ব্যক্তি, সমাজ বা রাষ্ট্র সব ক্ষেত্রে, সব কর্মকা-ের প্রধান লক্ষ্য থাকে মানুষের সুখ ও শান্তি নিশ্চিত করা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে বাংলাদেশ থেকে শান্তি হারিয়ে যাচ্ছে। অস্থিরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর সেই সত্যটি উঠে এসেছে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিভিত্তিক আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড পিসে (আইইপি) বছরের গ্লোবাল পিস ইনডেক্স (জিপিআই) বা শান্তি সূচকে। সংস্থটির প্রকাশিত সূচকে দেখা যায়, বাংলাদেশ আগের বছরের চেয়ে ৩৩ ধাপ পিছিয়েছে। বিশ্বে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান হয়েছে ১২৩তম, যা রীতিমতো উদ্বেগের বলে মনে করছেন বিশিষ্টজনরা। তারা বলছেন, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক বৈষম্য, দুর্নীতি ও লুটপাট, সামাজিক অস্থিরতা, নাগরিক অসন্তোষ, মব সন্ত্রাস এবং বিশ্বের অনেক দেশে যুদ্ধ পরিস্থিতি এ অশান্তির জন্য দায়ী।
আইইপির তথ্য মতে, ২০২৩ সালে বাংলাদেশ শান্তি সূচকে কিছুটা উন্নতি করেছিলো। ২০২৪ সালে বাংলাদেশের সামগ্রিক স্কোর ১৩.২ শতাংশ কমে যায়। এর প্রধান কারণ ছিলো দেশে ব্যাপক নাগরিক অসন্তোষ, যা পরবর্তী সময়ে প্রাণঘাতী সহিংসতায় রূপ নেয়। ২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্ট মাসে তীব্র গণ-আন্দোলনের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনের অবসান ঘটে এবং তিনি দেশত্যাগ করেন। এরপর অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলেও পরিস্থিতির প্রত্যাশিত উন্নতি হয়নি। সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু ঘটনায় এ উদ্বেগ আরো ঘনীভূত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ রেটিং বাংলাদেশের ভাবমূর্তির জন্যও ক্ষতিকর হবে। এটি দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ব্যাহত করবে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন। বাংলাদেশের পর্যটনশিল্পেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে চলমান মব সন্ত্রাস, আইনের শাসনের অবনতি, অর্থনৈতিক বৈষম্য বৃদ্ধি, ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের নিরাপত্তা ঝুঁকিসহ নানা রকম কারণে শান্তি সূচকের এমন অবনতি হয়ে থাকতে পারে। সরকারকে এই রেটিং গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে এবং সম্ভাব্য কারণগুলো পর্যালোচনা করে দেখতে হবে। একই সঙ্গে এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে দ্রুত সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে হবে। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী বলেন, দেশে রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ৩২ শতাংশের মানসিক অবস্থা খারাপ, যা জনগণের দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতায় বড় ধরনের বিপর্যয়ের সৃষ্টি করতে পারে বলে এক জরিপে উঠে এসেছে। একই জরিপে ২৫ শতাংশ জনগণ জানায়, তারা রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে তাদের জীবন থেকে স্বাভাবিক নিরাপত্তার অনুভূতি হারিয়ে ফেলেছে। দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি বিরাজ করুক, মানুষের চোখ থেকে ঘুম হারিয়ে যাক, তা কারো কাম্য নয়। শান্তি ও স্থিতিশীলতার স্বার্থে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। জনজীবনে শান্তি নিশ্চিত করতে হবে।
পূর্ববর্তী পোস্ট
পরবর্তী পোস্ট
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.