করোনা চিকিৎসায় হাসপাতালগুলো প্রস্তুত রাখতে হবে

সম্পাদকীয়

দেশে করোনা সংক্রমণে মৃত্যু ও শনাক্তের হার বাড়ছে। ইতোমধ্যে শনাক্তের হার ২২ শতাংশ ছাড়িয়েছে। যদিও করোনার আগের ঢেউগুলোর মতো ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি, তারপরও ভাইরাসটির সংক্রমণ মোকাবেলার জন্য পর্যাপ্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করা প্রয়োজন। কারণ সংক্রমণের গতি হঠাৎ করে অতিমাত্রায় বেড়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে হাসপাতাল ও বেডের সংকুলান নিয়ে দেখা দিতে পারে সংকট, যা এর আগে আমরা দেখেছি। দুশ্চিন্তার বিষয় হলো, দেশের কোভিড ও নন-কোভিড হাসপাতালগুলো এখনো সেভাবে তৈরি হয়নি। করোনার আগের সংক্রমণের সময় রাজধানীতে পাঁচটি কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালসহ বিভাগ, জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে আলাদা ইউনিট ছিলো। পরে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসায় সেগুলোতে সাধারণ রোগীদের সেবা চালু হয়। ফলে করোনা চিকিৎসায় ব্যবহৃত আইসিইউ, এইচডিইউ শয্যা, ভেন্টিলেটর, অক্সিজেন কনসেনট্রেটর ও সেন্ট্রাল অক্সিজেন, হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলাসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে।

এদিকে মহাখালীর ডিএনসিসি ও বিএসএমএমইউর কোভিড হাসপাতাল ছাড়া অন্য হাসপাতালগুলোতে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা শুরু হয়েছে। এখন করোনা রোগীর বৃদ্ধিতে অন্যান্য হাসপাতাল প্রস্তুতির কথা বলা হলেও কোভিড চিকিৎসা সরঞ্জামগুলো পুরোপুরি ঠিক করা হয়নি। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এক্ষেত্রে প্রস্তুতির ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। এ অবস্থায় করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়লে পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিন হয়ে পড়তে পারে। কাজেই অবিলম্বে এদিকে দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করি আমরা।

এটা ঠিক, কোভিড ও নন-কোভিড হাসপাতালগুলোয় এখনো করোনা সংক্রমিত রোগীর চাপ কম। তবে পরিস্থিতি পালটে যেতে কতক্ষণ! বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সংক্রমণ ৫ শতাংশের বেশি হলেই একে নিয়ন্ত্রণের বাইরে বলা হয়। সেখানে গত কয়েক দিন ধরে শনাক্তের হার ২২ শতাংশের ওপরে থাকছে। রাজধানী ঢাকায় সংক্রমণের সংখ্যা বেশি হলেও দেশের অন্যান্য জেলায়ও নতুন রোগী পাওয়া যাচ্ছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে কোরবানির পশুর হাট ও স্থান পরিবর্তনজনিত মানুষে মানুষের নৈকট্যের কারণে করোনা সংক্রমণ বাড়বে। বিষয়টি মাথায় রেখে শুধু কোভিড ডেডিকেটেড নয়, সব হাসপাতালেরই প্রস্তুতি নেয়া উচিত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ইতোমধ্যে করোভাইরাসের চরিত্র তথা এর মিউটেশন, নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্ট, সংক্রমণের গতি-প্রকৃতি ইত্যাদি সম্পর্কে আমরা মোটামুটি একটা ধারণা পেয়েছি। দেশে ২০২০ সালের মার্চে শুরু হওয়া করোনা সংক্রমণ একটা পর্যায়ে এসে সহনীয় মাত্রায় কমে এসেছিলো। কিন্তু এরপর করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এমনভাবে আঘাত হানে যে পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি ঘটে। সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় রোগীদের পোয়াতে হয় চরম ভোগান্তি। হাসপাতালে শয্যা খালি পাওয়া তখন কঠিন হয়ে উঠেছিলো। আমরা দেখেছি, করোনা আক্রান্ত গুরুতর রোগীদের নিয়ে মানুষ এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ছুটেছে একটি আইসিইউ শয্যার জন্য। সে এক ভয়াবহ বাস্তবতা! কাজেই বর্তমানে আবারও করোনার ঊর্ধ্বগতির পরিপ্রেক্ষিতে তেমন পরিস্থিতির যেন সৃষ্টি না হয়, সেজন্য আমাদের হাসপাতালগুলো পর্যাপ্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করবে, এটাই কাম্য।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More