ভারতসহ কয়েকটি দেশে নতুন করে ফের করোনার প্রকোপ বাড়ছে। এ নিয়ে আমাদের দেশেও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বস্তুত দেশে গত মে মাস থেকেই করোনার প্রকোপ বাড়ছে। এরই মধ্যে এ ভাইরাসের একটি নতুন ধরন শনাক্ত হয়েছে। এদিকে দেশে দেশে করোনায় আরও ২ জনের মৃত্যু, নতুন করে ১৫ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বুধবার এ প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে করোনা প্রতিরোধে ১১ দফা নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্দেশনায় করোনা প্রতিরোধে দেশের সব সরকারি হাসপাতালে পৃথক শয্যা প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে কেবল নির্দেশনা প্রদানই যথেষ্ট নয়; এর যথাযথ বাস্তবায়নও জরুরি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা উভয়েই মনে করছে, বর্তমানে করোনার সংক্রমণ বাড়লেও তা নিয়ে এখনই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আমরা মনে করি, এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে যে ১১ দফা নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, তা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনায় সর্বসাধারণকে মাস্ক পরাসহ জনসমাগমস্থল এড়িয়ে চলতে বলা হয়েছে। অতীতে আমরা লক্ষ্য করেছি, করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করার আগ পর্যন্ত সাধারণ মানুষ বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দেয়নি। এমন প্রবণতা পরিহার করতে হবে। বিশেষ করে দেশের যেসব ব্যক্তি বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করেন, তাদের মাধ্যমে বাংলাদেশে এ ভাইরাসের সংক্রমণ ও বিস্তার প্রতিরোধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। এক্ষেত্রে দেশের সব স্থল, নৌ ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে যথাযথ দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। উল্লেখ্য, করোনার প্রকোপ বাড়লেও এ সংক্রান্ত প্রস্তুতি এখনো তেমন দেখা যাচ্ছে না। করোনাভাইরাস মোকাবিলাসংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে দেশের মানুষ কমবেশি অবগত। এখন কেবল সবাইকে সচেতনতার পরিচয় দিতে হবে।
জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা কারণে দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ এখন বছরজুড়েই লক্ষ্য করা যায়। বস্তুত মশক নিধনে কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ার কারণে রাজধানীসহ সারা দেশে এডিস মশার ঘনত্ব বাড়ছে। ডেঙ্গুর বাহক এডিসের আচরণে পরিবর্তন এসেছে। প্রতিকূল অবস্থায়ও এ মশা টিকে থাকতে সক্ষম। কাজেই এডিসসহ সব ধরনের মশার বংশবিস্তার রোধে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। এক জরিপের তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীতে এবার এডিস মশার বংশবৃদ্ধির হার ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিন বাড়ি বাড়ি এডিস মশার সন্ধানে অনুসন্ধান চালায় একদল গবেষক। ঈদুল আজহার ছুটির আগের দুই সপ্তাহ ধরে চলা এ জরিপে দেখা যায়, প্রতি ১৫ বাড়ির মধ্যে ৭ থেকে ৮টি বাড়িতেই এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। এডিসের লার্ভার ঘনত্ব থেকেই স্পষ্ট পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া না হলে এ বছর ডেঙ্গু মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। ২০২৩ সালে ডেঙ্গুতে ৩ লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছিল এবং দেড় হাজারের বেশি মানুষ মারা গিয়েছিল। বিগত বছরগুলোতে এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবিলার পর ডেঙ্গু প্রতিরোধে কর্তৃপক্ষ কেন জোরালো পদক্ষেপ নিচ্ছে না, তা বোধগম্য নয়। ডেঙ্গু থেকে সুরক্ষা পেতে বছরব্যাপী মশক নিধন ও অন্যান্য কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। সবাই সচেতন থাকলেই ডেঙ্গুর বিস্তার রোধ করা সম্ভব। যেভাবেই হোক, ডেঙ্গুর উৎস পুরোপুরি নির্মূল করতে হবে।
পূর্ববর্তী পোস্ট
পরবর্তী পোস্ট
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.