নাগরিকদের ওপর বাড়তি বোঝা কেনো

সম্পাদকীয়

ফের বাড়ানো হলো বিদ্যুতের দাম। গত ১৪ বছরে ১১ বার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে সরকার। এবার গ্রাহকপর্যায়ে ৫ দশমিক ০৮ ও পাইকারি পর্যায়ে ৮ দশমিক ১০ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়েছে। গত ১২ জানুয়ারি গ্রাহকপর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয় ৫ শতাংশ। আবার মঙ্গলবার এক সাথে গ্রাহক ও পাইকারি উভয় খাতে এ জ্বালানির দাম বাড়ানোতে সব ধরনের শিল্পপণ্যের উৎপাদন ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে। গত তিন সপ্তাহের মধ্যে তিন দফায় গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলো। এর আগে এতো অল্প সময়ের ব্যবধানে দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়নি। অন্যদিকে, গত ১৮ জানুয়ারি শিল্পে গ্যাসের দাম দ্বিগুণ বাড়ানো হয়। অর্থাৎ শিল্প খাতে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয় পৌনে ২০০ শতাংশ। সরকারের নির্বাহী আদেশে দাম বাড়ানো সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপন গত মঙ্গলবার জারি করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন-২০০৩-এর ধারা ৩৪ক-তে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে ভর্তুকি সমন্বয়ের লক্ষ্যে ১২ জানুয়ারিতে জারি করা প্রজ্ঞাপন সংশোধন করা হলো। বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে সরকার আগের মতো কোনো বাছ-বিচার করেনি। তার প্রমাণ মেলে; আগে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সময় কৃষি সেচ ও হতদরিদ্র গ্রাহকদের বিশেষ ছাড় দেয়ার রেওয়াজ ছিলো। তুলনামূলক ধনিক শ্রেণীর ভোক্তাদের দাম বাড়িয়ে ঘাটতি মেটানো হতো, এখন আর কিছুই মানা হচ্ছে না। এখন আর ধনী-গরিব, ক্ষুদ্র শিল্প, বৃহৎ শিল্প, রাস্তার পান দোকানি, ভিক্ষুক কোনো কিছুই মানা হচ্ছে না। সব কিছু মিলিয়ে একাকার করে ফেলা হচ্ছে নির্বাহী আদেশে। এতে সামাজিক অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। বিদ্যুতের দাম বাড়ানো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোও প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। এ প্রসঙ্গে এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি সরকারের গণবিরোধী, তুঘলকি ও অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত। মাত্র ১৯ দিনের ব্যবধানে খুচরা ও পাইকারি পর্যায়ে দাম বৃদ্ধি সরকারের গণবিরোধী চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ। বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির ফলে প্রতি জিনিসের দাম আবারো বাড়বে। এই বোঝা জনগণ সহ্য করতে পারবে না।’ ক্যাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও জ্বালানি উপদেষ্টা ড. শামসুল আলম বলেন, ‘বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম যে হারে বাড়ানো হয়েছে, তার কোনো যৌক্তিকতা নেই। আমরা আগেও বলেছি, এখনো বলছি দাম না বাড়িয়েও সামাল দেয়ার অনেক বিকল্প ছিলো। অনেকগুলো জায়গায় অপচয় রয়েছে, অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় চুক্তি করা হয়েছে। এতে ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে’। তিনি বলেন, ‘যে হারে দাম বাড়ানো হচ্ছে এর ফল উল্টো হবে। সরকারের রাজস্ব বাড়ানোর কৌশল, হিতে বিপরীত হতে পারে। বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম যত বাড়বে, ততো ভোগ ব্যয় কমবে। বাজারে পণ্য বিক্রি কমে যাবে, এতে কমে আসবে সরবরাহ। কমে যাবে ভ্যাট-ট্যাক্স থেকে আয়।’ মাত্র তিন সপ্তাহের ব্যবধানে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ফলে শিল্পমালিকসহ সব পর্যায়ের গ্রাহক বিপাকে পড়বেন। নাগরিক সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনায় না নিয়ে বারবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোয় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা। বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ফলে রফতানি যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তেমনি স্থানীয় বাজারেও পণ্যের দাম বাড়বে। জ্বালানি বিশেষজ্ঞ, শিল্প উদ্যোক্তাদের মতো আমরাও মনে করি, চলমান সঙ্কটের মধ্যে কী কারণে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম দফায় দফায় বাড়ানো হচ্ছে তা কারো বোধগম্য নয়। অথচ গ্যাস চুরি বন্ধ করা হলে এবং অপচয় রোধ করা গেলে দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হতো না। সরকার সে পথে না গিয়ে সব দায় নাগরিকদের ওপর বাড়তি বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে। মূলত দেশে সুশাসনের অভাব ও সর্বগ্রাসী দুর্নীতির কারণেই আজ আমাদের এই পরিণতি, এমন কথা বললে কি ভুল বলা হবে!

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More