমিতে ২ কোটি ৪ লাখ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। দেশের মোট চাল উৎপাদনের প্রায় ৬০ শতাংশই আসে বোরো থেকে। এবার বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে; কিন্তু করোনা ভাইরাসের প্রকোপের কারণে শ্রমিক সংকটে ধান কাটা নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। কেননা ধান কাটা মরসুমে স্বাভাবিক সময়েই ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শ্রমিকের অভাব থাকে। করোনার কারণে হাওরাঞ্চলসহ দেশের প্রায় ২৬টি জেলায় এই অভাব তীব্রভাবে অনুভূত হয়। এমন সময় আশার আলো দেখিয়েছে এই কম্বাইন্ড হারভেস্টার। এর মাধ্যমে পাশাপাশি ধান কাটা, মাড়াই, ঝাড়াই ও বস্তাবন্দির কাজটি দ্রুততার সাথে করা হয়। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিশক্তি ও যন্ত্র বিভাগের এক গবেষণায় দেখা গেছে, এই মেশিন দিয়ে এক হেক্টর জমির ধান কাটতে মাত্র ১৮ জন শ্রমিকের প্রয়োজন হয়; কিন্তু এই পরিমাণ ধান কাটতে প্রথাগতভাবে লাগবে ৬১ জন শ্রমিক। অন্যদিকে একদিনে এর মাধ্যমে ১০ একর পর্যন্ত ধান কাটা, মাড়াই ও বস্তাবন্দি করতে খরচ হবে মাত্র ১২ হতে ১৫ হাজার টাকা। যেখানে প্রথাগতভাবে খরচ হবে ৭৫ হতে ৯০ হাজার টাকা। এই অর্থ, শ্রম ও সময় সাশ্রয়ের কারণে বর্তমানে এই যন্ত্রটির ওপর নির্ভরশীলতা ও এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। তাছাড়া কম্বাইন্ড হারভেস্টারের মাধ্যমে এখন কাদামাটি ও পড়ে থাকা ধানও কাটা সম্ভব হচ্ছে।
কৃষিতে কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা কৃষিক্ষেত্রে সম্পূর্ণ এক নতুন বাংলাদেশ লক্ষ্য করছি। তবে এর প্রয়োজনের তুলনায় এখনো অপ্রতুল। আমাদের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এর সরবরাহ আরও বাড়ানো প্রয়োজন। এই ধরনের কৃষি যন্ত্রপাতি আরও সহজলভ্য করতে এবং কৃষককে সার্বক্ষণিক ডেলিভারি ও সার্ভিসিং সুবিধা প্রদান করতে হবে। পাশাপাশি অব্যাহত রাখতে হবে এর অর্থায়ন ও প্রশিক্ষণ সুবিধাও।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More