দুর্ভোগে বিপর্যস্ত বানভাসিদের জীবন

সম্পাদকীয়

দেশে বন্যায় যে ভীতিপ্রদ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সঙ্গত কারণেই যতো দ্রুত সম্ভব সব ধরনের পদক্ষেপ অব্যাহত রাখার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন করা ও ত্রাণ সংকট থেকে শুরু করে সামগ্রিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় সর্বাত্মক প্রচেষ্টা জারি রাখতে হবে। উল্লেখ্য, রোববার বিকেলে সারাদেশে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শনিবার পর্যন্ত বন্যাজনিত বিভিন্ন রোগে পাঁচ হাজার ২০২ জন আক্রান্ত থাকলেও রোববার তা বেড়ে পাঁচ হাজার ৮৯০ জনে দাঁড়িয়েছে। বন্যার শুরু থেকে এ পর্যন্ত দেশে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন চার হাজার ১১৬ জন। এতে মৃত্যু হয়েছে একজনের। আরটিআই (চোখের রোগ) রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ১৯৩ জন। এ রোগে কারও মৃত্যু হয়নি। আর দেশে বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৮৪ জনের খবরও জানা যায়। এটা আমলে নেয়া দরকার, বজ্রপাতে আক্রান্ত হয়েছে ১৫ জন, যাদের মধ্যে ১৪ জনেরই মৃত্যু হয়েছে। সাপের দংশনের শিকার হয়েছেন ৭জন। তাদের মধ্যে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে ৫৮ জনের।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বন্যায় রংপুর বিভাগে চারজন, ময়মনসিংহ বিভাগে ২৮ জন ও সিলেট বিভাগে ৫২ জনসহ মোট ৮৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।

জানা যাচ্ছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা ও কিশোরগঞ্জ জেলার দুর্গতদের জন্য আরও চাল, নগদ টাকা ও শুকনো খাবার বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। কিন্তু প্রকাশিত খবরে, সুনামগঞ্জের ধর্মপাশায় ত্রাণ সংকটের বিষয়টি উঠে এসেছে। এছাড়া নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও হবিগঞ্জে কমতে শুরু করেছে পানি কিন্তু বাড়ছে রোগবালাই। হবিগঞ্জে জেলার প্রধান নদীগুলোর পানি ক্রমশ কমতে থাকলেও হাওড়ের পানি না কমায় বন্যা আক্রান্ত লোকের সংখ্যা আরও বেড়েছে। নেত্রকোনায়ও পানি কমতে শুরু করলেও বাড়ছে বিভিন্ন রোগবালাই। ফলে সামিগ্রক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে করণীয় নির্ধারণ সাপেক্ষে এর যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে।

আমরা বলতে চাই, বন্যার পানি কমছে ধীর গতিতে এবং এখনো নানা দুর্ভোগে বিপর্যস্ত বানভাসিদের জীবন। এছাড়া অনেক জায়গায় ডুবে আছে বাড়িঘর, একই সঙ্গে আছে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট। ডুবে গেছে ধানের গোলা, ফসলের ক্ষেত, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ, গবাদি পশু। এছাড়া পর্যাপ্ত খাবার নেই, বাড়ছে রোগবালাই। এটাও আমলে নেয়া জরুরি, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রোগব্যাধি বাড়বে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার সুযোগ না থাকায় বাড়তে পারে করোনাও। আমরা মনে করি, সর্বাত্মক এ পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করা।

প্রসঙ্গত, এর আগে খবরে উঠে এসেছিল যে, পানিবাহিত বিভিন্ন সংক্রামক রোগসহ নানা কারণে বন্যাপীড়িত এলাকায় স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। বিশেষ করে শিশুরা চরম ঝুঁকিতে রয়েছে বলেও জানা গিয়েছিলো। সিলেট-সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনার বেশ কিছু জায়গায় বন্যার পানি কমতে শুরু করার পর সেখানে রোগব্যাধি বাড়ছে এমন তথ্য আসে, যার মধ্যে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, ফুড পয়জনিং, হেপাটাইটিস এবং খোসপাঁচড়া, ফাঙ্গাল ইনফেকশন, প্যারনাইকিয়া ও স্ক্যাবিস জাতীয় নানা চর্মরোগের প্রকোপ দেখা দিচ্ছে বলে জানা যায়। আমরা মনে করি, সামগ্রিক পরিস্থিতি এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। বন্যায় জনদুর্ভোগ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে, তেমনিভাবে পানিবন্দি এলাকায় খাবার ও সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে- এমনটিও এর আগে আলোচনায় এসেছে। সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে।

লক্ষণীয়, পানি কমছে ধীর গতিতে এবং এখনো নানা দুর্ভোগে বিপর্যস্ত বানভাসিদের জীবন এই বিষয়টিকে এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। মনে রাখা দরকার, বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ দেশ। প্রতি বছরই বন্যাসহ নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হয়। আর প্রাকৃতিক দুর্যোগকে রোধ করার কোনো উপায় নেই, কিন্তু প্রস্তুতি ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত হলে ক্ষয়ক্ষতি অনেকটাই কমানো সম্ভব। বন্যা পরিস্থিতি সংক্রান্ত সার্বিক বিষয়গুলো আমলে নিতে হবে, মানুষের দুর্ভোগ নিরসনে কাজ করতে হবে। পর্যাপ্ত ত্রাণ সরবরাহে যেমন উদ্যোগী হতে হবে, তেমনি ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনেও উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের পদক্ষেপ অব্যাহত থাকুক এমনটি কাম্য।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More