পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনতে বাধা কেনো

বিগত সরকারের আমলে দেশ থেকে নানাভাবে বিপুল অঙ্কের অর্থ পাচার হয়েছে, যা নিয়ে বহুবার আমাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছি। পরিতাপের বিষয়, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার পদক্ষেপ নিলেও কাক্সিক্ষত ফল মিলছে না। সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশ-ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশ থেকে পাচার করা সম্পদ ফেরানোর কাজে পাহাড়সম সমস্যা দেখা দিয়েছে। এক্ষেত্রে বিদেশে প্রয়োজনীয় যোগাযোগের ক্ষেত্রে দক্ষ জনবল ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার সংকট কঠিন বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে ওইসব দেশের ভাষায় দক্ষ জনবলের অভাব, আইনি কাঠামো সম্পর্কে না জানার কারণে কার্যকর যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠছে না।
আশার কথা, এসব চ্যালেঞ্জের মধ্যেও পাচার করা বেশকিছু সম্পদ বিদেশে সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ২২টি দেশে বড় শিল্প গ্রুপগুলোর পাচার করা সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া, ৯টি দেশে সম্পদের তথ্য সুনির্দিষ্টভাবে শনাক্ত করা হয়েছে। জানা গেছে, তথ্য অনুযায়ী পাচারকৃত সম্পদ জব্দ করতে ৯টি দেশে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট রিকোয়েস্ট পাঠানো হয়েছে। যুক্তরাজ্যে তিনজনের সম্পদ জব্দও করা হয়েছে, তবে এগুলো দেশের নিয়ন্ত্রণে আনার ক্ষেত্রে এখন বড় চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেখা দিয়েছে দ্রুত আইনসম্মত যোগাযোগ স্থাপন। পাশাপাশি বিদেশে আইনি লড়াই চালানোর মতো কৌশল ও সেসব দেশের আইনি কাঠামো সম্পর্কেও পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্তের অভাব রয়েছে। আবার কিছু ক্ষেত্রে গাফিলতিও আছে।
পাচারকৃত অর্থ ফেরাতে আমাদের দক্ষ জনবলের অভাব থাকা দুঃখজনক। তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষের যুগে ভাষাগত কারণে কার্যক্রম আটকে থাকবে, এটা মেনে নেওয়া কষ্টকর। প্রকৃতপক্ষে সংশ্লিষ্টদের দক্ষতার অভাব নাকি আন্তরিকতার ঘাটতি রয়েছে, এ প্রশ্নের উত্তর মেলা জরুরি বলে মনে করি আমরা। পাচারকারীরা সাধারণত সব দেশেই বিনিয়োগকারী বা আমানতকারী হিসাবে সংশ্লিষ্ট দেশের আইনে সুরক্ষা পেয়ে থাকেন। কাজেই পাচারের সম্পদ দাবি করতে হলে যথাযথ অনুসন্ধানের ভিত্তিতে তথ্য-উপাত্ত পেশ করার যেমন প্রয়োজন রয়েছে, তেমনি রয়েছে আইনগতভাবে তা প্রমাণ করাও। প্রক্রিয়াটা জটিল, সন্দেহ নেই। তবে বাংলাদেশে অসাধুদের অর্থ পাচারের সংস্কৃতি পুরোনো হলেও আজ পর্যন্ত এ ধরনের কাজের জন্য কোনো প্রতিষ্ঠান কেন গড়ে ওঠেনি, এ রহস্য উন্মোচন হওয়া প্রয়োজন।
প্রাথমিক তদন্তেই বিগত সরকারের আমলে যে পরিমাণ পাচারকৃত অর্থের সন্ধান মিলেছে, একটি উন্নয়নশীল দেশের জন্য তা কল্পনাতীত। স্বাভাবিকভাবেই এ অর্থ ফেরত আনা সম্ভব হলে তা দেশের অর্থনীতির জন্য মঙ্গলজনক হবে। এসব অর্থ ফেরত আনা সময়সাপেক্ষ এবং প্রক্রিয়াটিও জটিল, অতীতে এমন ব্যাখ্যাই শুধু এসেছে। এখন যোগ হয়েছে দক্ষ জনবলের অভাবের বিষয়টি। ভুলে গেলে চলবে না, এ প্রক্রিয়া যত জটিলই হোক, উদ্যোগের ক্ষেত্রে আন্তরিকতা ও সদিচ্ছার অভাব থাকলে কখনোই সুফল মিলবে না। দেশের অর্থনীতির স্বার্থে তো বটেই, পাচারকারীদের কাছে কঠোর বার্তা প্রদানের জন্যও এসব অর্থ ফেরত আনা প্রয়োজন। একইসঙ্গে অর্থ পাচারের পথও বন্ধ করা জরুরি। অবৈধ সম্পদ ও পাচার করা অর্থ ফেরাতে সরকার বহুমাত্রিক যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা সফল করতে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, এটাই প্রত্যাশা।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More