নৌকা ডুবি : এতোগুলো প্রাণহানির দায় কার

সম্পাদকীয়

 

পঞ্চগড়ের করতোয়া নদীতে তীর্থযাত্রীবাহী নৌকাডুবির ঘটনায় এখনও মরদেহ উদ্ধার হচ্ছে। এ নিয়ে গতকাল সোমবার রাতে পর্যন্ত শিশু ও নারীসহ ৫০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এখনও নিখোঁজ রয়েছেন বহু মানুষ। এ দুর্ঘটনায় ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি জরুরি তথ্যের জন্য খোলা হয়েছে তথ্য কেন্দ্র। তারা সবাই হিন্দু ধর্মাবলম্বী। মৃতের অধিকাংশই নারী, শিশু ও বৃদ্ধ। পরে ফায়ার ব্রিগেডের কর্মীরা গিয়ে একের পর এক মৃতদেহ উদ্ধার করেন। পঞ্চগড় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। মৃতদেহ সৎকারে প্রতি পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা করে দেয়া হয়েছে। নৌকাডুবিতে বিপুলসংখ্যক তীর্থযাত্রীর মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানসন্ত্রীসহ বিশিষ্টজনেরা শোক প্রকাশ করেছেন।

দেশের বিভিন্ন স্থানের মতোই এ ঘাটেও অনিয়ম চলছিলো বলে প্রতীয়মাণ। নাহলে অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাই করে নদীতে নৌকা চলাচল করে কীভাবে? তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে সেসব উঠে আসবে বলেই আমাদের আশাবাদ। তবুও এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর নিশ্চয়ই এদিকে খেয়াল রাখা হবে। ভবিষ্যতে যাতে এমন নির্মম ঘটনা আর না ঘটে সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে। আমরা মনে করি, স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের এক্ষেত্রে আরও বেশি দায়বদ্ধ হতে হবে। কোনোভাবেই যেন অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাই করে ছোট নৌকা চলাচল করতে না পারে। যেকোন বাহনের ক্ষেত্রেই একই কথা প্রযোজ্য। পূণ্যার্থীদের এ যাত্রায় স্থানীয় প্রশাসনের আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রয়োজন ছিল। একইসাথে যাত্রীদেরও সচেতনতা জরুরি। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা থাকলে এসব দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব। পঞ্চগড়ে এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় দুর্গাপূজার আনন্দ এখন বিষাদে পরিণত হয়েছে, যা কখনোই কাম্য ছিল না। এ ঘটনায় আমরা গভীর শোক প্রকাশ করছি। একইসাথে হতাহতদের ক্ষতিপূরণ, চিকিৎসাসহ মানবিক সহায়তা নিশ্চিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, মর্মান্তিক এ ঘটনায় শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ দুর্ঘটনায় ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি জরুরি তথ্যের জন্য খোলা হয়েছে তথ্য কেন্দ্র।

দুর্গাপূজার মহালয়া উপলক্ষে বদেশ্বরী মন্দিরের বিশেষ পূজা-অর্চনায় যোগদানের উদ্দেশে করতোয়ার অন্য পাড়ে যাওয়ার সময় অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে নৌকাটি ডুবে যায়। এ নৌকাডুবির ঘটনায় পঞ্চগড়সহ সারা দেশে গভীর শোকের ছায়া বিস্তার করছে। স্বজনদের কান্নায় শোকাবহ পরিবেশ সৃষ্টি করেছে করতোয়ার তীরে। দুই দিনের ভারী বৃষ্টিপাতে উজানের ঢলে করতোয়ার পানি বৃদ্ধি পায়। উত্তাল নদীর মাঝবরাবর নৌকাডুবি হওয়ায় ব্যাপকসংখ্যক প্রাণহানি ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিমত, অতিরিক্ত যাত্রী নেয়ার কারণেই নৌকাটি ডুবে যায়। দুপুরে পূজারিরা নদীর ওপারে অবস্থিত বদেশ্বরী মন্দিরে পূজায় অংশ নিতে যাচ্ছিলেন। নৌকাটিতে শতাধিক যাত্রী ছিলেন। মাঝনদীতে নৌকা কাত হয়ে ডুবে যাওয়ার সময় যাত্রীরা চিৎকার করতে থাকেন। যারা সাঁতার জানতেন তারা কোনোরকমে ডাঙায় উঠতে পারলেও বাকিরা তলিয়ে যান। ঝুঁকিপূর্ণভাবে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে নদী পারাপারের কারণে বিপুলসংখ্যক তীর্থযাত্রীকে অসহায়ভাবে প্রাণ দিতে হলো। যাত্রী ও নৌকা চালকের অসচেতনতার শিকার হলো বিপুলসংখ্যক তীর্থযাত্রী। এ ধরনের দায়িত্বহীনতা বন্ধে প্রশাসন কঠোর পদক্ষেপ নেবে এমনটিই প্রত্যাশিত।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More