চুয়াডাঙ্গায় দম্পতি খুন : দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক খুনির

দীর্ঘদিন পর অল্প কিছুদিনের ব্যবধানে চুয়াডাঙ্গার পৃথক দুটি স্থানে দুটি হত্যাকা- হয়েছে। একটি জেলা সদরের সরোজগঞ্জে এক দোকান কর্মচারীর হাতে অপর দোকান কর্মচারী। অপরটি দামুড়হুদার গোবিন্দপুর গ্রামের এক দম্পতি। সরোজগঞ্জে খুন করে যে যুবক পালিয়েছিলো সে আত্মসমর্পণ করেছে। সর্বশেষ রোববার সন্ধ্যায় স্বামী-স্ত্রী দুজনের মৃতদেহ উদ্ধারের পরপরই এক নারীকে আটক করে পুলিশি হেফাজতে নেয়া হয়। পরে অবশ্য আরও কয়েকজনকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দামুড়হুদা মডেল থানা হেফাজতে নিয়েছে। খুব শিগগিরই পুলিশ চাঞ্চল্যকর জোড়া খুনের নেপথ্য উন্মোচনসহ প্রকৃত খুনিদের ধরে আইনে সোপর্দ করতে সক্ষম হবে বলে এলাকাবাসী আশা করে। এলাকাবাসী এটাও আশা করে, একজন নিরাপরাধ ব্যক্তিও যেন হয়রানির শিকার না হন।
বিচ্ছিন্ন দু-একটি খুন সমাজের আসল চিত্র নয়। নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না যে, পূর্বের তুলনায় বেশ কয়েক বছর ধরেই চুয়াডাঙ্গাসহ পার্শ্ববর্তী জনপদের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। মাঝে মাঝে ছিঁচকে চাঁদাবাজ, ছিনতাইকারী এবং প্রতারকচক্রের অপতৎপরতা লক্ষ্য করা গেলেও খুনের সংখ্যা বিগত দিনের তুলনায় নেই বললেই চলে। তারপরও দু-একটি খুন হলেও তো খুন! এক সময় যে জনপদ রক্তাক্ত এলাকা হিসেবে কলঙ্কিত হয়েছিলো, সেই কলঙ্কের দাগ মুছলেও নতুন দু-একটি বিচ্ছিন্ন খুনের ঘটনা ঘটলেও শঙ্কিত হয়ে পড়ে। স্বাভাবিক। যে জনপদের মানুষ খুনিদের অপতৎপরতায় এক সময় জড়োসড়ো হয়ে থাকতো, সেই জনপদের মানুষ অল্পতেই তটস্ত হয়ে প্রশ্ন তুলে বলে, আবারও কি অবৈধ অস্ত্রধারীদের অপতৎপরতা বাড়লো? না, চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জ বাজারে যে হত্যাকা- তা একজনের ওপর অপরজনের মর্যদাহানিকর উক্তি নিয়ে ক্ষোভের বহির্প্রকাশ। আর গোবিন্দপুরে? লাশ উদ্ধারের ২৪ ঘণ্টায় কয়েকজনকে সন্দেহভাজন হিসেবে পুলিশি হেফাজতে নেয়া হলেও নেপথ্য উন্মোচন হয়নি। হত্যার কারণ এবং হত্যাকারীদের শনাক্ত করার প্রচেষ্টায় পুলিশি তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। মৃতদেহ উদ্ধারের পরপরই পুলিশসহ অনেকেই আলামত দেখে মন্তব্য করে বলেছে, স্বামী-স্ত্রী দুজনকে পরিকল্পিতভাবেই হত্যা করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যে খুন পরিকল্পিত সেই খুন ঠেকাতে পারা না পারা নিয়ে কিছুটা হলেও প্রশ্ন ওঠা অমূলক নয়। কেননা, ঘটনার পর অপরাধী ধরার আগে অপরাধ করার পথে পা বাড়ানোর সাথে সাথে ধরে আইনে সোপর্দ করার মতো সক্ষম পুলিশই প্রত্যাশা করে শান্তিকামী মানুষ।
দামুড়হুদার গোবিন্দপুরে দম্পতি খুনের পর কয়েকটি বিষয় আলোচনায় উঠে এসেছে। নৃশংসতার শিকার গৃহকর্তার প্রথম স্ত্রীর রয়েছে ৩ কন্যা। প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর কয়েকজনকে বিয়ে করলেও সন্তানাদি আসেনি। গৃহকর্তা পৈত্রিকভাবে যেমন পেয়েছেন সম্পদ সম্পত্তি, তেমনই তিনিও কিনেছেন কিছু। প্রায় অর্ধশত বিঘা জমি রয়েছে। ছেলে সন্তান না থাকায় তা ৩ মেয়ে এবং বর্তমান স্ত্রীর নামে দেয়ার বিষয়টিও নাকি আলোচনা হচ্ছিলো। ছোট মেয়েকে যেদিন তার শ্বশুরবাড়ি থেকে পিতার বাড়িতে আনার কথা ছিলো সেই দিনের আগেই তাদের শয়নকক্ষে নৃশংসভাবে কুপিয়ে গলা কেটে খুন করা হয়েছে। খুনের নেপথ্য উন্মোচনসহ প্রকৃত খুনিদের ধরে যতো দ্রুত আইনে সোপর্দ করা সম্ভব হবে, যতো দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা যাবে সমাজের জন্য ততোই কল্যাণ।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More