নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা কোনোভাবেই কাটছে না, বরং দিন দিন এ নিয়ে সন্দেহ, অবিশ্বাস, পারস্পরিক দোষারোপ ও অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে এবং তা ক্রমে বেড়েই চলেছে। বাড়ছে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দূরত্বও। জাপান সফরে গিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিএনপির নাম উল্লেখ না করেই বলেছেন, দেশে একটিমাত্র দল ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায়। শুধু বিএনপি নয়, আরো অনেক দলের পক্ষ থেকেই তীব্র ভাষায় প্রধান উপদেষ্টার এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবিতে শিগগিরই রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে। রাজনৈতিক দল, জোট এবং বিশিষ্ট জনদের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের প্রতিবাদ ও সমালোচনা করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে ১২ দলীয় জোট ও বাম গণতান্ত্রিক জোট। ১২ দলীয় জোট বলেছে, ডিসেম্বরে নির্বাচনে অংশ নিতে চায় দেশের সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। আর বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা বলেছেন, বাম গণতান্ত্রিক জোটসহ দেশের নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত ৫০টির বেশি রাজনৈতিক দল ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন চায়। গত শুক্রবার দুই জোটের পৃথক বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘৯ মাস ধরে আমরা ডিসেম্বরে নির্বাচন চেয়ে আসছি। বরং তিনিই (প্রধান উপদেষ্টা) কিছু মৌলবাদী, জনসমর্থনহীন ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী দলের সঙ্গে মিল রেখে নির্বাচন বিলম্বিত করছেন।’ প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে বলা হয়, ‘কথার মারপ্যাঁচে গদি রক্ষা সম্ভব নয়। নাটক করে, পদত্যাগের ভান দেখিয়ে জনমতকে বিভ্রান্ত করা যাবে না। দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীসহ জনগণ নির্বাচন চায়। ডিসেম্বরের আগেই নির্বাচন সম্ভব। ’নেতারা বলেন, মিথ্যাচার, দোষারোপ, বৈষম্যমূলক আচরণ ও কূটকৌশল পরিহার করে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির ভিত্তিতে সরকার পরিচালনা করতে হবে। অন্যদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, ‘ড. ইউনূস বলেছেন, মাত্র একটি দল নির্বাচন চায়। কিন্তু আমরা বলছি, একটি লোকই নির্বাচন চায় না, তিনি হলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।’ শুক্রবার সকালে রাজধানীর শেরেবাংলানগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের পর এসব কথা বলেন তিনি। মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে জানাতে চাই, নির্বাচন যদি হয়, তা ডিসেম্বরেই হতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা নির্বাচন চাই, জনগণ নির্বাচন চায়। জনগণই এই নির্বাচন আদায় করবে। নয়তো এই দেশের ভৌগোলিক অখ-তা হুমকির মুখে পড়বে।’ বিশ্লেষকদের মতে, প্রায় ১০ মাসেও নির্বাচনের দিনক্ষণ স্পষ্ট না করা অত্যন্ত দুঃখজনক। কেউ কেউ মনে করছেন, এর পেছনে অন্য কোনো দুরভিসন্ধি কাজ করছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, ১৯৯০ সালে সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার করেও ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করেছিল। একইভাবে ১৯৯৬ সালে এবং ২০০১ সালে গঠিত দুটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারও অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা ও প্রয়োজনীয় সংস্কার করে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করেছিল। তাহলে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার কেন তা পারবে না। দেশ আজ নানাভাবে চরম সংকটে নিমজ্জিত। এমন পরিস্থিতিতে রাজনীতিতে মুখোমুখি অবস্থান ও সংঘাত কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা চাই, দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা হোক।
পূর্ববর্তী পোস্ট
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.