সারা দেশের সড়কগুলোকে নিরাপদ করার বিষয়ে অনেক আলোচনা হলেও বাস্তবতা হলো, সড়কে নৈরাজ্য চলছেই। সড়ক-মহাসড়কগুলোয় যানবাহন চলাচলে কোনো শৃঙ্খলা না থাকার কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। সম্প্রতি এক জাতীয় দৈনিকে খবরে প্রকাশ, সড়কের দুর্বল অবকাঠামো, ত্রুটিপূর্ণ ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন, অনভিজ্ঞ ও মাদকাসক্ত চালক এবং প্রধান সড়কগুলোতে নিষিদ্ধ যানবাহন চলাচলের কারণে প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা। এতে দীর্ঘ হচ্ছে সড়কে মৃত্যুর মিছিল। বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির তথ্য অনুযায়ী, শুধু গেল জুনেই দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ৭১১ জনের মৃত্যু এবং এক হাজার ৯০২ জন আহত হয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা, ত্রুটিপূর্ণ রোড ইঞ্জিনিয়ারিং, চালকদের প্রশিক্ষণের অভাব, ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়াই গাড়ি চালানোয় বাড়ছে দুর্ঘটনা। ২০২৪ সালে সরকার ‘মোটরযানের গতিসীমা নির্দেশিকা’ জারি করলেও তা প্রয়োগের নির্দেশনা না থাকায় এর সুফল মিলছে না। সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের মামলার এক শতাংশেরও চূড়ান্ত বিচার হচ্ছে না। তাদের মতে, এক্ষেত্রে সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের কোনো বিকল্প নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আশপাশের দেশের তুলনায় আমাদের দেশে সড়ক দুর্ঘটনার হার অনেক বেশি। এতে হতাহতের সংখ্যাও বেশি। ফলে সবার আগে দরকার নিরাপদ সড়ক। এ জন্য সড়ক নির্মাণের সময় সেফটি ফিচারগুলো অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। এক্ষেত্রে রোড ইঞ্জিনিয়ারিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আমরা দেখছি, দুর্ঘটনায় হতাহত কমাতে সড়কে ‘সেফ সিস্টেম অ্যাপ্রোচ’ (সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনার একটি পদ্ধতি) এখনও গ্রহণ করা হয়নি। অথচ বিশ্বের অনেক দেশই সড়কে এই পদ্ধতি বাস্তবায়নের ফলে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে এনেছে। ‘সেফ সিস্টেম অ্যাপ্রোচ’ হলো সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনার একটি পদ্ধতি, যার মূল লক্ষ্য-সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনা। বলার অপেক্ষা রাখে না, আমাদের দেশে সড়ক পরিবহণ আইনের মধ্যে সড়ক নিরাপত্তা জোরদার করার বিষয়টি বরাবরই উপেক্ষিত। সেজন্য একটা এক্সক্লুসিভ সড়ক নিরাপত্তা আইন হওয়া সময়ের দাবি। এছাড়া, সড়ক দুর্ঘটনায় যে মামলাগুলো হয়, সেগুলোর বেশির ভাগই চূড়ান্ত পর্যায়ে যায় না। ফলে দুর্ঘটনার বিচার হয় খুবই কম। পরিস্থিতি উত্তরণে সরকারের পক্ষ থেকে তাই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজন রয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে এবং শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় হাইওয়ে পুলিশের পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনকেও সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। সব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সড়ককে নিরাপদ করতে অন্তর্বর্তী সরকার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, এটাই প্রত্যাশা।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.