পদ্মা সেতু আমাদের অহঙ্কার আমাদের গর্ব

সম্পাদকীয়

বাঙালি জাতির কাছে অহঙ্কার করার মতো বহু কিছু আছে। তবে নিঃসন্দেহে বলা যায়, সেসবের ঊর্ধ্বে একাত্তরে মুক্তির লড়াইয়ে তার বীরত্বপূর্ণ বিজয়। যার মাধ্যমে পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিলো। আরও আছে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন। বুকের রক্ত ঢেলে মায়ের ভাষা রক্ষা করার গর্বিত দিন একুশে ফেব্রুয়ারি। সেই জাতির জীবনের সর্বশেষ যুক্ত হলো আরেক অর্জন। বহু বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে, কারো কাছে হাত না পেতে; নিজেদের টাকায় প্রমত্তা পদ্মার বুকে তৈরি করা ‘পদ্মা সেতু’র উদ্বোধন হলো।

বারবার বলা হচ্ছে, এটা শুধু নিছকই একটা সেতু নয়, বরং বাঙালির কাছে আরও আরও অনেক কিছু। যার গভীরতা আমরা দেখতে পাই সেতু উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যেও। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ আজ গর্বিত। অনেক বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে, ষড়যন্ত্রের জাল ছিঁড়ে পদ্মা সেতু উদ্বোধন হয়েছে। এই সেতু শুধু সেতু নয়, শুধু ইট-সিমেন্ট-কংক্রিটের কাঠামো নয়, এই সেতু আমাদের অহংকার, আমাদের গর্ব। সক্ষমতার, মর্যাদার প্রতীক।’

শুধু এটুকু বলেই থেমে যেতে চাননি তিনি। সত্যি বলতে কি, শেখ হাসিনা যা করেছেন; তাতে তার থেমে থাকার কথাও না। তাই তো দৃঢ়কণ্ঠে আরও বলেছেন, ‘এই সেতু বাংলাদেশের জনগণের। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আবেগ, সাহসিকতা, সহনশীলতা। বাঙালি জাতির জেদ, প্রত্যয়। শেষ পর্যন্ত অন্ধকার ভেদ করে আলোর পথে যাত্রা করেছি। আমরা বিজয়ী হয়েছি।’

হ্যাঁ, তিনি সত্যি কথাই বলেছেন। আমরা জয়ী হয়েছি। বিশ্বের বড় বড় শক্তি পদ্মা সেতু হতে দিতে চায়নি। কেন চায়নি, তা এখন দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। এই সেতুর কারণে অবহেলায় থাকা দেশের বড় একটা জনগোষ্ঠীর জীবন-মান বদলে যাবে। উন্নয়নের স্রোতে ভিড়বে তাদের দিশাহীন জীবনতরী। প্রাথমিকভাবে বলা হচ্ছে, পদ্মা সেতুর কারণে জিডিপি বাড়াবে ১ দশমিক ২৩ শতাংশ! শুধু এই একটি মাত্র পরিসংখ্যান দিয়েই বোঝা যায়, তারা কেন বাংলাদেশে এই সেতু হতে দিতে চায়নি।

কিন্তু জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাঙালির জেদের কাছে, সাহসের কাছে পরাজিত হয়েছে সেই কথিত বড় বড় শক্তি। কারণ সবকিছুর ওপরে জনগণের শক্তিই বড় শক্তি। বাঙালি বারবার সেই শক্তির প্রমাণ রেখেছে। পদ্মা সেতুতেও রাখলো।

এটা ঠিক এ জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে জাতিকে। ষড়যন্ত্রকারীদের ঠেকাতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি কষ্ট করতে হয়েছে দেশের জনগণকেই। কেননা দফায় দফায় ষড়যন্ত্র না থাকলে আরও অন্তত ১ যুগ আগেই শেষ হতো এই সেতুর কাজ। এতে প্রায় ১০ বছর পিছিয়ে গেছে সাধারণ মানুষের ভাগ্য। সেই সময়টাতে তাদের কষ্ট দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়েছে। আশার কথা শেষ পর্যন্ত সব ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে। জয় হয়েছে সততার, জয় হয়েছে জনগণের ইচ্ছা শক্তির।

ষড়যন্ত্রকারীদের এত এত বাধার পরও দেশের জনগণ তাদেরকে শাস্তি না দিয়ে ক্ষমা করে দিয়েছে। স্বভাবজাত উদারতায় ‘কোনো অভিযোগ নেই’ বলে তাদেরকে ক্ষমা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও। তিনি মনে করেন, ‘তাদের (ষড়যন্ত্রকারীদের) চিন্তার, আত্মবিশ্বাসের দৈনত্যা আছে। আজকের পর তাদেরও আত্মবিশ্বাস বাড়বে। তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। হৃদয়ে দেশপ্রেম জাগ্রত হবে, দেশের মানুষের প্রতি তারা আরও দায়িত্বশীল হবেন।’ আমরাও তাই মনে করি, বাংলাদেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য কাজ করবেন তারা। নতুন উদ্যোমে দেশের উন্নয়নে অংশ নেবেন। সবশেষে আমরা স্যালুট জানাই বাংলাদেশের জনগণকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More